বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা কবির হোসেন এবং বিএএফ শাহীন কলেজের চট্টগ্রাম এর সিনিয়র শিক্ষক রেহেনা পারভীন এর জান্নাত শেল্টার হোম পরিদর্শন ও অনুদান প্রদান:
চট্রগ্রাম থেকে জানাচ্ছেন: জেবুন্নেছা সুইটি।
গতকালকে জান্নাত শেল্টার হোমে অতিথি হয়ে এসেছেন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা কবির ভাই এবং বিএএফ শাহীন কলেজের চট্টগ্রাম এর সিনিয়র শিক্ষক রেহেনা পারভীন আপা সঙ্গে ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে পড়ুয়া এই দম্পতির মেয়ে।
বিকালে আমরা সেল্টার হোমের বাচ্চাদের নিয়ে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সে গেলাম, বাচ্চাদের ঈদের পোশাক কেনাকাটা করার জন্য। ডোনার হয়ে এসেছেন কবির ভাইয়ের পরিবার।
বাচ্চাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কোনোভাবে কাপড় মিলাতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, হানিমুন ব্রান্ডের মালিক ভাইয়ের কথা। উঁকি দিয়ে দেখি সম্মানিত ভাই দোকানেই বসে আছেন। আমার পরিবারের স্যুট শার্ট প্যান্ট বিয়ের সরঞ্জাম তিনার দোকান থেকে বানায়। সেই সূত্রে একটা ভালো সম্পর্ক আছে। আমি সম্মান করে বড় ভাই ডাকি। তিনিও আমাকে বোন ডাকেন। বললাম, ভাইয়া বাচ্চাদেরকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এলাম। কিন্তু, কোনোভাবেই কাপড় মিলাতে পারছি না। আপনি কি আমাকে এমন কোন দোকানে ঠিকানা দিতে পারবেন যেখানে একসাথে আমি ১৮ টা বাচ্চার কাপড় কিনতে পারবো। অমনি বললেন, কই বাচ্চারা নিয়ে আসেন তো। আমি বাচ্চাদেরকে ডেকে ওনার সামনে নিলাম।
তিনি বাচ্চাদেরকে দেখে খুশি হলেন। সালাম বিনিময় করলেন কথাবার্তা বললেন। পরবর্তীতে উনি ওনার একজন কর্মচারীকে বললেন, বাচ্চাগুলার প্যান্ট শার্টের মাপ নাও। যথারীতি সবগুলো বাচ্চার মাপ নেওয়া হলো। ভাই এক জনকে ফোন দিলেন এবং প্যান্ট শার্টের মাপগুলা ফোনে বলছেন। আবার বললেন export quality pant শার্ট রেডি করো। জিন্সের প্যান্ট এবং গেঞ্জি এবং শার্ট। ফোন রাখার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া প্রেমেন্ট?
বললেন, বোন ভাইয়ের কাছে বাচ্চাদের নিয়ে আসছে, আবার প্রেমেন্ট কিসের! আমি তো অবাক। সঙ্গে থাকা কবির ভাইয়ের দম্পতিও হতভম্ব। কবির ভাই হতাশ হয়ে বললেন, আমি আজকে উদ্দেশ্য করে আসছি বাচ্চাদের কেনাকাটা আমি করব। মুরুব্বী বললেন, আল্লাহ আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন তাই আমি সুযোগটা নিয়েছি আজকে। তাছাড়া এই বোনটার সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয়। বোনটা কখনো বলেনি যে এত বড় মহৎ কাজ তিনি করেন। আমার বোনের প্রতি আমার শত গুন শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে । আপনাকে বুঝাতে পারব না। ভাই আপনি আপনার টাকাটা বাচ্চাদের অন্য কাজে লাগিয়ে দেন।
পৃথিবীতে এমন অনেকে আছে দান করা জায়গা খুঁজে পায় না। আজকে একটু সুযোগ নিলাম। বোনটা আমার এ অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন! সত্যি আমি বোনকে সারা জীবন সম্মান করে যাব, বোনের জন্য দোয়া করে যাব।
এমন কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসছে। আসলে ভালো মানুষগুলো এমনই হয়।
তারপর রেহেনা পারভীন আপাসহ বাচ্চাদের টিচারসহ বাহিরে খাওয়া-দাওয়া করলাম। বাচ্চাদের সাথে অনেক আনন্দ করলাম। ছবি উঠালাম। রেহেনা পারভিন আপার মেয়েও বাচ্চাদের সাথে একেবারে বাচ্চা হয়ে গিয়েছিল! সেই দৃশ্যটা আমার এত ভাল লেগেছে কী বলবো, আল্লাহ মেয়েটাকে অনেক বড় করবে, অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে। কবির ভাই বেশ কিছু ফল বাচ্চাদেরকে কিনে দিল এবং বললেন, জেবুন্নেছা আপা, জান্নাত আপা সহ (জান্নাত শেল্টার হোমের প্রতিষ্ঠাতা) আলাপ আলোচনা করে বাচ্চাদের রমজান মাসের খাবারের দায়িত্বটা আমি নিচ্ছি। বললাম, আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ যা করেন সবই মঙ্গলের জন্যই করে এবং মানুষের জন্যই করে। আমারা সবাই উসিলা মাত্র।
পুরা সময়টা বাচ্চারা আনন্দ উৎফুল্লতার সঙ্গে ছিল। সময়ের কিছু ছবি তুলে ধরলাম। আসলে এসব বাচ্চাদের মুখে হাসি দেখেন আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করতে পারবে ন। মন শীতল হয়ে ভিজে যাবে।
আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই বাচ্চাগুলোর জন্য। অনেক স্বপ্ন তাদের তারা, ডাক্তার হবে, খেলোয়াড় হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, একজন বলল সে পাইলট হবে, কেউ শিক্ষক হবে। তাদের আশা যেন পূরণ করে।
আমীন…
নোট: কেউ যদি দান/অনুদান বা যেকোন সহযোগিতার জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন।