প্রেম চাই না
আজিজুন নাহার আঁখি
২৪/১০/২০২১
তোমায় প্রতিদিন দেখতে পাই না ঠিকই
কিন্তু অন্তর দৃষ্টিতে দেখি সারাক্ষণ,
তোমার কাছে প্রেম চাই না
শুধু হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসো।
দামী কোনো উপহার আমায় আকৃষ্ট করে না
তোমার অসামান্য ভালোবাসায় আমি মোহবিষ্ট হতে চাই ,
সুবিশাল কোনো অট্টালিকা দরকার নাই
বুকের জমিনে আশ্রয়টুকু দিও।
মুখরোচক হাজারো খাবারের ডালি সাজাতে হবে না
খাওয়ার সময়একটু খাবার আমার প্লেটে তুলে দিও
ঠিক এভাবে সযতনে রেখো আমায়।
তোমার আলিঙ্গনের উষ্ণতা চাই না
শুধু হাতে হাত রেখে পথ চলো,
ব্যস্ত রাস্তায় হাতটি ধরে সাবধানে রাস্তা পার করো
এমন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে থেকো আজীবন।
কোনো বিলাসিতা আমার চাই না
শুধু অনুভবে রেখো জড়িয়ে,
আমার অসুস্থতায় কোনো দামী হাসপাতালে নিতে হবে না
শুধু গায়ে হাত দিয়ে বলো তোমার কিচ্ছু হবেনা
এইতো আমি তোমার কাছেই আছি।
ভালো রাখার প্রয়াসে তোমার এই সান্নিধ্যই
আমায় সুস্থ করে তুলবে,
এভাবেই ভালোবেসো আমায়।
আমায় কেউ কষ্ট দিলে
তুমিও সমব্যথী হবে,
আমার অপমানে তোমার রাগ হবে
তুমি ঠিক এমনই থেকো।
মাঝে মাঝে তীব্র অভিমানে
নিজেকে কষ্ট দিবে, আমাকেও কষ্ট দিবে
কিন্তু আমি চাই তুমি কষ্ট পাবে না।
আমার সাথে রাগ করবে ঝগড়া করবে
আবার পরক্ষণেই সব ভুলে গিয়ে
আগের মতোই আপন ভাববে।
আমার প্রেমহীন জীবনে
কোনো প্রেমময় ভালোবাসা চাই না,
শুধু নিখাদ প্রেমহীন ভালোবাসা চাই।
প্রেম তো আজ আছে কাল নেই
কিন্তু ভালোবাসা চিরঞ্জীব ,
আর আমি এই অমরত্বের স্বাদ পেতে চাই
শুধু তোমার ভালোবাসায়।
আবারও বলছি আমি প্রেমের কাঙাল নই
আমি শুধু ভালোবাসার কাঙাল ,
তাই প্রেম চাই না এই ভূবনে
ভালোবেসে থেকো মোর জীবনে-মরণে।
আসবো ফিরে
২৪/১০/২০২১
কোনো এক শরতের স্নিগ্ধ ভোরে
মুক্তোদানা শিশিরে ভিজে,
আঁচল ভরে শুভ্র শিউলি আর
এক মুঠো সোনালো রোদ্দুর নিয়ে
তোমার দ্বারে এসে কড়া নাড়বো,
তুমি কি তখন দোর বন্ধ করে থাকবে?
না কি আড়মোড়া ভেঙে ঘুম চোখে,
দোর খুলে আমায় দেখে আহ্লাদিত হবে?
আমি আসবো ফিরে,
তোমার ঐ সুখের নীড়ে।
তপ্ত দুপুরের হাসফাস গরমে
তুমি যখন অনেক পরিশ্রান্ত,
ক্লান্তিতে ঘরেতে বিশ্রাম নিচ্ছো
তখন এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে,
তোমার উঠোনে এসে দাঁড়াবো।
তখন ঐ রিমিঝিম বরিষণে,
তুমি কি ঘরেতে আনমনে বসে থাকবে?
না কি বাইরে এসে আমার সাথে বৃষ্টিস্নান করবে?
আমি আসবো ফিরে,
তোমার ঐ সুখের নীড়ে।
কোনো এক অলস বিকেলে
যখন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরবে,
রঙধনুর সবটুকু আবিড় নিয়ে
তোমার বাড়ি ফেরার পথে দাঁড়িয়ে থাকবো।
তখন কি আমায় পাশ কাটিয়ে চলে যাবে?
