শিমুল ফুলের বাসি মালা
নার্গিস পারভীন
পর্ব – ০৪
০৪/১১/২০২২
পরেশ কাকা আর রথীনের মধ্যে নানা বিষয়ে কথোপকথন চলছে। শোভা চা ও জলখাবার নিয়ে এসে হাজির হলো। আমি শিমু ও কনককে ডাক দিলাম। কনক শোভা ও রথীনের পুত্র দশম শ্রেণীতে পাঠরত। আসার পর থেকে ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। একটু আগেই টিউশন থেকে ফিরেছে। আমার ডাক শুনে কনক একমাত্র বোন শিমু ওরফে শিমরন কে নিয়ে হাজির হলো। দেখলাম কনকের বুদ্ধিদীপ্ত স্বচ্ছ চোখে বুদ্ধির ছাপ প্রবল। ন্ব্যুজ্ব হয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করেই মামা সম্বোধনে আমার কাছে এগিয়ে এসে মৃদু স্বরে জানতে চাইল– কেমন আছেন মামা?
– ভালো, খুব ভালো। এতক্ষণ পর তোমাকে দেখতে পেয়ে আরো ভালো লাগছে আমার ভাগ্নে। তা বলো পড়াশোনা কেমন চলছে?
–চলছে, মামা,,, পরীক্ষার আর বেশি–
ততক্ষণে শোভা কথার হাল ধরে নিল – ও তো সকাল ছয়টায় টিউশন যায়। তারপর স্কুল শেষে টিউশন পড়ে তারপর ফেরে।
– হুমমম। সেজন্যেই ওকে দেখতে পাওয়া যায়নি। আর ওর খোঁজ নেওয়াও হয়ে ওঠেনি।
ততক্ষণে কনক দাদুভাইয়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে সোফাতেই বসে পড়ল। রথীনের মুখটা এখন যেন আরো হাস্যচ্ছল ও স্বাভাবিক হয়ে উঠলো। যথারীতি বেশ সুন্দর একটা মুহূর্ত যেন ফিরে এলো সকলের উপস্থিতিতে। আমি শোভা দিদিভাইকে বসতে বলতে
ই শোভা অন্য একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার পাশে বসে পড়ল।
রথীন চায়ের চুমুক দিতে দিতে বলল – রক্তিম, চলো আমরা একটু বের হই। বর্ধমানের ঐতিহ্যশালী কিছু জায়গা ঘোরা যাবে। আমি রথীনের প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করলাম। আমারও বহুদিনের ইচ্ছে ছিল রাজার শহর, সংস্কৃতির শহর, ঐতিহ্যের শহর বর্ধমান ঘুরে দেখার। আজ যেন সে স্বপ্ন খুব সহজে কাছে এসে ধরা দিল। দেরি না করে চায়ের শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। যথারীতি রথীন আমি বেরিয়ে পড়তে উদ্যত হলাম। শোভা দিদিভাই এবার উঠে পরশ কাকার পাশে যেয়ে বসলো।
ততক্ষণে সন্ধ্যা বেশ ঘনিয়ে এসেছে। চারদিকে ইলেকট্রিক বাতি জ্বলে উঠেছে। শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত চারিপাশ। গাছের সবুজ রঙ যেন অন্ধকার গ্রাস করেছে। ঈশান কোণে হালকা মেঘ। বাকি আকাশ মেঘমুক্ত। ধীরে ধীরে তারারা ফুটে উঠছে। একাদশীর চাঁদ যেন তারাদের মাঝে সম্ভ্রমে উপবিষ্ট। এবার শোভা দিদিভাই তড়িঘড়ি উঠে শঙ্খ হাতে প্রদীপ জ্বেলে তুলসী তলায় হাজির হলো। শোভা দিদিকে এখন যেন অন্য আর এক শোভা দিদি মনে হল। তার চোখে মুখে যেন অন্য বাঙালি প্রতিমার প্রতিচ্ছায়া ফুটে উঠেছে। শান্ত স্নিগ্ধ মৃন্ময়ী সে রূপে যেন কোনো ক্ষোভ কোন আক্ষেপ কোন অতৃপ্তি নেই। আছে শুধু অপার ভক্তি আর বিশ্বস্ততা। স্নেহময়ী মাতৃত্ব, সুধাময়ী গৃহিণীর অপার নিষ্ঠা আর একাগ্রতা।
আমি আর রথীন মোটর বাইকে চেপে বেরিয়ে পড়লাম শহরের উদ্দেশ্যে।
(চলবে)