পুকুর পাড়ের লাল-জামরুল গাছ
-সাঈফ ফাতেউর রহমান
পুকুরটা যথেষ্টই বড়, দৈর্ঘ্যে এবং পরিসরেও
একপ্রান্তে টিকু-মিকু’দের বাড়ি, অন্যপারে হেডমাষ্টারের আবাস
হেডস্যারের বাসার দেওয়ালের বাইরে জামরুল গাছ ডালপালা ছড়িয়ে
জন্মাবধি দেখে আসছি, বাবা বলতেন, তিনিও দেখেছেন এমনই বড়
আজও আছে গাছটি তেমনই, বিস্তৃত পরিসরে শাখা প্রশাখার সম্ভার
লাল লাল জামরুল, সুস্বাদ, প্রচুর ফলন, ডালে ডালে থোকায় থোকায়
নিষেধ করে না কেউ, কেবল পাঁচিলের পাশ থেকে কোমল রমণীকণ্ঠ,
পইড়ে যাইয়ে ব্যাতা পাইয়েনা বাজানরা, সাবধানে গাছে চড়ো, আর
নরম ডালে যাইয়ে না বাবারা!
গাছটি এখনো আছে, ফলভারানত
প্রাবীন্যের ছাপ যদিও পড়েছে সর্বাঙ্গে তার
পুকুরটিও পড়ন্ত বিকেলের মত বিশীর্ণতায়
পরিচর্যার অভাবে শ্রীহীনতায় অতীত যৌবনের স্মৃতি রোমন্থন করে।
মিকুদের বিশাল দোতলা গৃহের অংশীদারিত্বের বিভাজনে শ্রীছিন্ন অনন্দ এখন
হেডস্যারের বাসগৃহেরও অবয়বিক পরিবর্তন ঘটে গেছে সময়ের অনিবার্যতায়।
আজকের শিশুরা লাল জামরুল সংগ্রহে গেলে
পাঁচিলের ওপার থাকা সেই মায়ার্দ্র কণ্ঠ বিগত অনেক আগেই।
হেডস্যার, তাহাজ্জুদ হুসাইন, অসাধারণ ব্যক্তিত্বে প্রোজ্জ্বল কেবলই স্মৃতিতে
পুত্র সৈনিক, তুখোড় আইনজীবী অকালে ছেড়েছে পৃথিবীর মায়া
মেধাবী বিপ্লব, মানবিক চিকিৎসক, নিজেই হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুযুধান।
ছোট বোন তাদের, আমাদেরই ভগ্নিসমা, কিভাবে লোকান্তরে গেলো
সংগুপ্তি অজানা আজও।
জন্মগৃহের অনতিদূর সেই গৃহ
আমাদের স্মৃতির অলিন্দে নিত্য আনাগোনা তার
শহীদ সাঈফ মীজান সড়ক, নড়াইলের পাশ ঘেসে অবস্থান
সাঈফ ভীলা থেকে তিন মিনিটের হাঁটার দূরত্ব সেই স্মৃতিপ্রভ গৃহ
কতদিন দেখিনা তোমাকে, কতদিন হেঁটে যাইনি পাশের খেলার মাঠে
কতদিন চেখে দেখা হয়নি লাল লাল সুস্বাদু জামরুলের বাল্যসুধা স্বাদ!
পিছে ফেলে যে পথ পরিক্রমা সে পথে কোনদিন, ক্রন্দনেও ফেরা হয় না আর।
———————————————
লালমাটিয়া, ঢাকাঃ এপ্রিল ০৬, ২০২৩