বাবার ডায়েরি
[আসমা খানম শিউলী]
ডায়েরি লেখার অভ্যেস ছিল না আমার, তবুও একটা ডায়েরি আছে যেটাতে দুই চার লাইনে মনের কথা লিখে রাখি। এই একটা ডায়েরিতেই জনম কেটে গেল। জীবনের হিসেব লেখা হয় না তাতে, কিছু হিসেব থাকে চাল, ডাল, নুনের। আর কিছু ভুল অংকের কাটাকাটি। কিছু নতুন টাকাও আছে পৃষ্ঠার ভাজে।
হঠাৎ বুকটা ব্যথা করছে। শেষ বেলা এখন। একটুতেই ভয় পেয়ে যাই, এই বুঝি কিছু হয়! তাই তো মনে হলো তোমাকে কিছু কথা বলে যাই। তুমি কাছে থাকলে লিখতে হতো না, রোজ দুজনের কথা হতো খাবার টেবিলে চায়ের আড্ডায়, নয়ত রোজ রাতে ছাদে কিছুটা সময় আমাদের কথার ঝাঁপি খুলে শোনা হতো।
আমার স্নেহের তনু, জীবন ফুরিয়ে গেলে অনুতাপ কোরো না। একে একে সবাইকে একটা সময়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে। জানি তুমি আমার বিচক্ষণ বুদ্ধিমতি মেয়ে। নিজের কাছে যেটা ন্যায় মনে হবে সেটাই করবে। তাতে করে নিজের কাছে পরিশুদ্ধ থাকবে। তোমার স্বাধীনচেতা মনকে প্রাধান্য দিই। কখনও স্বেচ্ছাচারি হয়ো না। সবার মন জয় করা সম্ভব না। তবুও অপরের মঙ্গলের জন্য কিছু ত্যাগ করতেই হয়। সেই ত্যাগে যদি আত্মতৃপ্তি পায়ো তবেই তুমি স্বার্থক। শুধু মনে রাখবে, কখনও যেন আত্মগ্লানিতে পড়তে না হয়।
তনু মা, আমার দুঃসময়ে তোমার আলম চাচা আমার পাশে ছিলেন। পরম বন্ধু সে আমার! যে দান গ্রহণ করেছি তা ফিরিয়ে দিতে পারিনি। টাকা সম্পত্তি আদানপ্রদান করা যায় পাশাপাশি ভালোবাসা, প্রীতি, বন্ধুত্বের বন্ধন শুধু ভালোবাসা, প্রীতির বন্ধনেই বেঁধে রাখতে হয়। ভুলে যেয়ো না এ কথা।
ব্যথাটা বেড়ে যাচ্ছে। লিখতে কষ্ট হচ্ছে। যদি এ যাত্রায় বেঁচে যাই তবে লিখব দুঃসময়ের ইতি কথা।
তুমি এলে ভালো হয়। কতদিন দেখিনি তোমাকে! তোমার শেফালীর চারাটা অনেক বড়ো হ য়ে —-।
(…..আর লেখা হয়নি)
আসমা খানম শিউলী
০৫|০৬|২০২২
১ Comment
Beautiful