চলে গেলেন কবি অসীম সাহা:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করা এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা আর নেই। ১৮ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কবি অসীম সাহার জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯, নেত্রকোনা শহরের মামাবাড়িতে। তার বাবা প্রয়াত অখিল বন্ধু সাহা, মা প্রয়াত প্রভা রানী সাহা। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার তেওতা গ্রামে। তবে দার্শনিক পিতার চাকরির সূত্রে মাদারীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু। সেখানেই বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অসীম সাহার লেখালেখি-জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপার মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশাের কবিতা প্রভৃতি লিখে চলেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৫টি । লেখালেখির পাশাপশি বিগত আটচল্লিশ বছর ধরে তিনি দেশের মূলধারার পত্রিকাসমূহে সাংবাদিকতাও করে আসছেন। শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ এই কবি-শিল্পী এ-পর্যন্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্যপুরস্কার, আলাওল সাহিত্যপুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার, রূপসী বাংলা পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ), কোলকাতা আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার এবং আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্যপুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মারক-পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা ও টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক।
সামগ্রিকভাবে সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ
পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায় (১৯৮২)
কালো পালকের নিচে (১৯৮৬)
পুনরুদ্ধার (১৯৯২)
উদ্বাস্তু (১৯৯৪)
মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি (২০০১)
অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব (২০০৬)
মুহূর্তের কবিতা (২০০৬)
Refujee and the festval of death in darkness (২০১০)
সৌর-রামায়ণ (২০১১)
অক্টাভিও পাস ও ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা (অনুবাদ) (২০১১)
কবর খুঁড়ছে ইমাম (২০১১)
প্রেমপদাবলি (২০১১)
পুরনো দিনের ঘাসফুল (২০১২) (কবিতা)
প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা (১৯৭৬)
অগ্নিপুরুষ ডিরোজিও (১৯৯০)
উদাসীন দিন (উপন্যাস) (১৯৯২)
শ্মশানঘাটের মাটি গল্প (১৯৯৫)
কিলের চোটে কাঁঠাল পাকে (২০০২)
শেয়ালের ডিগবাজি (২০০৭)
হেনরি ডিরোজিও (২০১০)।
কেউ তো আসেনি কাছে, কেউ তো দেয়নি মুখে একবিন্দু জল,
কেউ তো বলেনি ডেকে, ‘এখন কেমন আছো?’ শুধু অবিরল
চোখ বেয়ে নেমে গেছে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুকণা, আর চোখে ঘুম,
শূন্য থেকে নেমে এসে আমাকে দিয়েছে শাস্তি, দিয়েছে হুকুম :
আর কটা দিন থাকো, তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো যেখানে নেবার,
এখনো হয়নি কিছু, শুধু কিছু বাকি আছে সাক্ষ্য দেবার।
তারপর তোকে আমি শান্তি দেবো, চিরজীবনের মতো শান্তি পাবি তুই,
এবার ঘুমিয়ে পড়্, আমিও দু’চোখ বুজে তোর কাছে শুই।
তারপর শেষরাতে একদিন চার কাঁধে আমরাই নিয়ে যাবো তোকে,
কাঁদবে মানুষ,আর কাঁদবে প্রেয়সী তোর,সন্তানেরা কাঁদবে খুব শোকে।
তবুও যেতেই হবে, মানুষের এই তো নিয়তি আর এই তো সে-গান,
সময় হলেই তবে দেহ থেকে উড়ে যাবে পাখির পরান।
– অসীম সাহা
( কবিতা: মৃত্যু -৫)