১৯০ বার পড়া হয়েছে
ইচ্ছে
ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতেও—
বেঁচে থাকবার ইচ্ছে! গলিত লাভায়—
এক এক করে কতকিছু ঢেকে যাচ্ছে!
আমি ভস্মস্তুপে—কূপে একা পড়ে আছি
এমন সময়ে মুখ ভেংচায় এক মাছি!
পর্বতমালাও ধ্বসে যাচ্ছে!
যেন জীবাশ্ম হবার আগে—
আবারও আমি—ব্রহ্মপুত্রের পলিবিধৌত অববাহিকায়
পায়ে কাদা মেখে—ফসল ফলাতে পারি,
সেই ইচ্ছে জাগে!
শৈবলিনী
শৈবলিনী—
তোমার কাকচক্ষুর মতন নির্মল জল
জলবিহারে এসে খুঁজি
—জলমগ্ন হই।
আমি তো দূরের দরিয়ার কাছে
যেতে পারবো না—
তোমারই কাছে ফিরে ফিরে আসি।
বালুবেলা—
তটপথ পার হয়ে আসি।
তোমারই কুললগ্ন আমি
তোমারই জলকল্লোল চিনি
তোমারই তরঙ্গতাড়নে
তরঙ্গায়িত হই।
জলকাদা মেখে আসি
বর্ষাভেজা হয়ে আসি
কালিঝুলি অবস্থা থাকে না—
অভিলাষ
আমি তো অনেক আগে
আমার দু’চোথ বেঁধে ফেলেছি!
আমি এখন কিছুই দেখি না—
তন্ত্রমন্ত্র এখন নিয়ে যায়
দু’পায়ে হাঁটায়!
অন্ধতার কাছে রেখে দিয়েছি হৃদয়
মস্তিষ্ক তো চোখ বাঁধবার পরপরই
অকেজো হয়েছে!
বুদ্ধি ও বিবেক এখন পাথর—
নাকের সামনে কী গন্ধ লাগানো এক কাঠি ধরা হয়েছে
সেই গন্ধে মাতোয়ারা হলাম আমিও!
কালো কাপড়ে বাঁধানো আমার দু’চোখ—
এখন ভোরবেলায়
সমুদ্র সৈকতে গিয়েও খুলতে পারি না,
সমুদ্র যে দেখবো—
সেইটুকু আগ্রহ ও অভিলাষ নেই!
হু হু করে কাঁদে নদী
ফেলে রাখা নদী
একা বয়ে যাচ্ছে!
নদীর গভীর হতে মাছ উঁকি দেয়
নদীর কি কেউ নেই!
টলটলে জল—কাকচক্ষুর মতন জল
ঊর্মিময় হয়ে
পাথর ও মরুভূমি ভিজিয়ে তুলেছে।
নদীর পরিস্ফুটন মানে
চারণভূমিতে নবাঙ্কুর
মূলরোমে শক্তি
কুসুমকোরক
সেবন্তীর প্রাণ!
জায়ফলের বন থেকে ধানীজমি
কুমড়ো বাগান থেকে শালগমে
কত যে দিয়েছে জল
ফেলে রাখা নদী তার উদার অভ্যাসে!
সেই নদী হু হু করে একা কাঁদে কেন?
কেন তার অশ্রুপাত! এলো কাফন পরানো রাত?
নিজের সমুদ্র
ও মেয়ে—
তুমি বিষণ্ণতায় ভুগছো
কোন্ বদ্বীপে গিয়ে!
একটু হাসো—
টোল পড়ে তোমারও গালে
দূর বেলাভূমিতে কেন থাকবে পড়ে—
তোমার কি উচ্ছলতা নেই?
নিজের গাছের তলায় দাঁড়াও—
অতিক্রম করো বালুকাবেলা,
কোন্ ঘোড়ায় চড়বে—নিজেই চূড়ান্ত করো।
নিজের প্রস্ফুটিত কেতকীনির্যাসে
নিজেকে ফুরফুরে করে রাখো,
আজ অন্তত বিষণ্ণতা ঢাকো।
আছড়ে পড়ো নিজের ঊর্মিমালা নিয়ে
নিজের সমুদ্রে!
অণু পরিবার
আমরা একসময়ে ছোট ছোট এলাকায়, ছোট ছোট
সম্প্রদায়ের সদস্য হয়ে—বসবাস করেছি—দীর্ঘদিন,
বেশিরভাগই ছিলাম পরস্পরের আত্মীয়, এখন তা
আর নেই! আত্মীয়তাবোধ হিমাঙ্কের নিচে চলে
যাচ্ছে, বুদবুদ হয়ে দেখা দিচ্ছে—ডুবে যাওয়া অণু
পরিবার, সেগুলো—বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে কারখানায়,
কর্ম এলাকায়, দূরবর্তী কোনো দেশে! কে হবে কার
পত্নী বা বর কিংবা সঙ্গী, সেটাও অনিশ্চিত, এখন
নিশ্চিত করে বলা যায় না, কখন যে মিটমিট করা
বাতি–জ্বলে উঠবে রাতারাতি!
অধরা
সবকিছু দেখা যায় না, আমার সবকিছু দেখতে
পাবে না! যেমন মহাবিশ্বের মাত্র চার শতাংশ গড়ে
উঠেছে দৃশ্যমান বস্তু দিয়ে, বাকী ছিয়ানব্বই
শতাংশ গঠিত অদৃশ্য, অধরা, রহস্যময় ডার্ক
ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি দিয়ে। তোমারও
সবকিছু দেখা যায় না—গোপন, অদৃশ্য,
অকথিত, অনুক্ত, অউন্মোচিত ও অধরা থেকে
যায়! প্রেমিক জানে প্রেমিকাকে কতটুকু কিংবা
প্রেমিকা প্রেমিককে? অফিসের সহকর্মী যে
তোমাকে সমীহ করে বলে মনে হয়—সেও
ছোবল ও দংশন করার জন্য ভেতরে ভেতরে
তৈরি হয়ে আছে! বসন্তকালে ফোটা গোলাপি
ফুলও—মাদকে রূপান্তরিত হতে পারে!
স্মৃতিকথা
আমাদের স্মৃতিকথা পাওয়া যাবে না, যাদুঘরে
কিংবা গ্রন্থাগারে, পাওয়া যাবে না নথিপত্র ও
চিঠিতে! কষ্ট ও অত্যাচারের কথাও—সেভাবে
জানা যাবে না, যুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিলাম
আমরাও, রক্ত তো আমরা সাধারণেরাই বেশি
দিয়েছিলাম! সেইসব নথিপত্র নেই—যে নথিতে
কিছুটা প্রমাণাদি ছিল, তাও হারিয়ে গেছে, যে
চিঠিটা লিখেছিল পিতা তার পুত্রের কাছে
—‘যাও যুদ্ধে, হাতে অস্ত্র নাও।’ সেইসব ভাষ্য
পাওয়া যাচ্ছে না এখন! ইতিহাসের পাতা ভরাট
করতে পারিনি আমরা, যেমন ভরাট করতে
পারিনি—এখনো আমাদের পেট ও স্বপ্ন! আমরা
তো—যুদ্ধের পরপরই—আগের মতই মাঠে
ও কারখানায় শ্রম দিতে ব্যস্ত থেকেছি!
১ Comment
congratulations