না কি আমার সাথে আবিড় মেখে রঙিন হবে?
আমি আসবো ফিরে,
তোমার ঐ সুখের নীড়ে
পশ্চিম আকাশে যখন সূর্য ঢলে পড়ে
আলো আঁধারের অপরূপ সৌন্দর্য্য খেলা করে,
তোমার মন অবসন্ন হয়ে পড়ে
মুঠোভরে লাল রঙ নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবো।
তুমি কি তখন আমায় না চেনার ভান করবে?
না কি গোধূলীর সৌন্দর্য্যের মাঝে
আমাকে পেয়ে উচ্ছসিত হবে।
আমি আসবো ফিরে,
তোমার ঐ সুখের নীড়ে।
সন্ধ্যা আকাশে যখন তারাদের অবিরাম ছুটোছুটি
শুকতারাটা মিটমিট করে জ্বলে,
জোনাক পাখি পিদিম জ্বালায়,
আনমনে তুমি আকাশ পানে নিমগ্নচিত্তে তাকিয়ে থাকো
ঠিক তখন মাটির প্রদীপ হাতে
তোমার ঘরের সামনে এসে দাঁড়াবো।
তখন কি তুমি আনমনে কিছু ভাববে?
না কি প্রদীপের আলোয় আমায় দেখে পুলকিত হবে?
আমি আসবো ফিরে,
তোমার ঐ সুখের নীড়ে।
নিশুত রাতে যখন পূর্ণিমার জোছনায়
চারিদিক আলোতে আলোতে মাখামাখি,
হাসনা হেনার সুবাসে চারিপাশ মোহবিষ্ট,
তখন রূপোলী জোছনা অঙ্গে মেখে
মুঠোভরে হাসনা হেনার সুবাস নিয়ে,
তোমার দ্বারে এসে দাঁড়াবো।
তুমি কি ফুলের মিষ্টি সুবাসেও ঘুমিয়ে থাকবে?
রূপোলী জোছনা অঙ্গে মাখবে না?
না কি জোছনামাখা আমাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হবে?
ভালোবেসে বাহুডোরে বাঁধবে ?
আমি আসবো ফিরে,
তোমার ঐ সুখের নীড়ে।
ব্যস্ত শহরে
১৩/১০/২০২১
ইট পাথরের শহরে থাকতে থাকতে
তোমার মনটা ইস্পাতের মতো
শক্ত কঠিন হয়ে গেছে,
তাইতো কারো দুঃখ কষ্টে
আগের মতো বিচলিত হও না,
আবেগহীন মন আর কাউকে
আপন করে কাছে ডাকে না
কারো জন্যে তোমার হৃদয়ে অশ্রু ঝরে না।
ব্যস্ত শহরের কংক্রিটের রাস্তায় চলতে চলতে
তোমার মনটাও কংক্রিটের মতো হয়ে গেছে,
হাজারো মানুষ আর গাড়ির বহরের সাথে
ছুটতে ছুটতে ভুলে গিয়েছো
প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে
অনায়াসেই দুর্গম পথও সহজে পারি দেয়া যায়,
শিশির ভেজা দূর্বাঘাসের হাতছানিতে
তুমি আর সেখানে ফিরে আসো না,
মনটা আবেগহীন নিষ্ঠুর হয়ে গেছে
তাইতো কারো আবেগী ইশারায়
তোমার হৃদয় আর পুলকিত হয় না।
নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় মোড়ানো শহরে
প্রতিনিয়ত চলতে চলতে
তোমার মনটাও ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে গেছে,
শিল্প-কারখানার নিকষকালো ধোঁয়ায়
নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছো,
এখন মনে হয় আর খারাপ লাগে না
হাসনাহেনার সুবাস কি মনে আছে?
ধোঁয়ায় মোড়ানো ব্যস্ত শহরে
ফুলের সুবাসে আর সুবাসিত হয় না
তাইতো তোমার ধোঁয়াটে হৃদয়
কাউকে আবেগে জড়াতে চায় না।
নিয়নবাতির আলোয় পথ চলতে চলতে
আর দামী রেস্টুরেন্টের কৃত্রিম আলোয়
চাঁদনী রাতের রূপালী জোছনার সৌন্দর্য্য
একেবারেই ভুলে গিয়েছো,
ভরা পূর্ণিমার জোছনার হাতছানিতে
তুমি আর ঘরের বাইরে বের হও না
জোছনায় মাখামাখিতে যে কতো সুখ
হয়তো সেটা আজ ভুলে গিয়েছো,
হারিয়েছো আবেগময় ক্ষণ।
যান্ত্রিক শহরে হাজারো কাজের মাঝে
যন্ত্রের সাথেই তোমার বসবাস,
আর এই যান্ত্রিক শহরে
তোমার নরম কোমল হৃদয়টাও আজ
যন্ত্রে পরিণত হয়ে গেছে,
যেখানে ভালোবাসা নামক বস্তুটির
কোনো অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই,
আছে শুধু যন্ত্রের মেলা
ভালোবাসাহীন জীবনে ভালো আছো তো?
