ইনকিলাব জিন্দাবাদ
(জগলুল হায়দার)
খিলাফতের হাত ধরে অসহযোগ এলো।
মাওলানা আলী ভাইয়ের কদমে মিললো মহাত্মার চরণ।
মাওলানা হসরত মোহানীর কন্ঠে ফকির আলেমদের আদি
আজাদির আকাংখা নুতুন কইরা ধ্বনিত হইল- ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
এ যেন শ্লোগান নয় অজর আগুন।
বিপ্লবি ভগত সিংয়ের কণ্ঠে সেই আগুন দাবানলের মতো
ছড়াইয়া পড়লো কাশ্মীর থিকা কন্যাকুমারী পর্যন্ত।
খিলাফত গেলো।
অসহযোগ গেলো।
নানা বাঁকে সহবস্থানের ভাবনা ফিকে হইতে হইতে তেজপাতা হইল।
হিন্দু চিন্তা করলো হিন্দুর লাইগা।
মহাত্মার জাতীয়তাবাদেও রামরাজ্যের আকাংখা।
যতোই গান- ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম… সাবকো সুমতি দে ভগবান’।
ততোই বিভেদ বাড়ে।
মুসলমান বিভেদ চায় নাই, চাইছিল ইনসাফ।
লীগ তো লখনৌ চুক্তিতে অখণ্ডতায় আস্থা রাখছিল।
সরোজিনী নাইডু থিকা সবাই জানে জিন্নাই তখন হিন্দু-মুসলিম মিলনের অগ্রদুত।
অথচ নেহেরু, বল্লভ ভাই কর্তৃত্বের ফিকিরে বিজি।
ফলতঃ কায়দে আজম ক্ষোভে খুদ্দার।
স্বাভিমানে স্বতন্ত্র।
মাওলানা আজাদ তবু সংলগ্ন থাকার কৌশিসে।
সারা হিন্দুস্তানে এক ধ্বনি, আত্মার আওয়াজ- ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!!
নারায় কাঁপে ইংরেজ। পথে পথে কুইট ইন্ডিয়ার কাফেলায়- ‘কারেংগে ইয়া মরেংগে’ শোর।
আর থাইকা থাইকা সমবেত আওয়াজ- ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!!
কর্তৃত্বের কোপে মুসলমান।
গান্ধী মুগ্ধ ইকবালে- সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তা হামারা।
কিন্তু গঙ্গা সিন্ধু যমুনায় পানি গড়ায়।
কংগ্রেস ক্রমাগত বঙ্কিমের বোলে- বন্দেমাতেরাম!
ইকবালও বিভোর পাকিস্তানের স্বপ্নে। জিন্নার যুক্তি- বাই নেশন।
হক সাহেবের হাকিকত- লাহোর প্রস্তাব।
চন্দ্র ও চক্রে বিভক্তি!
নেতাজি নজরুলের গানে কদম কদম মার্চে।
আজাদ হিন্দ ফৌজ আগুয়ান। সিংগাপুর থিকা মনিপুর।
বার্মা ইম্ফল কোহিমা চট্টগ্রাম নোয়াখালী।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ! ইনকিলাব জিন্দাবাদ!!
দাদা সংগ্রাম করলেন। বাবা তখন স্কুলের ছাত্র।
গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে জাগলো মানুষ।
জালিয়ানওয়ালা বাগ থিকা জামালপুর, মিরাট থিকা মেদিনিপুর গাইলো শিকল ভাঙার গান।
মুসলমানের হোম ল্যান্ডে মুসলমানের পক্ষপাত।
ভোট হইল।
‘হাতে বিড়ি মুখে পান লাড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’।
ভোটের বাক্সে শহীদ সাহেবের জয়জয়কার।
শেরেবাংলার লাহোর প্রস্তাব পাক্কা হইল ছেচল্লিশের ভোটে।
কিন্তু পুরা না।
পথ তখনও বাকি।
বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্রধানমন্ত্রী অ্যাটলি বাধ সাধলেন সেই পথে।
বাধা হয়ে এলো ক্যাবিনেট মিশন।
অ্যাটলি ও মিশনে উৎফুল্ল কংগ্রেস। আশাহত লীগ।
অতঃপর কায়দে আজম ডাকলেন দিল্লী অধিবেশন।
হাওড়া থিকা দিল্লীমুখী ছুটলো ঐতিহাসিক ‘পূর্ব পাকিস্তান স্পেশাল’ ট্রেন।
সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে শেখ মুজিবসহ বাংলার দামাল তরুণরা
‘মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’,
‘কায়দে আজম জিন্দাবাদ’, ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ’
ধ্বনিতে বীরদর্পে ছুটলেন দিল্লীতে।
কায়দে আজম কল করলেন ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে।
পাকিস্তান চাই;
চাই মুসলমানের স্বতন্ত্র আবাস ভূমি।
কওমের আজাদিতে সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশ।
উন্মুখ ভারত, উত্তাল কলকাতা।
পুনুরায় জাগ্রত আশাহত মুসলিম।
কায়দের আহ্বান আর সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে
মিছিলের নগরী কলকাতায় শেখ মুজিবের মতো উদীয়মান তরুণরা সংগ্রামে কাতারবদ্ধ।
গড়ের মাঠ মানুষের ময়দান- হাতে বিড়ি মুখে পান লারকে লেঙ্গে পাকিস্তান।
ব্রিটিশ বিরোধী ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে।
কংগ্রেস তবু অনাবশ্যক পাল্টাপাল্টিতে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিতে উত্থিত হিন্দু।
চন্দ্র ও চক্র মুখোমুখি ফের।
নাইমা আসে গোপাল পাঁঠাও।
এর মাঝেই রক্তাক্ত ইসলামিয়া কলেজ।
ওয়েলিংটন স্কয়ার মসজিদ আক্রান্ত।
অতঃপর অপ্রস্তুত মুসলিমও জানবাজ প্রতিরোধে।
প্রবল হয় দাঙ্গা- গ্রেট কলকাতা কিলিং।
হিন্দু মুসলিম পরস্পর চড়াও।
কলকাতার পথজুড়ে মানুষের লাশ।
গোরস্তানে, শ্মশানে কান্নার কাসিদা।
বিহার নোয়াখালীতেও বিস্তৃত রক্তের স্রোত।
মহাত্মা মানলেন দেশভাগ।
কায়দের বুকে বিজয়ের বাদ্য।
নেহেরু, বল্লভ ভাই, মাওলানা আজাদ মহাত্মায় মৌন।
যেভাবেই হোক আজাদিই আগে।
শ্যামাপ্রসাদে মগ্ন অখণ্ড ভারতপন্থিদের হাতেই দ্বিখণ্ডিত বাংলা।
জিন্না ও লীগের চেষ্টা বিফল;
বিফল সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বোসও।
ব্যবস্থাপক পরিষদে ঐক্যের পক্ষে একাট্টা লীগ।
কিন্তু কংগ্রেস-অকংগ্রেস নির্বিশেষে সকল হিন্দুর ভোটে ভেঙে গেলো বাংলা।
অইদিকে ভাঙলো পাঞ্জাবও।
যেভাবেই হোক স্বাধীনতাই আগে।
দুইশ বছরের পরাধীনতায় হিন্দু মুসলিম সবার বুকে প্রথমত সেই এক আওয়াজ- ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!!
১ Comment
congratulations