নিছক অঙ্গীকার
(যুথিকা জ্যোতি)
বলেছিলে আসবে তুমি, রেশমী জোছনা রাতে
থাকবে দাঁড়িয়ে শাঁন বাঁধানো পদ্মদীঘির পারে, মধুর মিলনে।
লয়ে হাজার রঙ্গীন স্বপন তোমার আকাশ দুটি আঁখিতে।
আসবে সন্তর্পণে নৈঃশব্দে নির্জন নিভৃতে ছড়িয়ে মধুর সৌরভ,
করে বিস্মিত মোরে, ঘন ঘন ফেলে নিঃশ্বাস চুপিচুপি অভিসারে।
বলেছিলে আসবে তুমি, বসবে মুখোমুখি স্নিগ্ধ সবুজ দূর্বা ঘাসের প’রে,
ফোটায়ে হৃদি পদ্মকলি, বলবে কত না বলা কথা।
গাইবে প্রেমগাথা, উল্লাসে উচ্ছাসে।
রব চেয়ে আমি গভীর মগনে, শ্রবণে তব মুখপানে
পরিতৃপ্ত নয়নে।
পলে পলে উঠিবে দুলে তন মন মোর মধুর শিহরণে।
বলেছিলে আসবে তুমি, রাঙ্গাবে রাঙ্গা অনুরাগে,
আবেগে সোহাগে নিমগ্ন হয়ে মজিয়া প্রেমের সুধারসে।
নিশ্চিন্তে হই বিভোর, উন্মুক্ত বিহঙ্গের মত
বাঁধাহীন, সীমাহীন বিশাল ভুবনে;
ভাসিবে অনন্ত অনাবিল সুখে,
হারায়ে রশেমী জোছনা রাতের সুদূর দিগন্তে।
বলেছিলে আসবে তুমি, অম্লান বদনে আনন্দনিকেতনে,
রাখি যেন দ্বার খুলে, সুপ্রসন্ন চিত্তে আসন্ন মিলনোৎসবের দ্বীপ জ্বেলে।
যদি হয় অঝোরে বর্ষণ কিংবা মহাঘূর্ণির প্রলয়মাতন,
তবু রত রবে দর্শণে মোর শান্ত স্নিগ্ধ মুখমন্ডল, আবেগে সোহাগে
নিমগ্ন হয়ে তব আকূল নয়নপাতি।
বলেছিলে আসবে তুমি, মিছে নয় আশ্বাস, করিও বিশ্বাস মোরে
নির্ভয়ে নিঃসংকটে নিঃসংশয়ে।
যদি থাকি মান-অভিমানে, স্বপনের নক্সীকাঁথার নিঝুম পুরে,
যদি নূয়ে পড়ি ক্লান্ত মনের অবসন্নে, ঘুচাবে নিমেষে আবেগাপ্লুত হয়ে
তব উষ্ণ ওষ্ঠের আলতো পরশে বেঁধে প্রেমালিঙ্গনে।
শুনি যেন তার পদধ্বনী। মনযমুনা মোর উথাল-পাতাল,
কল্পনায় শ্বাশত লজ্জায় প্রণয় মেলায় করি বিচরণ,
পোহায়ে দিবস রজনী।
উল্লাসে চেয়ে দেখি, অশরীরি বাতাসে দোলায়িত
শুধু পদ্মপাতার অবিরল অবয়ব নাচন,
কোথায় তুমি? দিয়েছ আমায় ফাঁকি!
আচমকা গরজে গরজে রিম্ঝিম্ ঘন বরষণে লুপ্ত হয় পথের চিহ্ন;
রাত্রি আঁধার ধূ ধূ বালুচর, নির্জন দ্বীপে বন্দি একা আমি যেন নির্বাসিত।
বিভীষিকায় কম্পিত বক্ষ, নিপীড়িত অশান্ত উদ্বেলিত চিত্ত মম,
স্বপ্ন ভাঙ্গার শোকে কাতর, মুমূর্ষু বিহ্বল আমি।
অবলীলায় আঁখি জলে হইল সলীলসমাধী,
মোর সকল আকাঙ্খিত অভিলাষী।
নাহি কেহ আজ শুনিতে আর্তনাদ, হৃদয় শূন্যতায় মোর আপোস বাণী
তবে কিসের তরে মজিনু নিছক অঙ্গীকারে,
বসে প্রতিক্ষায় শুধুই প্রহর গুনি।
_______________/
যুথিকা বড়ুয়া : কানাডার টরোন্টো প্রবাসী গল্পকার, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী।