২৫২ বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন
বাংলাসাহিত্যের বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন’র ৭৬তম জন্মদিবসে ফুলেল শুভেচ্ছা:::
বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮০)
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৯৭
একুশে পদক (২০০৯)
স্বাধীনতা পদক (২০১৮)
ড: মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯)
আলাওল সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৮১
ফিলিপস্ সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৯৪
ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক – ২০০৯
সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার – ২০১৮
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ শাখায় পঙ্খিরাজ থেকে প্রকাশিত অপেক্ষা গ্রন্থের জন্য পাঞ্জেরী ছোটকাকু আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার – ২০১৯
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার – ২০১৮
সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)
সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক, গবেষক এবং প্রাবন্ধিক। বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রচিত উপন্যাস পড়ানো হয়।
সেলিনা হোসেনের পৈতৃক নিবাস বর্তমান লক্ষ্ণীপুর জেলার হাজীরপাড়া গ্রামে।। বাবা এ কে মোশাররফ হোসেন ছিলেন রাজশাহী রেশম শিল্পকারখানার পরিচালক। মা মরিয়মন্নেসা বকুল ছিলেন গৃহিণী।
ছেলেমেয়েরা কে কোথায় পড়াশুনা করবে তার সিদ্ধান্তও নিজেই নিতেন মা। সেলিনা হোসেনের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে।
বাবার কর্মস্থল বগুড়ায় তার শৈশব কেটেছে। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় বগুড়ার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বগুড়ায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। বাবার বদলির চাকরির কারণে এরপর তারা রাজশাহীতে চলে আসেন। এখানে এসে রাজশাহীর পি এন গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর রাজশাহী মহিলা কলেজে আই এ ক্লাসে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন এই কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
তার লেখালেখির শুরু ১৯৬৪ বা ১৯৬৫ সালের দিকে। রাজশাহী কলেজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী আন্তঃবিভাগীয় সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তিনি এই প্রতিযোগিতায় গল্প লিখে প্রথম হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ গোল্ড মেডেল পান। বিষয়গুলো ছিল বাংলা ও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, ছোট গল্প লেখা, ইংরেজিতে নির্ধারিত বক্তৃতা। এ বছরই রাজশাহী মহিলা কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসের নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করেন। তারা সেলিনা হোসেনকে ‘মেহেরজান’-এর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য নির্বাচিত করেন। এটা ছিল তার জীবনের প্রথম অভিনয়। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঢাকার ‘পূবালী’ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। ড. মাযহারুল ইসলাম, ড. জিলস্নুর রহমান সিদ্দিকী এবং ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সম্পাদনায় ‘উত্তর অন্বেষা’, ‘পূর্বমেঘ’ এবং ঢাকার ‘মাহে নও’, ‘পূবালী’ পত্রিকাতে তার লেখা ছাপা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে তিনি রাজনীতিতে অংশ নেন। তিনি ছাত্রী ইউনিয়নে (মতিয়া গ্রম্নপে) যোগ দেন। দলের পক্ষে সভা-মিছিলে অংশ নেন। তিনি মন্নুজান হলের ছাত্রী সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের দু’বার সহকারী কমনরুম সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদ বছরে একবার সাহিত্য প্রতিযোগিতার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। তিনি ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করাসহ নাটকে অভিনয় করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় চারবার চ্যাম্পিয়ন হন। সেলিনা হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকাতে উপসম্পাদকীয়তে নিয়মিত লিখতেন। ১৯৭০ সালে দুটো চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য চিঠি পান। একটি বাংলা একাডেমিতে অন্যটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে সরকারি কলেজের জন্য।
বাংলা একাডেমির চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন বাংলা একাডেমির তৎকালীন পরিচালক কবীর চৌধুরী, ড. মুহম্মদ এনামুল হক, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, আবদুলস্নাহ আলমুতী শরফুদ্দীন প্রমুখ। তিনি বাংলা একাডেমিতে গবেষণা সহকারী পদের জন্য ইন্টারভিউ দেন। একই দিনে একই সময়ে সেখানে পান্ডুলিপি পাঠক পদেও ইন্টারভিউ হচ্ছিল। ড. মুহম্মদ এনামুল হক তাকে বললেন, ‘পুথি পড়তে পার?’ তিনি বলেন, ‘পারি।’ ড. মুহম্মদ এনামুল হক সেলিনার দিকে তাকিয়ে চারশত বছর আগের পান্ডুলিপি ঠেলে দিয়ে বললেন ‘পড়ো।’ সেলিনা সুর করে পুথি পড়ে শোনান। কারণ এম এ ক্লাসে তাদের পুরনো পান্ডুলিপি পাঠ করা শেখানো হতো। ভীষণ রাগী পন্ডিত মানুষ ড. মুহম্মদ এনামুল হক তার নির্ভুল পাঠ শুনে এমন একটি হাসি দেন- যা সেলিনা কখনো ভুলেননি। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রবন্ধটিও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর পাশাপাশি পাবলিক সার্ভিস কমিশনে সরকারি কলেজের চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বোর্ডে শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে পান। কলেজের চাকরিটাও তার হয়। তাকে পোস্টিং দেওয়া হয় সিলেটের এম সি কলেজে। সে সময়ে তার ছোট মেয়ে লারার বয়স দু’মাস থাকায় তিনি কলেজের চাকরিটি গ্রহণ না করে সরকারি কলেজের থেকে অর্ধেক বেতনে বাংলা একাডেমীর চাকরিটিতে যোগদান করেন।
বাংলা সাহিত্যের ধারায় সেলিনা হোসেন সত্যিকারে নির্মাণ করেছেন নিজস্ব একটা ভুবন। সাহিত্যিক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে তিনি কখনো ভুলে যাননি। ফলে তার সব রচনার পশ্চাতেই একটা সামাজিক অঙ্গীকার, একটা প্রগতিশীল ভাবনা থাকে।
উপন্যাস
সম্পাদনা
উত্তর সারথি (১৯৭১)
জলোচ্ছ্বাস (১৯৭৩)১ম উপন্যাস
জ্যোস্নায় সূর্যজ্বালা'(১৯৭৩) (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
হাঙর নদী গ্রেনেড'(১৯৭৬)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
মগ্ন চৈতন্যে শিস (১৯৭৯)
যাপিত জীবন (১৯৮১) (ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক)
নীল ময়ূরের যৌবন (১৯৮২)
পদশব্দ(১৯৮২)
চাঁদবেনে(১৯৮৪)
পোকা মাকড়ের ঘরবসতি(১৯৮৬)
নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি(১৯৮৭)(ভাষা আন্দোলন ভি.)
ক্ষরণ(১৯৮৮)
কাঁটাতারে প্রজাপতি(১৯৮৯)
খুন ও ভালোবাসা(১৯৯০)
কালকেতু ও ফুল্লরা(১৯৯২)
