আয়েশা সিদ্দিকা কনক-এর গুচ্ছ কবিতা:
আমার বাংলাদেশ
সূর্যের কিরণ আলো ছড়ায় যে দেশে হেসে হেসে,
সেই দেশে ফড়িং নাচে সবুজ ঘাসে ঘাসে।
দোয়েল পাখি শিস দিয়ে গায় যে দেশের গান,
সেই গানে ভোরে উঠে আমার প্রাণ।
যে দেশের পথে পথে স্বাধীনতার গল্প গাঁথা,
সেই দেশ আমার বঙ্গমাতা।
যে দেশে ভাষার লাগি দিয়েছিলো প্রাণ
কিছু হাসি উজ্জ্বল মুখ।
সে দেশ আমার বাংলাদেশ।
এই দেশে একদিন রাজপথ রাঙিয়ে ছিল লাল রক্তে।
হয়েছিল খালি বুক কিছু দুঃসাহসী মায়ের
যারা দিয়ে ছিলো তাদের সোনামানিক
তাই আজ মোরা বাংলায় কাব্য লিখি।
বাংলায় আনন্দে মাতি, গাই বাংলার গান।
গর্ব করে বলি একুশ আমার প্রাণ।
বিজয়ের সাজ
লাল শাড়ি, সবুজ পাড়
আমি আসলে বাংলার।
আমি পায়ে আলতা পরি
হাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি।
কপালের লাল টিপেতে
সূর্যের তেজ রশ্মি ভরি।
খোঁপায় গুঁজি বেলির মালা,
ভাঙবো সব বন্ধিশালা।
আমি নারী নই অসহায়,
মুখ বুঝে মেনে নেবো না
আর কোনো অন্যায়।
শৈশবের স্মৃতিচারণ
শৈশবের দুষ্টুমিতে পড়াশোনায় করেছি হেলা,
বন্ধুদের সাথে পুতুল খেলায়, বসতো শখের মেলা।
পড়াশোনায় মন ছিলোনা, দেখতাম জানালায় বসে,
কাঁঠাল গাছের পাখীর বাসায়, মা টা যে কখন আসে?
মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে যেতাম শ্রেণী কক্ষে বসে,
ধরা পরলে শাস্তি পেতাম, কান ধরে বারান্দাতে।
সবাই দেখে হাসতো আমায়, বলতো দুষ্টু মেয়ে,
আমি সময়টা পার করতাম, মনে মনে গান গেয়ে।
কেউ কখনো ভেবে দেখেনি, ঘুমাই কেন আমি?
তাহলে শোনো, ঘুমিয়ে গেলেও আমি কিন্তু সব জানি,
সালমা আপা ভূগোল পড়াতো, সোয়েটারের উল বুনি।
বাংলা শিক্ষক নম্বর দিতো, শুধু শুধু লাইন গুনি।
আবার যখন ইংরেজি পড়াতে, আসতো নাজমা আপা,
গল্প পড়াতো আদর করে, হাতে বুলিয়ে যেতো মাথা।
বিজ্ঞান পড়াতে মান্নান স্যার আসতো যখন ক্লাসে,
আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম বৈজ্ঞানিক ছোট ল্যাবে।
সেলিনা আপা প্রেম করতো, অঙ্ক শিক্ষকের সাথে,
শ্রেণী কক্ষে পড়তে বলে, চলে যেতো বারান্দাতে।।
অঙ্ক শিক্ষকের সময় এলে আসতো যেনো জ্বর,
প্রতিদিন এসে বলতো আমাদের নামতা মুখস্ত কর।
একটু উনিশ বিশ হলেই, পড়তো জালি বেতের বাড়ি,
ভয়ে আমরা ভাবতাম বসে, কখন পালাবো বাড়ি?
ইসলামিয়াত পড়াতে এসে কাশেম স্যার যেতো ঘুমিয়ে।
ঘুম ভেঙে গেলে, রেগে গিয়ে দিতো আমাদের খেলা থামিয়ে।
এইবার বলো দোষ ছিলো কার? কার ছিলো অপরাধ?
কার দোষে কে, সাজা পেল ভাই, কে হলো কুপোকাত?
তুমি কে গো নারী
তুমি কে গো নারী,
তুমি কি রবি ঠাকুরের চারুলতা?
যে নিঃস্বঙ্গতায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলো সংগীতের মাঝে।
নাকি তুমি রবিঠাকুরের বিনোদিনী?
যে লড়াই করেছিল বিধবা নারীর অধিকার নিয়ে।
নাকি তুমি রবি ঠাকুরের গিরিবালা?
যে প্রমান করেছে, নারীরাও সাফল্য অর্জন করতে পারে
পুরুষদের উপর নির্ভর না করে।
নাকি তুমি রবি ঠাকুরের মৃণাল?
যে লড়াই করেছিলো নারী স্বাধীনতা নিয়ে,
যাতে নারীরা সমাজে নীরবে, নিঃশব্দে নিঃশ্বাস নিতে পারে।
নাকি তুমি রবি ঠাকুরের কল্যাণী?
যে একজন নির্ভীক এবং একটি স্বাধীন নারী,
যে এতিম মেয়েদের সাথে সম্পর্কের মাঝে,
নিজের সম্পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছিলো।
নাকি তুমি বিধাতার হাতে গড়া একটা পূর্ণাঙ্গ নারী?
যাতে লুকানো একটি পূর্ণাঙ্গ পৃথিবী।