যেভাবে জিয়াবুল থেকে হয়ে ওঠেন কবি এম.ডি জিয়াবুল।
অদম্য ইচ্ছে শক্তি স্বপ্ন দেখাতে পারে।
আর সে স্বপ্নের প্লাবনে গা ভাসিয়ে চলছেন পাহাড়ের তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান কবি এম.ডি জিয়াবুল।
নিসর্গে ঘেরা পাহাড়ে বসেই দিয়ে যাচ্ছে সবুজ প্রকৃতির অজস্র কাব্যরূপ। তার কবিতায় যেন নিমিষেই প্রাণ ফিরে পায় বিস্তীর্ণ পর্বতরাজি!
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে হৃদয় লালন করে লিখে চলছেন প্রতিনিয়ত। তার কবিতায় ফুটে তুলেন বজ্রনিনাদের প্রলয় ধ্বনি ও উৎপীড়নের প্রতিবাদ। কলম চালাতে ব্যর্থ হননি সমাজ পরিবর্তনেরও।
বলছিলাম, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড় ঘেরা আলীকদমের ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পাট্টাখাইয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি এম.ডি জিয়াবুলের কথা।
তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ৬শ’র অধিক কবিতা লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বান্দরবান জেলা সহ সারাদেশ জুড়ে। তাঁর বেশ কিছু কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। তার বাবার নাম সামসুল হক ও মাতা ছকিনা খানম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জিয়াবুল প্রথম।
১৯৯৭ সালে তিনি ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন তার বাবা ও ২০০২ সালে তার মা অকালে মৃত্যুবরণ করেন। টেনেটুনে কোন মতে এসএসসি পর্যন্ত পড়ে শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে হয় তাঁর। ধরতে হয় সংসার নামক নৌকার দাঁড়। শুরু করেন চাকরি জীবন। কিন্তু সেই ছোট্ট বেলা থেকে তাঁর মনের কৌটায় বাস করতো কবি হওয়ার স্বপ্ন। পেশায় চাকরি নেশায় কবিতা, কর্মের অবসরে হাতে নেন কলম-ডায়েরি, লিখতে বসেন কবিতা, জীবিত রেখেছেন প্রতিভা। তার অদম্য আগ্রহের ফলে চষে চলছে কলম।
জিয়াবুল বলেন, কবি নজরুল হতে না পারলেও অন্তত চেষ্টা তো অব্যাহত রাখতে পারি।
স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে চাকরির পাশাপাশি সাহিত্যের উপর মনোযোগ দেওয়া শুরু করেন। কয়েক বছরের সাধনার মধ্যে দিয়ে জিয়াবুল থেকে হয়ে উঠেন কবি এম.ডি জিয়াবুল। পরিচিত হন দেশের বিভিন্ন এ সময়ের খ্যাতিমান কবিদের সাথে।
তিনি অসংখ্য পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনে লেখালেখি করেন। তার লেখা ছড়া-কবিতায় প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহারে প্রশংসা পায় বহু পাঠকের কাছে। তিনি ২০২০ সালে জাতীয় আর্কাইভস গ্রন্থগার অধিদপ্তরে লেখক হিসেবে নিবন্ধিত হন।
তার কাব্য চর্চায় দূর্নীতি, দ্রোহ, সমাজতান্ত্রিক, প্রতিবাদী, প্রেম-প্রকৃতি সহ জীবনমুখী কবিতায় বহু পাঠক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য কাব্য পরিষদ হতে পাঁচ দেশীয় সম্মাননা-২০২১ এবং সার্ক আট দেশীয় আন্তর্জাতিক সাহিত্য স্মারক-২০২৩।
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পার্বত্য কাব্য সম্মাননা-২০২৩ এবং জাগ্রত সাহিত্য পদক-২০২৩, আলোকিত প্রাঙ্গণ সাহিত্য স্মারক-২০২৩ সহ বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন হতে একাধিক সম্মাননা অর্জন করেন।
তিনি তার প্রতিষ্ঠিত ‘বর্ণ সাজ পাঠক ফোরাম ও পাঠাগার’ এর (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) এবং ‘এপার বাংলা ওপার বাংলার কবিদল’ এর বান্দরবান জেলা আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি প্রতিবিম্ব প্রকাশ ও কালের প্রতিবিম্ব-এর বান্দরবান জেলার “জেলা প্রতিনিধি”
তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে প্রতিবাদী কলম, রূপ লাবণ্য আলীকদম, ছোটদের ছন্দে ছন্দে মজার ছড়া।
যৌথ কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কাব্যের কলতান, সাহিত্যের কুসুম জ্যোতি, নব জাগরন ও ফাল্গুন বিপ্লব।
তাছাড়াও তাঁর প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে ৫৮ পর্বের একটি উপন্যাসও।
এ ব্যাপারে কবি জিয়াবুল বলেন, এই পথচলা এতো সহজ ছিলনা। সংসারের খোরপোস জোগাড় করে লেখালেখিতে মনোযোগ দেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে আমার আগ্রহ ও চেষ্ট ছিলো অপরিসীম।
আমি স্বপ্ন দেখি সমাজ পরিবর্তনের, ভেঙে দিতে চাই অনিয়মের সিলগালা। মাদকাসক্ত থেকে ফিরে আনতে চাই যুবসমাজ। ভাঙতে চাই সমাজের পুরোনো কুসংস্কার।