প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশনা-সংস্থা প্রতিবিম্ব প্রকাশ-এর আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী, লেখক সম্মানী ও রয়্যালটি প্রদান অনুষ্ঠানের মূল্যায়ন।
বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশনা-সংস্থা প্রতিবিম্ব প্রকাশ-এর আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী, লেখক সম্মানী ও রয়্যালটি প্রদান অনুষ্ঠান দূর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপভোগ করেছি। প্রতিবিম্ব তার কর্মসূচি ও প্রকাশনা নিয়ে ইতোমধ্যেই দেশের পরিসর ছাড়িয়ে পৃথিবীব্যাপি পাখা মেলেছে। এবারের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রেজাউদ্দিন স্টালিনের বক্তব্য আমাকে বিশেষভাবে আপ্লুত করেছে। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে আলোকপাত করে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার তাগিদ যে-ভাষায় পুনর্ব্যক্ত করলেন, তা সত্যিই এক কথায় অসাধারণ। সমাজ-সচেতন এই চিন্তক আমাকে নতুন করে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি জানি, অনুষ্ঠানে সমবেত সভ্যগণ স্টালিনের কথায় নবতর চেতনায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করার প্রেরণা পেয়েছেন। নারী ছাড়া পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র কী করে দাঁড়াবে? অভিবাদন, প্রিয় ভাই রেজাউদ্দিন স্টালিন; সমকালীন ও চিরন্তন এক গভীর সংকটকে ভিন্নভাবে, বিশেষভাবে আলোচনার ও চিন্তার সামনের কাতারে জায়গা করে দেওয়ার জন্য; আপনি বরাবরের মতোই আলোকশিখা হাতে নিয়ে অগ্রসরমান। সমাপনি অধিবেশনে প্রধান অতিথি কবি মোহন রায়হান তাঁর আলোচনায় দীর্ঘ সাহিত্য-জীবনের সংগ্রামের গল্প বলেছেন। মনোযোগ দিয়ে তাঁর বেদনা ও আক্ষেপমাখা অনলবাণী শুনেছি। তাঁর কথাগুলো ছিল প্রবলভাবে প্রেরণাদায়ক। সাহিত্য ও ব্যক্তিত্ব যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ, তা মোহনের বক্তব্য থেকে আবারও স্পষ্ট হয়েছে। নিশ্চয়ই দর্শক-শ্রোতা উপকৃত হয়েছেন তাঁর কথা শুনে। সাবেক ভিসি ড. এএইচএম মুস্তাফিজুর রহমান স্যার এবং কবি জাকির আবু জাফর-এর সাহিত্য আলোচনা মনোমুগ্ধকর ছিল।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কবি ও ছড়াকার আতিক হেলালের কথাগুলো ছিল গোছানো, মার্জিত ও প্রাণবন্ত। ছড়ায় আতিক এক আলোকিত নাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সনেট লেখক ও পরিব্রাজক নূরুল কাইয়ুম (ফারুক)। তিনি পৃথিবীর বহুদেশ ঘুরে ঘুরে সঞ্চয় করেছেন উপলব্ধির বিচিত্র ও বর্ণিল শষ্য। ফারুক ভাই হাস্যরসের মাধ্যমে জীবন, সাহিত্য এবং নানাবিধ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা হাসি ও করতালির মাধ্যমে তাঁর এই রসালো বক্তব্যকে বারবার স্বাগত জানিয়েছে। তিনি খুব সহজ ভাষায় মানব-জীবনের গতি-প্রকৃতি ও মানুষের করণীয় বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও চিন্তা প্রকাশ করেছেন। তাঁর বাচনভঙ্গি ছিল চমৎকার, নান্দনিক উপস্থাপন প্রশংসাযোগ্য। খুব মুগ্ধতায় ছুঁয়ে গেল মন। আমি দেশ থেকে দূরে থাকলেও আমার প্রাণ-মন সবসময় পড়ে থাকে নিজ দেশে; দেশের মাটি হৃদয়ে ধারণ করি আমি। মিস করি অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য। প্রবাসের যাপিত জীবনের কষ্টেরা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায় ভালো থাকার জন্য। হাজারো হীরের টুকরোর চেয়েও দামী আমার সাহিত্যের প্ল্যাটফরম। আমার হৃদয় নতুন আশায় উজ্জ্বীবিত হয়, যখন আমি গল্প ও কবিতার ক্যানভাসে সাজিয়ে তুলতে থাকি নিজের কল্পনা; যখন আমি সৃজনশীলতার কচি পাতায় জাদুকরি আভার সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে পারি। আপনার জন্য শুভ কামনা, কবি ও লেখক ফারুক ভাই; ভালোবাসা রইলো অনুষ্ঠানের সকল-পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীর প্রতি। আমি মনে করি, মন ও মনন উন্নত না হলে তার লেখা দেশ ও জাতীর কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। যদিও সব সত্য লেখায় উঠে আসে না। ভালো চিন্তা ও কাজ সবসময় বাধাগ্রস্থ হয়। তবে শেষ-অবধি সত্যেরই জয় হয়। আপনারা সকলে সেই সত্যের পথের, ভালোর পথের যাত্রী। ভালো থাকবেন ফারুক ভাই।
আর একজনের প্রশংসা না করলেই নয়; তিনি হলেন কবি-কলামিস্ট ও প্রকাশক আবুল খায়ের। তিনি পরিকল্পনা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমন্ডিত করেছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা ও সাধুবাদ জানাই। সাহিত্যের প্রকাশ ও বিকাশে এমন চমৎকার আয়োজন আরো আশা করি। প্রত্যাশা করি মানুষের মঙ্গল। শিল্প-সাহিত্যের পথ হোক সকলের।
_______
তসলিমা হাসান
টরন্টো; কানাডা।
১৬ মে ২০২৫