ভালোবাসা প্রীতিলতা(১৯৯২)
টানাপোড়েন(১৯৯৪)
গায়ত্রী সন্ধ্যা-১ম খণ্ড(১৯৯৪)
গায়ত্রী সন্ধ্যা-২য় খণ্ড(১৯৯৫)
গায়ত্রী সন্ধ্যা-৩য় খণ্ড(১৯৯৬)
দীপাম্বিতা(১৯৯৭)
যুদ্ধ(১৯৯৮)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
লারা(২০০০)
কাঠ কয়লার ছবি(২০০১)
মোহিনীর বিয়ে(২০০১)
আণবিক আঁধার(২০০৩)
ঘুমকাতুরে ঈশ্বর(২০০৪)
মর্গের নীল পাখি(২০০৫)
অপেক্ষা(২০০৭)
দিনের রশিতে গিটঠু(২০০৭)
মাটি ও শস্যের বুনন(২০০৭)
পূর্ণছবির মগ্নতা(২০০৮)
ভূমি ও কুসুম(২০১০)
যমুনা নদীর মুশায়রা(২০১১)
আগস্টের একরাত(২০১৩)
গেরিলা ও বীরাঙ্গনা (২০১৪)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
দিনকালের কাঠখড়(২০১৫)
গল্প
উৎস থেকে নিরন্তর(১৯৬৯)
জলবতী মেঘের বাতাস(১৯৭৫)
খোল করতাল(১৯৮২)
পরজন্ম(১৯৮৬)
মানুষটি(১৯৯৩)
মতিজানের মেয়েরা(১৯৯৫)
অনূঢ়া পূরণিমা(২০০৮)
সখিনার চন্দ্রকলা(২০০৮)
একালের পান্তাবুড়ি(২০০২)
অবেলার দিনক্ষণ(২০০৯)
নারীর রূপকথা(২০০৯)
নুনপান্তার গড়াগড়ি(২০১৪)
মৃত্যুর নীলপদ্ম(২০১৫)
কবিতা
বর্ণমালার গল্প
শিশু-কিশোর সাহিত্য
সাগর(১৯৯১)
বাংলা একাডেমী গল্পে বর্ণমালা(১৯৯৪)
কাকতাড়ুয়া(১৯৯৬)
বর্ণমালার গল্প(১৯৯৭)
আকাশ পরী(২০০১)
অন্যরকম যাওা(২০০১)
যখন বৃষ্টি নামে(২০০২)
জ্যোৎস্নার রঙে আঁকা ছবি(২০০২)
মেয়রের গাড়ি(২০০৩)
মিহিরুনের বন্ধুরা(২০০৪)
রংধনু (সম্পাদনা) (২০০৪)
এক রুপোলি নদী(২০০৫)
গল্পটা শেষ হয় না(২০০৬)
বায়ান্নো থেকে একাত্তর(২০০৬)
চাঁদের বুড়ির পান্তা ইলিশ(২০০৮)
মুক্তিযোদ্ধারা(২০০৯)
সোনারতরীর ছোটমণিরা(২০০৯)
পুটুসপুটুসের জন্মদিন(২০১০)
নীলটুনির বন্ধু(২০১০)
কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ(২০১১)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
ফুলকলি প্রধানমন্ত্রী হবে(২০১১)
হরতালের ভূতবাবা(২০১৪)
প্রবন্ধ
স্বদেশে পরবাসী(১৯৮৫)
ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন(১৯৮৫)
একাত্তরের ঢাকা(১৯৮৯)
নির্ভয় করো হে(১৯৯৮)
মুক্ত করো ভয়(২০০০)
ঘরগেরস্থির রাজনীতি(২০০৮)
নিজেরে করো জয়(২০০৮)
প্রিয় মুখের রেখা(২০১০)
শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ(২০১০)
পথ চলাতেই আনন্দ(২০১৪)
সম্পাদনা
নারীর ক্ষমতায়নঃ রাজনীতি ও আন্দোলন (যৌথ) (২০০৩)
ইবসেনের নারী(২০০৬)
ইবসেনের নাটক ও কবিতা(২০০৬)
জেন্ডার বিশ্বকোষ (যৌথ) (২০০৬)
বাংলাদেশ নারী ও সমাজ (যৌথ) (২০০৭)
জেন্ডার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (যৌথ) (২০০৭)
সাহিত্যে নারীর জীবন ও পরিসর (যৌথ) (২০০৭)
জেন্ডার আলোকে সংস্কৃতি (যৌথ) (২০০৭)
পুরুষতন্ত্র নারী ও শিক্ষা (যৌথ) (২০০৭)
দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী গল্প(যৌথ) (২০০৮)
জেন্ডার ও উন্নয়ন কোষ(২০০৯)
ধান শালিকের দেশ (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর পত্রিকা, ২২ বছর)
ছোটদের অভিধান (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত) (অন্যতম সম্পাদক)
ইংরেজিতে অনূদিত উপন্যাস
Selected Short Stories of Selina Hossain (2007). Published by Bangla Academy.
The Shark The River & The Grenade(1987) Published by Bangla Academy. Translated by Abedin Kader.
Warp and Woof (1999). ‘টানাপোড়েন’ উপন্যাসের অনুবাদ। Published by Bangla Academy.
Plumed Peacock (1st Published -1983. 2nd published -2009).’নীল ময়ূরের যৌবন’উপন্যাসের অনুবাদ। Translated By Kabir Chowdhury.
Fugitive colours (2010)