সেই মাটির চাদর
বেড়াতে এসেছি মাত্র!
জগত সংসারে মহাকালের নির্দেশে..
আলোকসজ্জা,শানসৌকত কিচ্ছু যাবে না সাথে,
সব রেখে যেতে হবে নাট্যমঞ্চের সাজঘরে।
ক্ষনিকের ভ্রমণে এসেছি,
পরীক্ষা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে…
এই সাজ পোশাক সোনা গহনা কিছুই যে
যাবে না শরীরে করে!
কি নিয়ে যাবে সাথে করে,
ভেবেছো কি একটি বারও!
সময় যে ভারী অল্প,
কি নেবে গুছিয়ে?
জানাজায় কেড়ে রেখে দেবে।
আর বেড়াতে আসা বলেই
রংদার পোশাক আশাকে ভুলে যাই
যাবার পোশাকের রংটা….
সেই একই পোশাক যা পড়ে এসেছিলাম,
যাবো ও সেই পোশাকে,
তফাৎ থাকবে শুধু
মাটির বাসরে…
আতর আর গোলাপ পানির শওগাত নিয়ে
সাড়ে তিন হাত মাটির চাদরে।
প্রয়োজন ছিলো
তুমিই একদিন বলেছিলে…
জীবনে তোমার মতো একজন
পুরুষ আসার খুব প্রয়োজন ছিলো।
নাহলে…
ভালোবাসার রাজপ্রাসাদটা দেখা হতো না।
ফাগুনের বাতাস কতো মিষ্টি…
সেটা জানা হতো না।
উপলব্ধি পেতাম না…
শ্রাবণের ধারায় একসাথে ভেজার অপার আনন্দের।
নিজেকে ভেঙেচুরে কল্লোলিনী সাগর গড়া হতো না,
বুকের মধ্যে দারুচিনি দ্বীপের সুঘ্রাণ…
কোনো দিন দখিনা বাতাসে ছুটে বেড়াতো না।
তুমি না আসলে…
খাজুরাহোর মিথুন বিভঙ্গের উত্তাপ কোনো দিন…
ছড়িয়ে পড়তো না তনুতটিণী-র কদম্ব উপকুলে।
তারপর,…
দুর্জনের গোপন উপদেশ,
অসত্য পরামর্শ আর সন্দেহ নামের
এক গভীর মন্দ রিপুর তালবাদ্যে
তুমি ই ক্রমশ সরে যেতে যেতে…
অনেক দূরে ঠেলে দিলে আমায়।
আমি এক কালো মেঘের আড়ালে
চলে যেতে বাধ্য হলাম।
প্রয়োজন ছিলো,
খুব প্রয়োজন ছিলো এই চলে যাবারও।
তোমার বৈভবের দিন গুলোতে…
প্রয়োজন ছিলো আমার অনুপস্থিতির।
তোমার রংমশালের আলোয়…
আমার এ মুখ দেখানো ছিলো পাপ।
কিন্তু, আমার কাছে তো
তুমি, তুমিই…
ছিলে,আছো,থাকবে…
সেটা তোমার অজানা নয়।
আমার তিমির রজনীগুলো…
ঘুমহীন কাব্যের স্রোতে
তোমাকেই ভাসিয়ে রাখে,
জাগিয়ে রাখে আমার সত্তায়।
এটারও প্রয়োজন ছিলো।
প্রয়োজন ছিলো আমার অন্তরের সৌরভের
বিকশিত হওয়ার জন্য।
সময় ফুরিয়ে এসেছে…
ফুরিয়ে যাওয়ার সংবাদ যখন তুমি পাবে…
তার অনেক আগেই
ফুরিয়ে গেছে তোমার
বুকের দারুচিনি দ্বীপের দখিনা বাতাস।
নিভে গেছে রংমশালের আলো।
তোমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে…
আমার নিষ্কলুষতার সৌরভ…
জানালা দরজা পর্দায় পোশাকে
আসবাবপত্রে মিশে যাবে।
তোমার চোখের সমুদ্রে…
একটা ছোট্ট ডিঙি ভেসে চলেছে…
দূর থেকে দূরে, আরো অনেক দূরে…
তার গায়ে লেখা নাম
‘দীর্ঘশ্বাস’।
১৪/৯/২২