শিমুল ফুলের বাসি মালা
নার্গিস পারভিন
পর্ব – ০২
এদিকে পরেশ কাকা, দুপুরে খাওয়ার পর ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ঘুমে ঢুলতে লাগলেন। অগত্যা শোভা দিদিভাই কে বললাম – কাকাবাবুর শোবার ব্যবস্থা করে দাও দি’ভাই।
শোভা পরেশ কাকাকে রুমের মধ্যে বিছানা দেখিয়ে দিতে পরেশ কাকা মাথা নেড়ে বললেন– এখানেই হেলান দিয়ে একটু ভাতঘুম সেরে নিই।
শোভা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে নিজের কাজে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ বিনয় কাকার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। শোভা এগিয়ে এসে দেখে রূপকথার ফোন। তৎক্ষণাৎ ফোন রিসিভ করে শোভা বললো –কেমন আছিস রুপকথা?
–ভালো আছি রে দিদি? শিমু, রুক্মিণী, জামাইবাবু কেমন আছে?
– ভালো আছে রে। সব ঠিক আছে। বল্ শাওন লিপিকা কেমন আছে? কি করছে ওরা?
– ভালো রে। লিপু কার্টুন দেখছে, আর ও এখনো স্কুল থেকে ফেরেনি। আজ অফিসে টিচার্স মিটিং আছে। ফিরতে দেরি হবে জানিয়েছে।
এভাবে কিছুক্ষণ কথাবার্তা হওয়ার পর শোভা দিদিভাই ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল – এই নে, রক্তিমের সঙ্গে একটু কথা বল্।
কথা শেষ করে এবার পরেশ কাকার পাশে এসে বসলাম। ততক্ষণে প্রায় বিকেল গড়িয়ে গেছে অনেকটাই। কার্তিক মাসের শেষ। চারটের পর যেন সন্ধ্যা দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়ে। পশ্চিমের আকাশে সূর্যটা অনেকটাই ঝিম ধরা হয়ে গেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রুগ্ন রোদ পরেশ কাকার বাম কাঁধে লুটিয়ে পড়ছে। আমি কাকার গায়ে হাত রেখে বললাম– এবার ফিরতে হবে যে কাকা। সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই।
সঙ্গে সঙ্গে শোভা দিদিভাই ছুটে এসে বললো– না, না রক্তিম আজ থাকতেই হবে। আজকে কিছুতেই যেতে দেব না। আমার বাড়িতে এই প্রথম এলি তুই,,,,,
কাকা শোভার কথাগুলো যেন নিদ্রার মধ্যে থেকেও শুনতে পেলেন। মাথা নেড়ে বললেন– হ্যাঁ রে মা, আজকে আমরা আছি, যাব না। শিমুকে একটু ডেকে দে তো মা, একটু বাইরের দিকে বের হই।
আমি চুপচাপ বসে ওদের কথা শুনতে শুনতে শোভার ঘরের চারদিকের খুঁটিনাটি দেখতে লাগলাম।
শোভা দিদিভাই একখানা বই এনে দিয়ে বলল –এটা পড়তে পারিস এখন, ভালো লাগবে।
বইটা হাতে নেওয়ার পর বুঝতে পারলাম শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’। ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করার সময় পড়েছিলাম। মনে হলো অনেকদিন পড়িনি, আর একবার পড়া যাক।
এরপর পর্ব – ০৩ (আসছে)….