তোমার এই ব্যস্ত শহরের কাজের ফাঁকে
তোমার একটুখানি অবসরে
মনে পড়ে কি তাকে?
শুধুই প্রয়োজন
০১/১০/২০২১
এই সুন্দর ধরনীতে আমি কারোর প্রিয়জন হতে পারিনি,
হয়তো কারো না কারোর জীবনে
শুধু প্রয়োজন হিসেবে আমার অস্তিত্ব বিদ্যমান ,
নিজের সবটুকু দিয়ে সবার পাশে থাকার চেষ্টা করি,
হোক আমার পরিবার বা পরিবারের বাইরের কেউ
তাদের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে কভু পিছপা হই না,
কারোর সুখে থাকতে না পরলেও প্রয়োজনে খুশিমনে পাশে থাকি।
কিন্তু তাদের প্রয়োজন মিটে যাবার পরেই আর
আমাকে তারা মনে রাখেনা।
আসলে প্রিয়জন হওয়ার মতো সামর্থ্য বা যোগ্যতা হয়তো কোনোটাই আমার নেই।
এতো মানুষের ভিড়ে আমি কারোর আপন হতে পারিনি,
মুখে মুখে অনেকেই আমাকে আপন বলে কিন্তু তাদের চালচলনে বুঝিয়ে দেয় আমি শুধুই পর।
চলতে পথে অনেককেই আপন করে নেই তাদের বিশ্বাস করি,
কিন্তু তারা শুধু আমাকে প্রয়োজনে কাছে টানে,
আসলে আপন হতে গেলে যে আস্থা অর্জন করতে হয়
হয়তো সেটুকু করতে পারিনি।
আমি কখনো কারোর হৃদয় গহীনে ঠাঁই পাইনি,
হৃদয় নিংড়ে সবটা দেওয়ার পরেও
আমি শুধু অবহেলা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্যের ভাগী,
আমি যথেষ্ট আবেগপ্রবণ মানুষ হওয়া সত্বেও
কারোর কাছে আবেগের মূল্য পাই না,
আমার আবেগ অনুভূতিকে সবাই সস্তা ভাবে,
অনেকের কাছে আমার চোখের জলকে
মনে হয় টেপ কলের পানি
যা কি না চাপ দিলেই ঝরে,
চোখের জল কি এমনিতেই ঝরে?
আমার জন্যে কারো হৃদয়ে অবিরত বারি ঝরেনা,
হয়তো কোনো ক্ষতই হয় না।
আসলে আমি তো শুধুই প্রয়োজন
তাইতো কেউ আপন ভেবে কাছে টানে না।
এই বসুন্ধরায় কারোর অবলম্বন হতে পারিনি
ভরসার ব্যক্তি হতে গিয়ে
বারবার বুঝিয়ে দেয় আমি সম্বলহীন ,
এই জীবনে চলতে পথে অনেকের কঠিন সময়ে
নিজের জীবন তুচ্ছ করে পাশে থাকি,
তার বিনিময়ে শুধুই বঞ্চনা ছাড়া আর কিছু পাই না,
কখনো কেউ আমায় আঁকড়ে ধরেনা,
হয়তো আমার মাঝে নির্ভরতা নিয়ে সংশয় আছে
এই জন্যই হয়তো কেউ আমার হাতে হাত রেখে পথ চলে না,
যখন যার যে প্রয়োজন শুধু সেটুকুতে আমায় ডাকে।
সেটাই কজনার ভাগ্যে আছে?
জানি এই জীবনে আমি কোনোদিন
কারোর প্রিয়জন হতে পারব না,
সে নিয়ে আমি আফসোসও করি না।
আসলে এই পৃথিবীতে সবাই কি প্রিয়জন হতে পারে?
আমি না হয় তোমাদের প্রয়োজন হয়েই রয়ে গেলাম।
মানিকগঞ্জ।