একটুকু ছোঁয়া লাগে।
লাবণ্য সীমা।
আমি ছুটে চলছি অজানা এক গন্তব্যে। আমি চলছি আমার সাথে সাথে সব চলছে রাস্তার পাশে সারি সারি গাছপালা। পশু পাখি গাড়ি সব সব। হঠাৎ পথ থমকে গেলো, আমি দূর আকাশে দুচোখের পাপড়ি গুলোকে পূর্ণ মেলে ধরলাম। কি যে খুঁজে চলেছি তা নিজের অনুভবে মেলাতে পারছি না। খুব বেশি দিনের পরিচয় না এই মাত্র ক’দিন। সৌম এর মধ্যে ই আমাকে অনেক টা জয় করে ফেলেছে। আমি ঢাকার বাইরে যাবো শুনেই বললো, এই মেয়ে আমায় সাথে নেবে।তোমার নিরব পথ চলার একটু অংশী হতে চাই।এই একটু পাখিদের মতো।খেয়ালী গাছের মতো।মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছে আবার ওর এই বায়নাটুকু খুব ভালো লাগলো। বললাম তোমার ইচ্ছে আমি জোর করবো না।
ব্যাস হয়ে গেলো। ঠিক সময় মতো হাজির হয়ে গেলো।একটু অবাক হলাম বটে তবে খারাপ লাগলো না। কেমন যেনো একটু ছুঁয়ে গেলো মনটাকে। যেমন মাঝে মাঝে কিছু হাওয়া হিম হিম দোলা দিয়ে মনকে শীতল করে দেয় ঠিক তেমন। আমি আগে টিকিট কাটিনি কারণ আজ সারাদিন দিন কাজ আর কাজ। রাজশাহী যাওয়াটাও খুব জরুরি। সন্ধ্যায় রওনা দিলাম। আমি গিয়ে পরের বাসে কোনও টিকিট পেলাম না। তারপরের বাস টা ৭ টায়, কি আর করা তখনই কাটলাম।আমি যখন টিকিট কনফার্ম করছি ঠিক তখন সৌম হাজির।দুটো টিকিট কাটলাম।মনের ভিতর লাড্ডু ফুটছে। একা একা বোরিং জার্নি হতো। সৌম আসাতে সেটা হবার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। সারাক্ষণ বক বক করতে পারে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর গাড়ি আসলো।আমরা গাড়ি তে পাশাপাশি বসলাম। সৌম প্রথম কয়েক ঘন্টা খুব আড়ষ্ট হয়ে বসে রইলো। দেখলাম খুব আনইজি ফিল করছে। আমি বললাম, সৌম তুমি আরাম করে বসো। লং জার্নি তে ওতো আড়ষ্ট হয়ে বসতে হবে না।ওর মুখ দেখে মনে হলো আমার এই কথা শুনে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। শুরু হলো ওর গল্প। ওর যে কত গল্প পেটে জমা আছে একটার পর একটা বলেই চলেছে। বাসে উঠলেই আমি ঘুমিয়ে যাই। আজ ঘুম নেই। রাত বাড়ছে বাইরে হিম হিম ঠান্ডা বাতাস বহিছে। ঢাকার গরমে অতিষ্ঠ জীবন। তাই এই মিষ্টি মিষ্টি ঠান্ডা আবওহাওয়া খুব ভালো লাগছে।সৌম কেও হঠাৎ করে অনেক টাই ভালো লাগছে। ওর মাঝে এখনও জড়তা, আড়ষ্ঠ ভাব।শক্ত হয়ে বসে আছে যেনো আমার গায়ে ওর গা লেগে না যায়। আমি আবারও বললাম কোনও সমস্যা। না মানে লং জার্নি তে এমন শক্ত হয়ে বসে যেতে একটু খারাপ লাগছে। আমি হাসলাম আর বললাম তা কে বলেছে এমন আড়ষ্ট বসে থাকতে টেক ইজি। ও যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ওর আচরণ দেখে মনে মনে হাসলাম আর বললাম পাগল।
গাড়ি চলছে, সৌম সাহস করে আমার হাতটা ধরলো আমিও ছাড়িয়ে নিলাম না। সৌম আমার চেযে বয়সে খুব বেশি বড় নয় তিন চার হতে পারে। বেশ সুন্দর দেখতে। হঠাৎ সৌম বললো জানো বণ্যা আমার জীবনে একটা প্রেম এসেছিলো ভালোলেগেছিলো একটি মেয়েকে।তাই নাকি বাহ বেশ। কেভালো লেগেছে বলে হাতটি ছাড়িয়ে নিলাম।অনেক টা পথ চুপচাপ কেটে গেলো।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখি আমি সৌমের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি।ও আমার মাথাটা আলতো করে ধরে রেখেছে আর নিজেও ঘুমাচ্ছে। আমি সরে যেতে চাইলাম কিন্তু সৌম যেতে দিলো না বললো থাকো না আমার ভালো লাগছে।বেশি কিছু তো চাইবো না এইটুকু না হয় দিলে আমায়। আমি কিছু বললাম না।সৌম বললো বণ্যা তোমার কি একটু ও ভালো লাগেনি। আমি বললাম কেনো লাগবে না। সৌম আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো আমার এইটুকু পেলেই চলবে। আমাদের পথ প্রায় শেষের দিকে। সৌম চুপ করে আছে।বললাম কি হলো? ও বললো কষ্ট হচ্ছে পথ তুমি আরো প্রসারিত হও আমি আমার বণ্যাকে আরো কিছু সময় আমার পাশে এভাবেই পেতে চাই। আমি বললাম তুমি আসলেই একটা পাগল। বলতে বলতে মেনেজার বলে উঠলো আপা আপনি কোথায় নামবেন বললাম সামনেই রেলস্টেশনের সামনে। সৌম কাজলা ওর খালার বাসায় উঠবে কিন্তু ওখানে সে নামে নাই। আমাকেজ নামিয়ে তবে সে যাবে। আমি নেমে গেলাম বাসা রাস্তার পাশেই। সৌম চলে গেলো। পরেরদিন আমার অনুষ্ঠান। অনেক রাত রুমে গিয়ে একটু ফ্রেস হয়েই শুয়ে পরলাম কারণ ভোরে উঠতে হবে। ঘুম ভাঙ্গলো। ভাসুরের মেয়েটা অনেক লক্ষ্মী মেয়ে। আমার জাও অনেক ভালো। ভোরে উঠেই আমার নাস্তা চা সব ঢেকে রেখেছেন। জা একটা কলেজে জব করেন। তাই সব রেডি করে সে কলেজ চলে গেলো।
আমি শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে গেলাম। নাস্তা শেষ করে আমি ক্যাম্পাস চলে গেলাম। চিহ্ন মেলা মুক্ত সাহিত্য পত্রিকা লিটিল ম্যাগাজিন দুই বাংলা উৎসব। ওপার বাংলার সম্পাদক লেখকদের সাথে পরিচয় হয়ে অনেক ভালো লাগলো। সারাদিন খুব আনন্দে কাটলো। এই অনুষ্ঠানের সহ সভাপতি বিহঙ্গ কৃষ্ণ দাদার সাথে পরিচয় হলো। আগে ফোনে কথা হয়েছিলো। দাদা লাঞ্চ করালো। বিকেলে মুক্ত মঞ্চে আমার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করলাম। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখলাম।সৌম ওর কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় এলো। একটু অভিমান হয়েছিলো। রাজশাহী আসার পর একবারও নক দেয়নি। আর এখনোও এলো সারাদিন পর।আমি কথা বললাম না দেখে ও বুঝলো আমার মনের কথা।সৌম নিজে থেকেই বললো বণ্যা তুমি মন খারাপ করো না । আমি জানি তুমি আমাকে মিস করেছো কারণ এই অনুষ্ঠানে তুমি কাউকে চিনো না আমি সাথে থাকতে পারলে তোৃার আনন্দ টা, দ্বিগুণ হতো।কিন্তু আমি এখানে এসে কাজে আটকে গেলাম। খালামনি অনেক গুলো কাজ দিলো যা শেষ করতে সময় লেগে গেলো। আমি তো বলতে পারছি না ক্যাম্পাসে এক সুন্দরী আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওর কথা শুনে আমি অট্টহাসি তে ফেটে পড়লাম। সৌম বললো ওতো হেসো না সুন্দরী দাত পড়ে যাবে। পরে আমরা একটু ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে আসলাম। এভাবেই আমাদের দুদিন কেটে গেলো।
পরের দিন রাতেই সৌমের জ্বর আসলো ।অনেক জ্বর ১০৪°.। ও কথাও বলতে পারছে না।খুব খারাপ লাগছিলো ছেলেটা এতটা সময় দিলো অথচ অসুস্থ অবস্থায় ওকে দেখতে যেতেও পারলাম না। কারণ আমি ওদের পরিবারের কাউকে চিনি না। আর আমাকেও ফিরতে হবে। পরীক্ষা আছে। তাই ফোনে বিদায় নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দিলাম। একা একা ফিরছি খুব খুব খারাপ লাগছে।পাশের সিটটি ফাঁকা। আমি ডাবল সিট নিয়ে যাচ্ছি। হোটেলেও নেমেও সৌমকে মিস করলাম।মাত্র কয়েকদিনেই ছেলেটা আমার মনের অনেক টা জায়গা দখল করে নিয়েছে। একটা ফোন দিলাম। ফোন বাজছে কিন্তু ধরলো না কেউ।মনে হয় ঘুমাচ্ছে। আমি ঢাকায় চলে আসলাম।যান্ত্রিক জীবন শুরু।