স্বপ্ন ভেঙেছিল
তসলিমা হাসান
চয়নিকা আজও বারুইপুর লোকালে বসে আছে। মুখটা ওড়নায় ঢাকা। শুধু ওর সুন্দর বাদামী চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। এই পথে রোজ হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে সবাই ওকে এভাবেই দেখে। কেউ কৌতুহলান্বিত হলে তাকে শুধু চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয় ও ভীষণ বিরক্ত। নামটা জানতে পেরেছে সবাই ওর প্রেমিক হিমাদ্রীর থেকেই। যে রোজ এই ট্রেনে চড়ে শুধুমাত্র ওর জন্যই।
– ‘আজ এত দেরি হলো! ‘চয়নিকা হিমাদ্রীকে,
– ‘আজ তোমার জন্মদিন, তাই মা পায়েস দিয়েছেন’। হিমাদ্রী চয়নিকাকে।
– ‘ও মনে আছে তোমার মায়ের ! ‘ চয়নিকা কটাক্ষের সুরে।
– ‘মা আজও অনুতপ্ত !’ হিমাদ্রী
দিন দশেক পরে এক যাত্রী চয়নিকাকে প্রশ্নই করে বসলো,
– ‘ ম্যাডাম ওই ছেলেটি কি আপনার বর! নাকি আপনার প্রেমিক? আপনার মুখই ঢাকা থাকে কেন ? ‘
চয়নিকার শানিত দৃষ্টি লোকটিকে যেন ঝলসে দেবে এক পলকে মনে হলো।
– ‘ আমার সাথে হিমাদ্রীর বছর পাঁচেকের প্রেম ছিল। বিয়ের দিনও স্থির হয়। কিন্তু ওর মামাতো ভাই অলোকের আমার প্রতি কুনজর ছিল। স্বভাবতই বিয়েতে বাধা দেয় ও। বিয়ের আগের রাতে আমাকে তুলে নিয়ে যায় আর ! ‘ চয়নিকা কথাগুলো শেষ করার আগেই ওর মুখের ঢাকা ওড়নাটা সবার সামনে খুলে দেয়।
সবাই চমকে ওঠে ওকে দেখে, কেউ কেউ চোখ বুজে ফেলে। চয়নিকার মুখের তলার অংশটা এ্যসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
দুদিন পর ট্রেনে
– ‘ কাল সার্জেনের কাছে এপ্যোয়ন্টমেন্ট আছে, সব কথা বলা আছে ‘ । হিমাদ্রী চয়নিকাকে বললো।
এখন ট্রেনের সহযাত্রীদের সাথে চয়নিকার বেশ বন্ধুত্ব। চয়নিকার একটাই কাজ বারুইপুর লোকালে চেপে আপ ডাউন করা তারপর বাড়িতে ফেরা।
প্লাস্টিক সার্জারির পর চয়নিকার মুখটা অনেকটাই ঠিক হল।
– ‘ অলোক তুমি আমাকে নিজের করতে চেয়েছিলে! তাই এ্যসিড এ্যটাকও করলে আমি না বলাতে। দেখা কোরো তোমাকেই বিয়ে করবো, হিমাদ্রীকে নয়’। ফোনে চয়নিকা অলোককে বলে।
পরদিন বারুইপুর লোকালে,
– ‘ অলোক চলো দরজার সামনে যাই। ‘ চয়নিকা
– ‘ কেন ? ‘ অলোক
– ‘ চলোই না ‘ । চয়নিকা
ট্রেনটা সবে গতি নিয়েছে সজোরে ধাক্বা দিল অলোককে ট্রেনের বাইরে। আইন সাজা দেয়নি, পয়সার জোরে ছাড়া পেয়েছিল ও।
রেল পুলিশের কাছে চয়নিকা নিজেকে সঁপে দিল।
– ‘ কেন করলে এটা ! ‘ হিমাদ্রী
– ‘ভিতরের স্বপ্ন ভেঙেছিল তাই ‘। চয়নিকা
(সমাপ্ত)
তসলিমা হাসান
কানাডা,২০-১২-২০২২