বাবার ডায়েরি [আসমা খানম শিউলী] ডায়েরি লেখার অভ্যেস ছিল না আমার, তবুও একটা ডায়েরি আছে যেটাতে দুই চার লাইনে মনের কথা লিখে রাখি। এই একটা ডায়েরিতেই জনম কেটে গেল। জীবনের হিসেব লেখা হয় না তাতে, কিছু হিসেব থাকে চাল, ডাল, নুনের। আর কিছু ভুল অংকের কাটাকাটি। কিছু নতুন টাকাও আছে পৃষ্ঠার ভাজে। হঠাৎ বুকটা ব্যথা করছে। শেষ বেলা এখন। একটুতেই ভয় পেয়ে যাই, এই বুঝি কিছু হয়! তাই তো মনে হলো তোমাকে কিছু কথা বলে যাই। তুমি কাছে থাকলে লিখতে হতো না, রোজ দুজনের কথা হতো খাবার টেবিলে চায়ের আড্ডায়, নয়ত রোজ রাতে ছাদে কিছুটা সময় আমাদের কথার ঝাঁপি খুলে…
Author: প্রতিবিম্ব প্রকাশ
বৃষ্টি ভাবনা (শারমীন ইয়াসমিন) সজনে পাতায় বৃষ্টি পরে – মনে জাগে শিহরণ চলতি পথে তোমার সাথে ভিজতে বড় ইচ্ছে করে। গগণ জুড়ে বাদলা এলো বুঝি? মন বুঝি আজ উঠল নেচে আনন্দেরই স্রোতে। বৃষ্টি ফোঁটা পড়ল বুঝি মনের ঐ আঙিনাতে স্বপ্নগুলো মেললো ডানা ভালোবাসার রঙে। গগন বুঝি সাজলো আজি আঁধার কালো রঙে মন যে আমার, বলছে কথা- মেঘ হয়ে যাই ভেসে নীল আকাশের বুকে। পাখি হয়ে যাই উড়ে ঐ দিগন্তেরই শেষে। বৃষ্টি যেন জাগিয়ে দিল সুপ্ত কত কথা জাগিয়ে দিল প্রাণের সাথে প্রাণের কত কথা। মন যে আমার ভাবছে- রঙ-বেঙের অনুভবে ইচ্ছে হয়ে মেলছে ডানা স্বপ্নগুলো সব।
চলতে চলতে (তসলিমা হাসান) চলতে চলতে তোমার আমার সাথে দেখা, একটুকরো হাসি -সেটাই ভালোবাসা- তুমি-আমি কেউ কারো মতো নই- তবুও একসাথে চলার অভ্যেস- সেটাই ভালোবাসা- শুধু কামনা- বাসনা নয়- অর্ধেকটা জীবন দেওয়া-নেওয়া -সেটাই ভালোবাসা- নিস্তরঙ্গ দিনে তোমার-আমার মধ্যে ঠোকাঠুকি- দু দিন বন্ধ কথা-সেটাই ভালোবাসা- ধেঁয়ে চলা সময়ে অনেকগুলো ধাঁধাঁ আর উত্তর-পাশাপাশি বসা -সেটাই ভালোবাসা- তোমার-আমার মাঝে বিছানায় আরেকটা ছোট্ট বিছানা- -সেটাই ভালোবাসা- আগামী প্রজন্ম দূরে গেলে দুজনের ক্লান্ত দেহে-পাশাপাশি বসা -সেটাই ভালোবাসা- তুমি চলে গেলে-পূজার বেদীতে তাকিয়ে একফালি উদাসী দীর্ঘশ্বাস – -সেটাও ভালোবাসা——!! তসলিমা হাসান কানাডা: ৩০-০৫-২০২২
