সংশয়
রেহানা পারভীন
কি এক দুর্বিষহ দুঃসহ সংশয় বোধ আমার হৃদয়কে কুকড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ডুকরে কেঁদে ওঠে বার বার আমার অপরিণত মন।
স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারি না মেরুদন্ডী প্রাণীর ন্যায়।
হঠাৎই মনে হয় আমার মত দুর্বল মনের পক্ষে বোধহয় এটাই স্বাভাবিক।
অক্টোপাসের বিষের ছোবলে আমি মৃত প্রায়।
আমি নিস্তেজ, নিঃশেষিত, বিধ্বস্ত।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে আমি শয্যাশায়ী-
যেন পরজীবী, পরাশ্রয়ী। এ যেন এক সংকীর্ণতা বোধ।
এ যেন এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা।
আমি কি আসলেই মানুষ!
আমি কি সৃষ্টির সেরা জীব!
ভাবতেই গা শিউরে ওঠে বার বার।
নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে বড্ড ঘৃণা হয়।
বিকৃত এই মানব সমাজ।
আমি নিজের কাছে নিজেই মানুষ বলে ভাবতে গিয়ে ধিকৃত হচ্ছি বার বার।
না আছে কোন মানবতা, মহানুভবতা কিংবা কোন সহানুভূতি!
আছে শুধু হিংস্রতা, পৈশাচিকতা, রক্তলোলুপতা।
আছে মানুষ মানুষকে হায়েনা শকুনের মত খুবলে খাওয়ার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা।
সাম্রাজ্যবাদের লেলিহান শিখায় পুড়ছে তাবৎ দুনিয়া।
রক্তের হোলি খেলায় উন্মত্ত মদ্যপ ক্ষমতা লিপ্সু মানুষ।
বিধ্বংসী মারণাস্ত্র তৈরির ব্যয় মানবকূলের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেয়ে ঢের বেশি।
এ যেন রক্ত পিপাসু ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর বিভৎস কুৎসিত উন্মত্ততার মহোৎসব।
এ যে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্ট মানবের আজন্ম কলঙ্কের তিলক।
চলছে জাতি, ধর্মের নামে নরপিশাচের উদ্দাম পৈশাচিকতা।
এত এত নৃশংস হত্যাকাণ্ড,হৃদয় বিদারক খুন রাহাজানি হচ্ছে।
রক্তের প্লাবনে প্লাবিত হচ্ছে বিশ্বের বুক চিরে জেগে ওঠা অসংখ্য দেশের মানচিত্র।
মানবতা বিরোধী যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হচ্ছে অহর্নিশ।
কোথায় মানবতা বোধের পরাকাষ্ঠা!
মনুষ্যত্ববোধের বীজ বপিত হয় না তবুও মানুষের বুকের প্রাঙ্গণে!
তবে আমি আমরা এই মানুষ কি নির্লজ্জ সমাজ সভ্যতার এক জঘন্য কীট!
কেন এমন নির্লিপ্ততা, নির্বোধ মানসিকতা?
মানবতা বোধের নামে যে অজস্র বুলি অলংকৃত হয় বিভিন্ন সংঘে তা নিছকই
মিথ্যার বেশাতি।
নেই তাতে লেশ মাত্র মনুষ্যত্ব বোধের জাগরণ।
মনে ও মননে শুধুমাত্র সাক্ষী গোপাল হয়ে বেঁচে থাকা।
এই বিশ্বের বুকে ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশুর কি দোষ!
তাদের জীবন বলিদান হচ্ছে কেন যুদ্ধ-বিগ্রহের নামে?
হ্যাঁ দোষ একটাই সে কোন না কোন জাতে ধর্মে বর্ণে বেড়ে ওঠা।
সেটাই শিশুর বড় পাপ, আজন্ম পাপ, অপরাধ।
মানবতার বুলি আওড়ানো সংঘ সংগঠন আজ কোথায়?
কখনো ধর্মের নামে, কখনো বর্ণের নামে, কখনো জাতের নামে
কখনো ক্ষমতার মোহে সংঘটিত হচ্ছে যুদ্ধ বিগ্রহ ধ্বংস যজ্ঞ।
এর শেষ কোথায়!
জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র আধিপত্যবাদ এর নামে যুদ্ধবিগ্রহ চলছে চলবে অনাদিকাল পর্যন্ত।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই।
আধিপত্যবাদের ভয়াল থাবা মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে হায়না,
শকুনের মতো খুবলে খাচ্ছে।
তাই তো মানবতাবাদের বীজ বপিত হয় না এই সবুজ ধরায়।
পৃথিবীতে আবার আমরাই ধোয়া তুলসীপাতা সেজে মানবতাবাদের ফাঁকা বুলি আওড়ে বেড়াই।
আসলে সবই শুভঙ্করের ফাঁকি।
এ এক বড় ধরনের ধোঁকা আর প্রতারণার দুর্ভেদ্য প্রাচীর।
এই ধোঁকায় পড়ে পড়ে কৃষ্ণ গহ্বরের নিকষ অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি
চিরতরে আমরা অধম মানব জাতি।
উত্তরণের জন্য যেন কোন পথ খোলা নেই।
ক্ষমতার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ।
বিবেকবোধের বোধন আদৌ কি জাগ্রত হবে বিশ্ব দরবারে?
এই সংশয়ের ঘোর যেন কাটে না মনের গহীন থেকে।
আমার হৃদয় থেকে এই সংশয় বোধ নিঃসৃত হয় ক্ষণে ক্ষণে।
হৃদয়ের রক্তক্ষরণে আমি আজ বড্ড ক্লান্ত।
এই তথাকথিত মানবতাবোধ,
এই মনুষ্যত্ব বোধ থেকে আদৌ কি প্রকৃত বোধ জাগ্রত হবে
আমাদের মাঝে কখনো কোনোদিন?
পৃথিবীর বুকে ছড়াবে কি কখনো প্রশান্তির আবীর মাখা চাঁদের স্নিগ্ধতা!
_____________________
রেহানা পারভীন
অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
রচনাকাল: ২০.০৩.২০২৫!