১৬৪ বার পড়া হয়েছে
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী হাসপাতালে:
কানাডায় অবস্থানরত কবি আসাদ চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিভিন্ন শারীরিক জটিল কারণে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাতে তাকে টরন্টোর স্থানীয় একটি হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টসহ নানান জটিল রোগে ভুগছিলেন। এই অবস্থায় তাকে ক্যাথেড্রাল দেয়া হলেও কোনো উন্নতি না হলে বৃহস্পতিবার রাতে দ্রুত ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়।
পরদিন শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ৬টার দিকে কবি আসাদ চৌধুরীকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার কেবিনে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বরেণ্য এই কবিকে দেখার জন্য হাসপাতালে ছুটে যান স্থানীয় কমিউনিটির নেতারা। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত কবির বোন সাবেরা চৌধুরী। কবির দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
________________________________________________
আসাদ চৌধুরী Asad Chowdhury বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক। তিনি মনোগ্রাহী টেলিভিশন উপস্থাপনা ও চমৎকার আবৃত্তির জন্যও জনপ্রিয়।
আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম।
আসাদ চৌধুরী উলানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীর বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমীতে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর পদচারণা। কবিতা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ইত্যাদি রচনা করেছেন। কিছু অনুবাদকর্মও তিনি সম্পাদন করেছেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
তিনি পুরস্কার ও সম্মাননা পান- আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৭); শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক (১৯৯৯); বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক; অশ্বনী কুমার পদক (২০০১); জীবনানন্দ দাশ পদক; অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক; জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৬); বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ১৪১৮; একুশে পদক, (২০১৩)
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
আসাদ চৌধুরী প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- তবক দেওয়া পান (১৯৭৫), বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬), প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬),জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২), যে পারে পারুক (১৯৮৩), মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪), মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫), আমার কবিতা (১৯৮৫), ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫), প্রেমের কবিতা (১৯৮৫), দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭), নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২), টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭), বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮), বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮),কবিতা-সমগ্র (২০০২), কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩), ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)।
কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরে স্বপরিবারে টরন্টোতে বসবাস করছেন।