এতিম শিশু [সৈয়দুল ইসলাম] তারিখ: ০২/০৬/২০২২ স্বজনহারা শিশুটি হায় এইনা ভুবন মাঝে ! ধুলোবালি ছেঁড়া জামায় থাকে দারুণ সাজে। খাওয়া নাওয়া নেই যে তারই কাঁপে থরথর, দুঃখ কষ্টে এতিম শিশু কাঁদে যে দিনভর । জনেজনে হাতটি পাতে ক্ষুধারও জ্বালায়, ধনীর হাতের টাকাকড়ি পড়েনি থালায় । গরিব চেনে গরিবেরে তাই’তো ছুটে আসে, দশটি টাকা দিয়ে হলেও থাকে শিশুর পাশে । ধনী গরিব সবাই মানুষ অহং ভুলে গিয়ে, উপকারের হাত বাড়াবো ভালোবাসা দিয়ে । ঠিকানা: হাসারচর, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।
প্রিয় কবি (শিরিন আফরোজ) তারুণ্যের কবি তুমি বিদ্রোহী কবি অন্যায় শাসন-শোষণ এবং পরাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তোমার লিখায় উঠে এসেছে সবি। প্রতিবাদী লিখার অপরাধে কবি তুমি হয়েছিলে কারারুদ্ধ দারিদ্র এবং সংগ্রামে কবি তোমার কেটেছিল জীবন যুদ্ধ। অসীম প্রতিভায় অজস্র কৃতিত্বে কবি তুমি বাঙালির অহংকার তোমার প্রতিভাকে দমাতে পারেনি কোন রুদ্ধ কারাগার। বাংলা, আরবী ও ফরাসি ভাষায় কবি তুমি ছিলে জ্ঞাণী, চোখেমুখে ছিলে তুমি বুদ্ধি দীপ্ত লিখাতে ছিল তোমার অগ্নিঝরা বাণী। তোমার কাব্যে শুনি মৃত্যুজ্ঞয়ী চির যৌবনের জয়ধ্বনি শুনতে পাই অগ্নিবীণার সুর ঝংকার, ধীর, স্থীর বাংলা বাংলা কাব্যে কবি তুমি এনেছিলে কালবৈশাখীর ঝড় দুর্বার । গীতিকার কবি তুমি সুরকার কবি বাংলা সংগীতেও…
মন বেঁধেছি মেঘের সাথে (শিল্পী মাহমুদা) দৃষ্টি এক গোলার্ধ, চোখে অন্তর মগ্নতার মধ্যযৌবন ক্রিয়া দেখা যায় নীরব নিসার, তুমি আমি বর্ষীয় গান অবিরাম মুষ্টিবদ্ধ আছে হাত, ঝরলে শ্রাবণ ঝরুক ঝর ঝর ঝর। দখিণা বাতাসে কেন কি কথা স্বরনে আজ বাজে ঔরষে আজ বুকে মৃদু মৃদু হতাদর সাজে মহারণ্যের মনে জেগেছে শত তৃশা, ক্রন্দন হিয়া তারই নিঃশ্বাস মিশা। আমি মন বেঁধেছি পথহারা আঁধার বরণ মেঘের সাথে শেফালী শিথিল আঁখিপাতে, শৌখিন শিকারী জীবন পুরবী দেখি বেদনাতে দিগন্ত ছোঁয়া থেকে যাবো ভ্রমর গুঞ্জরিতে। জেগে থাকি ঘুমের অনন্ত অম্বরে হাওয়া বেড়ে যায় বিদ্যুৎ কাঁদে মেঘ ঝরে রোমাঞ্চিত উত্তাল উচ্চারণে যতটা আমাদের স্বপ্ন হয় ততটাই…
নিছক অঙ্গীকার (যুথিকা জ্যোতি) বলেছিলে আসবে তুমি, রেশমী জোছনা রাতে থাকবে দাঁড়িয়ে শাঁন বাঁধানো পদ্মদীঘির পারে, মধুর মিলনে। লয়ে হাজার রঙ্গীন স্বপন তোমার আকাশ দুটি আঁখিতে। আসবে সন্তর্পণে নৈঃশব্দে নির্জন নিভৃতে ছড়িয়ে মধুর সৌরভ, করে বিস্মিত মোরে, ঘন ঘন ফেলে নিঃশ্বাস চুপিচুপি অভিসারে। বলেছিলে আসবে তুমি, বসবে মুখোমুখি স্নিগ্ধ সবুজ দূর্বা ঘাসের প’রে, ফোটায়ে হৃদি পদ্মকলি, বলবে কত না বলা কথা। গাইবে প্রেমগাথা, উল্লাসে উচ্ছাসে। রব চেয়ে আমি গভীর মগনে, শ্রবণে তব মুখপানে পরিতৃপ্ত নয়নে। পলে পলে উঠিবে দুলে তন মন মোর মধুর শিহরণে। বলেছিলে আসবে তুমি, রাঙ্গাবে রাঙ্গা অনুরাগে, আবেগে সোহাগে নিমগ্ন হয়ে মজিয়া প্রেমের সুধারসে। নিশ্চিন্তে হই বিভোর,…
