পথের আত্মকথা
হিল্লোল তালুকদার
আমি পথ বলছি….
হে পথিক,
আমি তোমাদেরই সৃষ্টি,
তোমাদের প্রয়োজনেই সৃষ্টি কর আমাকে,
আবার তোমরাই আমাকে কর ধ্বংস।
প্রতিনিয়ত নতুনভাবে তৈরি করছ আমাকে।
আমাকে মাড়িয়ে তোমরা পৌঁছে যাও এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে,
কখনো পাত্র হেটে,
কখনো বা যানবাহনে।
যেতে যেতে ফেলে যাও কতশত ঘামের ফোঁটা,
কত শোকাতুর অশ্রু অথবা আনন্দঅশ্রুও।
আমার বুকে মিশিয়ে দিয়ে যাও কত ক্ষুদ্র প্রাণী,
যাদের হিসাবও তোমরা রাখ না।
মিশিয়ে দিয়ে যাও কত শত তাজা প্রাণ,
যাদের জন্য তোমরা ক্ষনিক আহাজারি করো,
অথচ আমাকে সহ্য করতে হয় তাদের আর্তচিৎকার,
মরে যাওয়ার আগে একফোঁটা পানির জন্য
অথবা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রিয়জন হারানোর বেদনা,
আমাকে কুন্ঠিত করে।
আমি নিষ্প্রাণ বলে কাঁদতে পারি না,
না পারি শুনাতে স্বান্ত্বনার বাণী।
যদি কখনো প্রতিবাদ করে জানতে চাই,
পারবে কি জবাব দিতে?
কেন প্রতিনিয়ত আমাকে এত খোড়াখুড়ি?
যদি আমারও রক্ত ঝড়তো,
তবে পারতে কি সে রক্তের দাম দিতে?
আমার বুকে দাঁড়িয়ে মিছিলে মিটিং এ,
যে মিথ্যার জাল ছড়াও
আমি তার নীরব স্বাক্ষী।
কত প্রতিবাদী তোমরা!
কখনো মৌন মিছিল, কখনো মোমবাতি মিছিল আবার কখনোবা মশাল মিছিল।
মিছিল শেষে তোমাদের ফেলে যাওয়া মশালে যখন জ্বলন্ত আগুনে জ্বলতে থাকে আমার বুক,
সে পোড়ার কষ্ট কি টের পাও?
একমাত্র বৃষ্টি-ই আমাকে বুঝে।
তোমাদের পদভারে যখন আমি তৃষ্ণার্ত,
সে-ই আমার তৃষ্ণা মেটায়,
রোদে পোড়ে, আগুনে জ্বলে যখন মৃতপ্রায়….
তখন বৃষ্টি এসে মিতালী করে আমার সাথে।
আমি বিবেকহীন………..
তোমাদের আবেগ, অনুভূতি হয়ত আমি বুঝি না।
তোমাদের তো বিবেক আছে!
তবে তোমরা কেনো বুঝো না…..
তোমাদের খোড়াখুড়ি আমার কতটা ক্ষত তৈরী করে?
তোমাদের অবহেলায় আমি কতটা পুড়ি?
কেন বুঝো না, এত এত তাজা রক্ত শুষে নিতে আমার কতটা কষ্ট হয়?