স্বপ্নগুলো বিকশিত হোক বর্ণিল ধারায়
শারমীন ইয়াসমিন
সহকারি শিক্ষক, (বাংলা)
জলসিঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ
শিশু এক অপার বিস্ময়। তার বিস্ময়ের জগৎ নিয়ে ভাবনার যেমন অন্ত নেই তেমনি স্বপ্ন দেখারও অন্ত নেই। তার ভাবনার আকাশে উঁকিঝুঁকি দেয় নানা বর্ণিল স্বপ্নের হাতছানি। শিশুর অপার বিস্ময়বোধ, অসীম কৌতূহল, অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্যোগী মনোভাব তাকে রঙিন করে তোলে। তাকে করে তোলে মূল্যবোধসম্পন্ন এক মহামানব। যার আলোয় আলোকিত হতে পারে গোটা পৃথিবী।
সেই শুভ, সুন্দর ও কল্যাণের কান্ডারিদেরকে আমাদেরকেই পথ দেখাতে হবে। তাদেরকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকেই উৎসাহিত করতে হবে এবং সুযোগ তৈরি করে দিতে হব। কেননা ওরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ওদের উপরই নির্ভর করছে জাতির স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা। উন্নয়নের বীজমন্ত্রটি নিহিত রয়েছে ওদের মাঝেই। কিশোর-কিশোরী কী ভাবছে, তা আমাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে। ওদেরকে বন্ধু ভাবতে হবে, ভালোবাসতে হবে ও কাছে ডাকতে হবে।
এই কর্মময় জীবনে ব্যস্ততা থাকবেই, তবু প্রতিদিন কিছুটা সময় ওদের জন্য রাখতে হবে। এতে নিজেদেরও ভালো লাগবে। এই যে এতো পরিশ্রম, এতো আয়-রোজগার সবই তো ওদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই। তাহলে এই যারা আমাদের হৃদস্পন্দন, আত্মার আত্নীয়ের চেয়ে আরও অনেক বেশি কিছু তাদেরকে কি একটু সময় দিতে পারি না? একটু যত্ন করতে পারি না? ওদের সুপ্ত প্রতিভাকে কি জাগ্রত করতে পারি না? পারি না ওদেরকে ভালো মানুষ হবার মন্ত্র দিতে? আমরা কি পারি না ওদেরকে সুন্দর মনের মানুষ হবার স্বপ্ন দেখাতে? স্বপ্ন-আশাই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আর স্বপ্ন না থাকলে আমাদের এই কোমলমতি, প্রিয় শিক্ষার্থীরা কী নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে? ওদের মাঝে সুন্দর সুন্দর ভালো ভালো স্বপ্নগুলোর বীজ রোপণ করে দিতে হবে। সবার আগে দিতে হবে একজন পরোপকারী, নির্লোভ ও মানবিক গুণাবলী সম্পূর্ণ আর্দশ মানুষ হবার মন্ত্রণা। কিশোর বয়সেই এই মূল্যবোধগুলো ওদের মনে ঢুকিয়ে দিতে হবে। কেননা এই বয়স থেকেই তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। আর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলোও আমরা ওদের এই সময়টাতেই দেখতে পাই। এই সেদিন জন্ম নেওয়া হাঁটি হাঁটি পা পা করা, আধো আধো মা মা, বা বা বলা বাচ্চাটা কীভাবে কখন এতো বড় হয়ে গেলো। ভাবতেই অবাক লাগে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এই নিয়মেই চলছে গোটা সংসার-জগৎ। জন্ম মানেই সংগ্রাম, যুদ্ধ, সহনশীলতা, ধৈর্য্য, প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ ও জয়-পরাজয়কে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলা। কেননা খরভব রং হড়ঃ ধ নবফ ড়ভ ৎড়ংবং. পথচলার এই স্বপ্নগুলোকে কি আমরা আরও রঙিন করে দিতে পারি না?
আমাদের এই কোমলমতি শিশু কিশোর-কিশোরীরাই পারে সব অসম্ভবকে, অসাধ্যকে জয় করতে। কেননা এ জাতি বীরের জাতি। তারা লড়তে জানে, ভয়কে জয় করতে জানে। সকল বাধাকে অতিক্রম করে বীরদর্পে সামনে এগিয়ে যেতে জানে। কোন বাধাই ওদের চলার পথকে থামাতে পারে না। ওরা আমার সাহসী মায়ের সাহসী সন্তান। ওরা দামাল ছেলে, দস্যু ছেলে। ওরা আমাদের সন্তান, আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। জাতির আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল ওরাই। সোনার বাংলা গড়ার জন্য এদের অবদান অনস্বীকার্য।
জগতের সব অন্ধকার দূর করে আলোর মশাল হাতে আলোকবর্তিকা হয়ে এরাই পৃথিবীকে আলোয় আলোয় ভরে তুলবে। মন ও মননশীলতায়, সৃজনশীলতায় ও কতর্ব্য- ন্যায়পরায়ণতায় ওরাই সর্বোচ্চ অবদান রাখবে।
ওরা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। পৃথিবী জুড়ে ওদের জয়োধ্বনি প্রতিধ্বনিত হবে। কেননা ওরা আমাদের সন্তান। ওরা সব পারে। ওদেরকে পারতেই হবে এবং ওরা পারবেই। আমার বিশ্বাস ওরা অবশ্যই ওদের লক্ষ্যে পৌঁছাবে। জরাজীর্ণ পুরাতনকে উপেক্ষা করে সকল শোষণ ও অত্যাচারের মূল বিনাশ করে নতুনের ভিত গড়ার পবিত্র অঙ্গীকার নিয়ে দৃঢ়তার সাথে সম্মুখপানে বীরদর্পে এগিয়ে যাবে তারা। সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে তারা বেড়ে উঠবে। জাতির যে কোনো ক্লান্তি লগ্নে তারাই একদিন সম্মুখ সারিতে থাকবে। আমরা তাদের হাতেই জাতির ইচ্ছা, স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা ও ভবিষ্যৎ তুলে দিতে চাই। এখন তোমরাই ভাবো, নিজেদেরকে কীভাবে তৈরি করতে হবে।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। কেননা অজ্ঞতা অন্ধকারের সমতুল্য। সমাজের জন্য তাই শিক্ষার আলো দরকার। শিক্ষা মানুষের অন্তর্জগতকে আলোকিত করে বহির্জগতকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করে। প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনার ধারক ও বাহক নতুন প্রজন্ম পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে উঠুক সুপ্ত গুণাবলী উদ্ভাসিত করার মধ্য দিয়ে।
পরিপূর্ণ জীবন বিকাশই শিক্ষা। শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ মানুষের জীবনকে আলোকিত করে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সাহিত্য সমাজ জীবনের দর্পণ। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিত্য যা ঘটে তারই একটা প্রভাব সাহিত্যে পাওয়া যায়। সাহিত্য জানা থাকলে আমাদের মননশীল চিন্তা ভাবনার পরিধি বৃদ্ধি পায়। আর বই পড়লে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবটাই জানা যায়। তাই বই আমাদের একান্ত বন্ধু। বইয়ের পাতায় ডুব দিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সহজেই যাওয়া যায়। বই পড়লে মনের তৃপ্তি পাওয়া যায়। সেজন্য কিশোর-কিশোরীদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে। বই তোমাদের বিবেক ও মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে দেবে। তোমাদের ভালো মন্দ বিচার করতে শিখাবে। তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাবে। কাজেই প্রতিদিন তোমাদেরকে বই পড়তে হব। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আর একবার যদি বই পড়ার স্বাদ পেয়ে যাও তাহলে দেখবে কেউ তোমাদের সাথে না থাকলেও তোমাদের একা লাগবে না। বই আমাদের নীরব বন্ধু। একটা ভালো বই তোমাদের উপকার ছাড়া কখনো অপকার করবে না। বই তোমাদের নিয়ে যাবে স্বপ্নলোকে, মর্ত্যলোকে, পাতালপুরে ও কল্পরাজ্যে। তোমাদের ভাবনার জগতকে করবে রঙিন ও বর্ণিল। তোমাদের চিন্তা-চেতনাকে বাড়িয়ে দেবে শতগুণ। তোমাদের গড়ে তুলবে একজন সত্যিকার মানুষ হিসাবে।
হে কিশোর-কিশোরী, আজ কি তোমরা কোনো স্বপ্ন দেখছো? তোমরা প্রতিদিন স্বপ্ন দেখো। স্বপ্ন তোমাদের চিন্তা শক্তিকে বাড়িয়ে দেবে। তোমাদের কাজ করার সাহস ও গতিকে বাড়িয়ে দেবে। তবে স্বপ্নটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো না। স্বপ্নটা জেগে জেগে চিন্তা-ভাবনা করে দেখো। তুমি আজ যে স্বপ্নটা দেখছ তা বাস্তবায়ন করার জন্য তোমাদেরকে কী কী করতে হবে সেটা ভাবছো তো?
তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কেননা পরিশ্রম ছাড়া কোনো সফলতা আসে না। সফলতার মূল চাবিকাঠিই হচ্ছে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। অধ্যবসায় শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অবিরাম সাধনা। সাধনা ছাড়া জীবনে কেউ কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। আর সাফল্য লাভের জন্যে বার বার চেষ্টা বা সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায়। মূলত অধ্যবসায় হলো কিছু গুণের সমষ্টি। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম মানবিক গুণ হচ্ছে অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ আজ পৃথিবী থেকে অসম্ভব কথাটি বিতাড়িত করতে পেরেছে। আজ মানুষ বলছে-যদি কারোও কোনো বিষয়ে ইচ্ছা থাকে, আগ্রহ থাকে, ভালোলাগা-ভালোবাসা এবং সর্বোপরি যদি অধ্যবসায় ও সাধনা থাকে, তাহলে সব অসম্ভব সম্ভব। তাহলে কোনো বাধাই তোমার চলার পথকে থামাতে পারবে না। তুমি বীরদর্পে সাহসীকতার সাথে সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে পারবে। জগতে বড় বড় বৈজ্ঞানিক, শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক, সেনানায়ক, ডাক্তার, সাংবাদিক ও ধর্মপ্রবর্তক সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। তাঁরা তাঁদের কর্ম, শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে পৃথিবীতে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে রেখেছেন। কালযুগ যুগ ধরে তাঁরা সারা বিশ্বে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। আজ থেকে প্রায় চার দশকেরও অধিক সময় আগে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন- এই তিনজন মানুষ কঠোর অধ্যবসায়, নিরলস শ্রম ও ঐকান্তিক সাধনার ফলে চাঁদে অবতরণ করতে পেরেছিলেন। এই দুঃসাহসিক কাজের জন্য তাঁরা আজও মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তোামাদেরও উচিত তাঁদের পথকে অনুসরণ করে ভালো ও পূণ্যকর্ম করে নিজের, পরিবারের তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করা।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “ওহফঁংঃৎু রং ঃযব সড়ঃযবৎ ড়ভ মড়ড়ফ ষঁপশ” অর্থাৎ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। মানবজীবনের সমস্ত অগ্রগতির মূলে রয়েছে শ্রমের অবদান। কোনো কাজকেই কখনো ছোট করে দেখা উচিত না। কাজকে ভালোবাসতে হবে, কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকতে হবে, আর তবেই উন্নয়ন সম্ভব। প্রতিটি মানুষের মাঝেই লুকিয়ে আছে অমিত সম্ভাবনা। নিজেদের উন্নতি সমাজের উন্নয়নের জন্য তোমাদেরকেই সেই সম্ভবনাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। তোমাদের শ্রম ও অধ্যবসায়ের স্পর্শেই তোমাদের স্বপ্নগুলো পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হবে। সৌভাগ্যের আশায় অলসভাবে বসে না থেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে পরিশ্রম করলে সৌভাগ্য আপনা হতেই এসে ধরা দেয়। এ পৃথিবীতে শ্রমই হচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের প্রধান হাতিয়ার। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ব্যক্তিগণ পরিশ্রমের কল্যাণেই নিজেদের অমর করত সক্ষম হয়েছেন। কাজেই তোমাদের হাতেই রয়েছে সফলতার চাবিকাঠি। তোমরাই পারো সব অসাধ্যকে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে। তোমাদের রয়েছে সেই অসম্ভব শক্তি। কেননা তোমরা যে বীরের জাতি।