ইনকিলাব জিন্দাবাদ (জগলুল হায়দার) খিলাফতের হাত ধরে অসহযোগ এলো। মাওলানা আলী ভাইয়ের কদমে মিললো মহাত্মার চরণ। মাওলানা হসরত মোহানীর কন্ঠে ফকির আলেমদের আদি আজাদির আকাংখা নুতুন কইরা ধ্বনিত হইল- ইনকিলাব জিন্দাবাদ। এ যেন শ্লোগান নয় অজর আগুন। বিপ্লবি ভগত সিংয়ের কণ্ঠে সেই আগুন দাবানলের মতো ছড়াইয়া পড়লো কাশ্মীর থিকা কন্যাকুমারী পর্যন্ত। খিলাফত গেলো। অসহযোগ গেলো। নানা বাঁকে সহবস্থানের ভাবনা ফিকে হইতে হইতে তেজপাতা হইল। হিন্দু চিন্তা করলো হিন্দুর লাইগা। মহাত্মার জাতীয়তাবাদেও রামরাজ্যের আকাংখা। যতোই গান- ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম… সাবকো সুমতি দে ভগবান’। ততোই বিভেদ বাড়ে। মুসলমান বিভেদ চায় নাই, চাইছিল ইনসাফ। লীগ তো লখনৌ চুক্তিতে অখণ্ডতায় আস্থা রাখছিল। সরোজিনী…
কুংফু মামা [শাহ্ নাজমুল] ঘরের ভেতর থেকে থেকে মাটন কাচ্চি চেখে চেখে পায়েস পুডিং খেয়ে খেয়ে আদর যত্ন পেয়ে পেয়ে কাদের মামার গায়ে গায়ে পেটটি ফুললো টায়ে টায়ে। নিম্মি মামি রেগে রেগে কথার কামান দেগে দেগে নোটিস দিল সাথে সাথে শুকনো হবে রাতে রাতে। যদি পারো সত্যি সত্যি ফেরত পাবে রত্তি রত্তি। ভয়ে ভয়ে মামা বলে দিনে দিনে জিমের ছলে ভোরে ভোরে কাদের মামা সাদা সাদা কুংফু র জামা পরে পরে পড়ছে ঘামি হেসে হেসে দেখছে মামি গর্বে গর্বে মামার মুখ অনেক অনেক লাগছে সুখ কেন কেন দিলেন লাফ তখন তখন হলো সাফ। এলো এলো কুকুর বেশ মুতে মুতে করলো…
মনে রেখো [আসমা খানম শিউলী] যদি এমনি করেই মৌন হয়ে যাই যদি আর না থাকে উচ্ছ্বাস আলোড়ন না তোলে তোমার প্রেম তবে দুঃখ পেয়ো না যেন। যদি হলুদ প্রজাপতিটা উড়ে আসে কোনো ক্ষণে যদি শিশির জমে ঘাসফুলের ডগায় যদি গন্ধরাজ তখনও সুবাস ছড়ায় মনে রেখো ভালোবেসেছিলাম তোমায়। যদি এমনি করেই মৌন হয়ে যাই যদি আর না থাকে উচ্ছ্বাস কাছে না টানে সোনালু যে সোনালুর জন্য দিনরাত্রি হতে চেয়েছিলাম তবে দুঃখ পেয়ো না যেন। যদি আবার কৃষ্ণচূড়া ফোটে তাকে বোলো, তার জন্য সকাল হতে চেয়েছিলাম আর ভালোবেসেছিলাম তোমাকে। আসমা খানম শিউলী ১৬|০৪|২০২২
