ভুল বলেছি ?
নাসরীন জাহান
আমি আজীবন রাজনীতি সচেতন একজন মানুষ। প্রতিদিন পত্রিকা পড়তাম। রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছি কখনো কঠোর দেশের রাজনৈতিক অবস্থার সাথে রূপক রূপকথার মতো চরিত্র এনে।
আমার যারা পাঠক তারা জানে, আমাকে যারা জানে তারা-ও জানে অন্তত এ দেশে যখন যে সরকার এসেছে , পক্ষে দাঁড়াইনি।
জানি না এরপর যা লিখব,তার জন্য কত অন্ধ মানুষের উল্টোপালটা কথা শুনব।
অবশ্য আর কত চুপ থাকব?
আমি তুলনা করতে চাই না। কিন্তু একটা সিচুয়েশন বলতে চাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ অস্ত্র জমা দিচ্ছিল না। ৭২এর মেট্রিক পরীক্ষা বই আর অস্ত্র সামনে নিয়ে প্রায় সবাই দিয়েছিল।
বুড়োরা বলছিল পাকিস্তান আমল ভালো ছিল। এ নিয়ে কত আহাজারি শুনেছি। পিচ্চি ছিলাম। কিন্তু ইঁচড়েপাকা ছিলাম। একটা উদাহরণ এর আগেও দিয়েছি। এই বেয়াদব অস্ত্র জমা না দেয়া ছেলেদের নিয়ে আবার তোরা মানুষ হ ছবি তৈরি হয়েছিল।
এরপর
৭৪এর দুর্ভিক্ষ। সবাই সবকিছুর জন্য সবাই শেখ মুজিবকে দোষ দিচ্ছিল।
আমিও খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। জয়নুলের ছবি দেখলেই বোঝা যায়, কত মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল।
মানে আপনারা ছাড়া কে জানে একটা দেশ বিন্যস্ত হতে কত সময় লেগেছিল? এখন যারা বুড়ো, তারা জোয়ান ছিল। তাদেরকে বেয়াদপ, ফাজিল কত কী না বলত বয়স্করা।
এখন সেই বেয়াদপ তরুণ বুড়ো হয়ে নিজেদের অতীত পুরোপুরি ভুলে গেছেন। এখন বীর শ্রেষ্ঠ, বীর বিক্রম হয়ে গেছেন বলে যেন তখন তারা বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে যুদ্ধ করতে যাননি! যুগের পর যুগ এই চলছে। আমিও বুড়ো। তবে মানুষ হিসেবে আজীবনের আধুনিক।
আমরা স্বাধীন একটা দেশ পেয়েছিলাম।।
পেয়েছি।
এবারও আরেক প্রজন্মের সেই সেই বেয়াদব ছেলেরাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নিজের জীবন দিয়ে।
নিজের জীবন কেউ ফাজলামো করে শেষ করে দেয়? কারো হাতের ইশারায় দেয়? দেশের জন্য প্রাণ দেয়নি তারা? লুট হয়ে যাচ্ছিল দেশ এই সত্য তো একটা শিশুও জানে!
যথারীতি এদেরও মাস্তান বলা হচ্ছে। যথারীতি আমরা বুড়োরা বকে যাচ্ছি,কতজনই না বলছে, আগেই ভালো ছিল।
এই বছরটা ওদের শেষ।
তবে নির্বাচন এলে শক্ত হাতে দেশ পড়লে
দেখা যাক কী হয়।
তবে সিচুয়েশন যাই হোক,মুক্তিযুদ্ধ গণ অভুত্থানে দুটো এক বিষয় নাই হোক,
যাদের প্রাণ গেছে যারা খোঁড়া হয়েছে তাদের পরিবার আগেও জানত এখনো জানে, তাদের কী গেছে? আগে প্রাণ দিয়েছিল বলে শহীদ, এখন প্রাণ যাওয়া সার্থক হবে অন্তত এই দেশ যদি এত বছরের মতো চোর ডাকাতের দেশ থেকে যায়,তারাও তাদের পরের প্রজন্মকে গালি দিয়ে বলবে অমানুষ!
তারাও দেশের ভালোর জন্য প্রাণ দিয়েছে। তাদেরকে শহীদ উপাধি দিতেও এত কষ্ট?
ইদানীং একটা পোস্ট দেখি এখনকার ছেলেমেয়েরা রোদ দেখে না মাঠে খেলা কাকে বলে বোঝে না। পড়াশোনা করে না। অচেনা বয়স্কদের সালাম দেয় না।
বই পড়ে না,ফেসবুকে ডুবে থাকে।
আপনি ফেসবুকে পড়ে থাকেন না?
প্রযুক্তির বদল আপনি মানতে না পারলে কীভাবে সন্তানের বন্ধু হবেন?
আপনার কৈশোর যৌবন স্মরণ করুন। বাবা-মা তাঁর আমলে এমন উপদেশ দিলে খুব আনন্দিত হতেন?
এই দেশকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। আপনাদের কী, সুযোগ পেলেই বিদেশে পাঠিয়ে গীবত! গীবত!
আপনার সন্তান কিন্তু শুনতে পায়।
এই যে অভিযোগ করেন এরা বেয়াদব, এই করে না, ওই করে না উত্তরে বলতে ইচ্ছে করে আপনারা মাঠ রেখেছেন? ওদের খেলার জন্য? নদী অব্দী খেয়ে ফেলে যে সরকার আপনারা তার পক্ষ হয়ে মাদল বাজান। আর রোদ? হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের মধ্যে?
অচেনা বয়স্কদের সালাম? আপনি নিজের বয়স্ক আত্মীয়কে সালাম দেন? যখন যেখানে দেখা হয়?
তাহলে আপনি এমন কথা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিতেই পারতেন না। এ কোন ভদ্রলোক করতে পারে না।
এমন পোস্ট প্রায়ই লিখতে ইচ্ছে হয় যুক্তি দিয়ে। কিন্তু যারা অন্ধ যুক্তির ধার না ধেরে এ ও প্রায়ই আমাকে আক্রমণ করে বসে, আমি নিতে পারি না।
আজ ট্রাই করছি।
ভারত সরকার মৌলবাদী সরকার।
নিজে মৌলবাদী হয়ে অন্য দেশের মৌলবাদ নিয়ে দিনরাত আজেবাজে কথা বলে!
আর যারা নিজের দেশ বাদ দিয়ে তাদের গান যারা গায়, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম।
যা হোক। আপনার বাবা তার বাবা-মা-কে
বৃদ্ধাশ্রমে রাখার কথা কল্পনা করতে পারত? আপনার আমলেই এই দেশে বৃদ্ধাশ্রম চালু হয়েছে।
আপনাদের দেখেই সন্তান বড় হয়। কেন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এই দেশ একটা সভ্য দেশ হল না?কেন আপনারা আপনার পোষা কুকুর মরে গেলে বুক ভাসান, আর আপনার বিপক্ষ দলের কেউ মরে গেলে আনন্দ করেন?
কীভাবে সভ্য হবে ওরা?
দল বড় না সন্তান বড়?