প্রত্যেক কাজের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এই নিয়ম মেনে চলার নামই হচ্ছে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা। এ বিশ্বজগতের সবকিছুই নিয়ম শৃঙ্খলার অধীন। প্রকৃতিও এই নিয়মের বাইরে নয়। যেমন প্রতিদিন সকালে সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। গাছে ফুল-ফল আসারও একটা সময় আছে। প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তনেরও একটা সময় আছে। যেমন আছে দিনের পর রাত, রাতের পর দিন। এই নিয়মের কখনো কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা বলতে পারি যে, আমরা সবাই নিয়মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। নিয়মের মধ্যেই রয়েছে জীবনের দিক নির্দেশনা। তাই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলার গুরুত্ব অপরিসীম।
পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তোমাদের সবচেয়ে আপনজন হলো তোমাদের বাবা- মা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারাঁই তোমাদের আগলে রাখেন এবং সর্বোচ্চ শুভাকাক্সক্ষী। তাঁরা তোমাদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। তাই বড় হয়ে তোমাদেরও উচিত বাবা-মাকে যত্ন করা, তাদেরকে কাছে রাখা, তাদেরকে সময় দেয়া ও তাদেরকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করা। বাবা-মা যখন বয়স্ক হয়ে যান, বিশ্বাস করো উনারা তখন আবার ছোট হয়ে যান। তখন সন্তানরা বাবা-মা হয়ে যায়, আর বাবা-মা সন্তান হয়ে যান। তখন উনাদের বেশি বেশি ভালোবাসা ও যত্নের প্রয়োজন হয়। বাবা-মাকে সর্বোচ্চ সম্মান করবে। তাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলবে। তাদের মনে কখনো কোনো দুঃখ-কষ্ট দিবে না। বাবা-মার দোয়া ও ভালোবাসা ছাড়া জীবনে বড় হওয়া যায় না। তাঁরা তোমাদের গুরুজন, তোমাদের আর্দশ, তোমাদের ভালোবাসা।
তোমরা এমন বিচারক হবে যাতে করে তোমাদের দ্বারা কারোর বিচারের বাণী যেন কখনো নিরবে-নিভৃতে না কাঁদে। তোমরা এমন মানুষ হবে যেন সবাই তোমাদেরকে ভালোবাসে। তোমাদের উপর মানুষের যেন আস্থা ও বিশ্বাস থাকে। এমন কাণ্ডারী হবে যেন নিজেদের চেয়ে অপরের কল্যাণে বেশি নিয়োজিত থাকো। তোমাদের সবাইকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ-ব্যারিস্টার হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। হলে ভালো না হলেও ক্ষতি নেই। তবে সবার আগে একজন ভালো মনের বিবেকবান মানুষ হও।
জীবনকে সুন্দর করতে হলে সৌন্দর্যের নিদর্শন শিল্পকেও অন্তরে একটু স্থান দেওয়া দরকার। সবচেয়ে বড় শিল্প হচ্ছে জীবন-শিল্প। সত্য যেমন জীবনের অপরিহার্য অংশ তেমনি সৌন্দর্য্য জীবনেরই অপরিহার্য একটি অংশ। সত্য প্রকাশের গুরুত্ব অপরিসীম। যদি কোনো কারণে একটি মিথ্যে বলো তাহলে সেই মিথ্যেকে ঢাকার জন্য তোমাদেরকে হয়তো আরও মিথ্যে কথা বলতে হতে পারে। তাই মিথ্যে কথা না বলাই উত্তম। কেননা মিথ্যে কথা বলা থেকেই শুরু হয় অন্যায় ও অসত্যের পথে হাঁটা। তাই মিথ্যে কথা বলা বর্জন করা উচিত, পরিত্যাগ করা উচিত। সদা সর্বদা সত্য কথা বলার অভ্যাস শৈশব থেকেই গড়ে তুলতে হবে।
ভবিষ্যৎ জীবন নানাবিধ সম্ভবনা ও প্রতিকূলতায় পরিপূর্ণ। সেই সম্ভবনাগুলোকে বিকশিত করা ও প্রতিকূলতাগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। তেমনি দেহমন সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্য-পরিচর্যাও ছাত্রজীবনের একটি প্রধান কর্তব্য। দেহ ও মন সুস্থ না থাকলে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
জন্ম থেকেই মা, মাতৃভাষা, মাটি ও স্বদেশের সঙ্গে গড়ে ওঠে মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। তাই তারা স্বদেশ ও দেশের মানুষকে এত ভালোবাসে। স্বদেশের আলো-বাতাসে তারা লালিত-পালিত-বর্ধিত হই। দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির আলোয় গড়ে ওঠে তাদের মানস- চেতনা। স্বদেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও মমতায় আপ্লুত হয় তাদের মন-প্রাণ। আর এভাবেই তাদের অন্তরে অনুরণিত হয় স্বদেশপ্রেমের আবেগ। আমাদের প্রত্যাশা তোমাদের মনে ও অন্তরে সর্বদা জাগ্রত থাকুক দেশপ্রেম। এই হোক তাদের বর্ণিল স্বপ্নগুলো বিকশিত হবার অঙ্গীকার ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শপথ।