২৭৬ বার পড়া হয়েছে
নূতন শুভ জন্মদিন
জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৫৬
ফারহানা আমিন রত্না (মঞ্চ নাম নূতন হিসাবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত) হচ্ছেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ১৯৬৯ সালে মুস্তফা মেহমুদ পরিচালিত নতুন প্রভাত চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শিল্পে অভিষেক ঘটে।তিনি ১৯৯১ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত স্ত্রীর পাওনা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
একেবারে কৈশোর বেলা থেকেই চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। সুখে কিংবা দুখে পাশে ছিলেন। অসম্ভব প্রতিভাময়ী এই নায়িকা, এই অভিনয় শিল্পী। বাংলাদেশের “প্রান সজনী” ছবিটি রিমেক হয়েছিলো কোলকাতায়। নূতন যে চরিত্রটি করেছিলেন কোলকাতায় সেই চরিত্রে অভিনয় করেন সেখানকার খ্যাতিময়ী শিল্পী ইন্দ্রানী হালদার। নিঃসন্দেহে তিনি ভালো শিল্পী। কিন্তু, দুটো ছবি পর পর দেখলেই বুঝে নেয়া যায় আমাদের নূতন ভাবী কত বড় মাপের শিল্পী। তাঁর অভিনয়ের পাশে একই চরিত্রে ইন্দ্রানী পানসে।
সত্তর দশকের সুন্দরী, স্টাইলিশ, স্মার্ট এক নায়িকার নাম নূতন। যিনি ১৯৭০ সালে মুস্তফা মেহমুদ পরিচালিত ‘নতুন প্রভাত’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন করেছিলেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, প্রথম ছবিই মুক্তির পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই নায়িকাকে। এরপর থেকে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে তিনি প্রথম সারির নায়িকার কাতারে চলে আসেন। সোশ্যাল ড্রামা, ফোক, ফোক ফ্যান্টাসি ছবি যেমন করেছেন তেমনি ভ্যাম্প কুইন হিসেবেও পর্দায় এসেছেন হরহামেশা। ক্যারিয়ারে নেগেটিভ চরিত্রও করেছেন সাবলীলভাবে।
তবে দুঃখের খবর হলো, একেবারে অল্প কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নতুন চলচ্চিত্রে জগত থেকে সাময়িক বিদায় নেন। তবে বেশীদিনের জন্য নয় আবার ১৯৭৮ সালে অভিনেতা রুহুল আমিন বাবুলকে বিয়ে করে চলচ্চিত্র জগতে ফিরে আসেন। নূতন তার ২৮ বছরের তারকা জীবনে প্রায় ২০০-এর কাছাকাছি ছবিতে অভিনয় করেছেন। অধিকাংশ ছবিতে তিনি ছিলেন সহ নায়িকা। বিনোদন মূলক চলচ্চিত্রের একজন নির্ভরযোগ্য তারকা ছিলেন নূতন। তিনি একজন দক্ষ অভিনেত্রীও ছিলেন বটে।
যে সমস্ত গুণাবলী একজন নায়িকার ক্ষেত্রে থাকা দরকার তার সবই ছিল নূতনের মাঝে। নৃত্যে তিনি অদ্বিতীয়া, চমৎকার ফিগার এবং সুন্দর মুখাবয়ব সবই ছিল। ৭০-এর দশকের নূতন কিছুটা ম্লান ছিলেন। ৮০-এর দশকের তিনি যৌথ প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় করতে থাকেন। আর ৯০-এর দশকের প্রথমার্ধে নির্মাতারা তাকে একক নায়িকা হিসেবে আনার উদ্যোগ নেন।
এরপর দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘নাচে নাগিন’ ভালো ব্যবসা করে ও সুপারহিট হয়। তাকে পর্দায় মাঝে মাঝে যৌনাবেদনাময়ী রূপ ফোটাতে গিয়ে ভ্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। তিনি ১৯৮৭ সালে এবং ১৯৯১ সালে বাচসাস এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্ত্রীর পাওনা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য নূতন প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
নতুনের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো– ওরা ১১ জন, পাগলা রাজা, রাজদুলারী, সৎভাই, কাবিন অত্যাচার, বারুদ, নাগিন, রাজনর্তকী, সতী নাগকন্যা, পাতাল বিজয়, বিজয়, রাজলক্ষ্ণী শ্রীকান্ত, নাগ নাগিনী, প্রহরী, নাচ নাগিনা নাচ, ব্যবধান, নতুন প্রভাত সংগ্রাম, বাদশা, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে, প্রাণ সজনী, বদনাম, অলংকার, সৎভাই, কাবিন, বনের রাজা টারজান, বাঘা বাঘিনী, নাচে নাগিন, নাগিনী সাপিনী, রূপসী নাগিন, স্ত্রীর পাওনা প্রভৃতি।
মূলত নূতন অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র এক নাম বাংলা চলচ্চিত্রে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’-এর অংশ হতে পেরে নূতন তার ক্যারিয়ারের অনেক বড় পাওনা অর্জন করেছিলেন। নূতন বাংলাদেশে লাক্সের প্রথম মডেল। সুবর্ণা, শামীম আরা নীপা, শাকিলা জাফর, চম্পা, শমী, বিপাশা, মিমি, মৌসুমি সহ আরো অনেক শীর্ষতারকা লাক্সের মডেল হলেও ১৯৮৩ সালে নূতনই প্রথম মডেল হিসেবে উদ্বোধন করেছিলেন।
নূতন সাহসী অভিনেত্রী। আবেদনময়ী ও খোলামেলা সাজপোষাকে তিনি কখনোই জড়তা রাখেননি। চ্যালেঞ্জ নিতেও তিনি আত্নবিশ্বাসী ছিলেন। বাংলাদেশের কমেডি কিং দিলদার কে নায়ক করে নির্মিত ‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমায় তিনি নির্দ্বিধায় দিলদারের নায়িকা হয়েছিলেন। কয়েক শতাধিক ছবির মাঝে নূতনের মানসম্মত ছবির সংখ্যা নেহাত কম নয়। অনেক ভাল ও ব্যবসাসফল ছবি রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। সু-অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন বাচসাস ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারও।
রতনে যেমন রতন চিনে, তেমনি নায়করাজ রাজ্জাক নূতনকে চিনেছিলেন। শাবানা, ববিতা, কবরী, রোজিনাদের দাপট ও তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে বেশিরভাগ পরিচালকই নূতনকে শক্তিশালী চরিত্র দেয়নি। অনেক ছবিতেই তাকে সেকেন্ড লিড করতে হয়েছে। তবে রাজ্জাক তার পরিচালিত ও প্রযোজিত বেশিরভাগ ছবিতেই নূতনকে নিয়েছেন প্রধান নায়িকা হিসেবে।
বৈকুন্ঠের উইল অবলম্বনে যখন রাজ্জাক ‘সৎ ভাই’ ছবিতে তার বিপরীতে নূতনকে কাস্ট করেন তখন অনেকে বলেছিলেন এটাতো শাবানার চরিত্র, শাবানা ছাড়া আর কাউকে মানাবে না। কিন্তু রাজ্জাক নূতনে ভরসা রেখেছিলেন। এবং তিনি ফাটিয়েও দিয়েছিলেন। ‘কাবিন’ ছবিটি রাজ্জাক-নূতন জুটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি।
বাংলাদেশে কমেডি কখনো তেমন ভাল হয়না। যে দু’চারটা ভাল কমেডি হয়েছে তার মাঝে ‘মি: মাওলা’ অগ্রগণ্য। এই ছবিতেও রাজ্জাকের সাথে নূতনের ছিল দাপুটে অভিনয়। প্রেমের ছবি ‘মালামতি’-তে রাজ্জাকের সাথে নূতনের দারুন অভিনয় এখনো চোখে লেগে আছে। ‘বদনাম’ ছবিটিও এ জুটির উল্লেখযোগ্য কাজ।
রাজ্জাক সর্বশেষ নূতনকে নিয়েছেন ‘কোটি টাকার ফকির’ ছবিতে। নৃত্যপটীয়সী নূতন অনেক ছবিতে দেখিয়েছেন তার নাচের নৈপুণ্য। ক্যাবারে ডান্স, ভিলেনের ডেরায় উদ্দাম নাচ যেমন প্রচুর নেচেছেন তেমনি ‘পাগলা রাজা’ ছবির ‘সে সাজা আমায় দাও গো রাজা’ গানে ক্ল্যাসিক নাচেও তিনি অনন্য।
এতসব গুণে মোহিনী নূতনকে দেখলে আজ সত্যিই কষ্ট হয়। কয়েকবছর ধরেই উনি যেসব চরিত্রে অভিনয় করছেন তা এক কথায় নূতনের জন্য নয়। তাই সমালোচকরা তাকে নিয়ে বলছেন, একজন নন্দিত অভিনেত্রী নিজের নির্বুদ্ধিতা ও ব্যক্তিত্বহীনতার কারণে নিন্দিত হয়ে পড়েছেন। পরিচালকেরা যদি ভাল চরিত্র না দিতে পারেন তবে সিনিয়র শিল্পীদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে সিনেমা করবেন না।
আজ, ১৩ নভেম্বর নূতন-এর জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
১ Comment
শুভ জন্মদিন