আত্মতৃপ্তি
তরুলতা সুন্দরী বৃক্ষকে পছন্দ করতো। সুন্দরী বৃক্ষ ও তরুলতাকে ভীষণ ভালোবাসতো। হায়! সুন্দরী বৃক্ষের অভিযান ছিল মঙ্গল গ্রহে। সমস্ত কিছু জয় করে তরুলতাকে নিয়ে জড়িয়ে থাকবে এই আশায়, কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস এক ঝড়ে শিমুলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় তার জীবন যাত্রা মানও গতিপথ পাল্টে গেল।
আর কোন দিন তার সাথে কথা বা দেখা হয়নি। দিন যায় মাস আসে এভাবে বছরের পর বছর চলে যায়। তরুলতা শিমুলকে নিয়ে চলতে থাকে ভুলে গেছে তার ইচ্ছে গুলো। ভুলে গেছে সেই দিন গুলো ভুলে গেছে তার স্বপ্নের এক মূহুর্তে আনন্দ উল্লাস।
হঠাৎ অনেক দিন পর,
তরুলতা আকাশের দিকে নজর দিতেই খেয়াল করে গাছের ফাঁকে অসম্ভব আলোর ছটা, গোলাকার দেহ, নিষ্পাপ মিষ্টিরিয়াজ হাসি মুখ।
তখনই তরুলতা নিজের দিকে নজর দিতেই , দেখলো তরুলতার দেহে ছোট ছোট ছিদ্র, কমলতা হারিয়ে যাচ্ছে নীল রং এ ধাবিত হচ্ছে। শিমুলের আত্ম তৃপ্তি খুঁজতে যেয়ে তরুলতার আত্ম তৃপ্তি হারিয়ে ফেলেছে।
শিমুল তার সমস্ত স্বপ্ন পূরণে , আনন্দে বিমোহিত,,, সমস্ত পাহাড়,পর্বত, নদী সমুদ্রের দিকে অগ্রযাত্রা শুরু করে, আরও ভাবতে থাকে সেও মঙ্গলে অভিযান করবে।
চারিদিকে শিমুলকে দেখে অনেকে ভাবতে থাকে এই সেই শিমুল। যে শিমুলের কোন কমললতা নেই, নাই কোন হাসির হাসিমুখ, নাই সমুদ্রের হিল্লোল, নাই সাদা মেঘের ভেলায় খেলায় মেলায় আনন্দ উচ্ছাস।
নেই কোন অনুভূতির ছোঁয়ায় উত্তাল ঢেউয়ের মতন উল্লাস।
তার আজ এতো মূল্য?
শিমুলের স্বপ্ন গুলো অসাধারণ হয়েছে,
যা মূল্য মর্যাদায় সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় কেউ তো তার পাশেই পাশে ছিল।
কিন্তু হায়!
শিমুল কখনো তরুলতার দিকে নজর দিত না তাকিয়ে দেখেনি তরুলতার সবুজ পাতা চিকন লতা কমলতায় ভরে ছিল।
বুঝতে চাইনি তরুলতার আত্ম তৃপ্তির ভাষা,
তরুলতা ও তাকে কোন দিন সারা দেয়নি বলেনি তার ভাষা। তরুলতা শুধু তাকিয়ে ছিল অন্ধরাতের জোছনার আলো দিকে গাছের ফাঁকে ফাঁকে।
মন ছিল সমুদ্রের তলদেশের এক রাজপ্রাসাদে। কখন তরুলতা একা হয়ে গেছে তখনই বুঝতে পারেনি। তরুলতা কবিতায় মনের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে।আর লিখতে থাকে,,,,
আমি আমাকে দেখি ঐ গাছের ফাঁকে
জোছনার ছটা খুঁজে পাই অন্ধকার রাতে।
তুমি কোথায়?
আমি আছি একাকিত্বের সাথে,,
ভুলে গেছি তোমায়,,,,
আজ মনে হচ্ছে বারবার এই জগতে।
তোমায় কি মনে পড়ে?
যদি থাকতে আমার পাশে,
আমি ভাসতাম নীল সাগরে,,
কখনো নীল সাগরে নিমজ্জিত হতাম,
তুমি হতে মুক্তোর খোলস আর আমি হতাম মুক্তমালা
দু’জন দুজনার অবদানে গল্পের কাহিনী বানাতাম।
আবারও কখনো আকাশে বাতাসে,
উড়ন্ত বলাকা হয়ে পড়ন্ত বিকেলে উড়ে বেড়াম।
চন্দ্রের হাসিমুখ দেখে মনে পড়ে ঐ অজস্র হাসি,
সাদা মেঘ হার মেনেছিল বলেছিল রাশিরাশি।
এই ভাবে তরুলতা কবিতায় আনন্দ দিন কাটাতে চেষ্টা করে নিজেকে বাঁচাতে। তার সবুজের আড়ালে আরও গাঢ় সবুজ ফিকে হতে থাকে, তবে তরুলতা চাই রং তার ভিন্ন ধরনের হোক, হলুদ, লাল,নেভিব্লু আরও গাঢ় রং।
হঠাৎ তরুলতার আত্মায় আগ্রহ জাগলো,,,
সাদা মেঘকে জিজ্ঞেস করে, ও সাদা মেঘ!
বলোতো সুন্দরী বৃক্ষ কোথায় থাকে?
তুমি তো সব জায়গায় যাও কোথায় তার বাস।
সাদা মেঘ বললো সে মঙ্গলে গেছিলো কিন্তু জয় হয়নি সে নতুন গ্রহে আছে নেপচুনের কক্ষপথ পেরিয়ে বুধে আছে,
এক বেগুনি তরুলতাকে নিয়ে।
সবুজ তরুলতা খুশি হলো,
সাদা মেঘ বললো এতো খুশি কেন?
সবুজ তরুলতা বললো আমি সবুজের আড়ালে আরও গাঢ় সবুজ আমাকে ভোলা এতো সহজ হবেনা।
যতই বেগুনি রং সুন্দরী হোকনা কেন আমি রাজ্যের রানী।
সারা পৃথিবীতে সবুজের মাঝে সবাই জড়াতে চাই। সাদা মেঘ বললো সে তোমাকে শিশির বিন্দু বিন্দু কনা বরফে মোড়া পাঠিয়েছিল।
কেন তুমি পাওনি ?
একটু হেসে তরুলতা বললো হয়তো আসতে আসতে গলে গেছে।
আমি রোদ্রের প্রকট তাপে থাকি, সূমদ্রের ঢেউএর উপরে চলি ঝাঁঝালো হাওয়ায় নিষ্সাস নিই, শুধু মিষ্টি হাওয়ায় ঐ গগণে জোছনার আলো দেখি, কবিতার মধ্যে ডুবে থাকি, সাহিত্যের রাজ্যে বসবাস করি।
তাহলে তোমার আত্মা?
আমার আত্মা ঐ সূমদ্রের তলদেশ হারিয়ে গেছে।
তবে সুন্দরী বৃক্ষ?
সে আমার প্রেরনা।
আর শিমুলের অস্তিত্ব? সেতো আমার শক্তি।
প্রেরনায় শক্তির উৎস খুঁজে পেয়েছি আর শক্তির উৎসে প্রেরনাকে মনে রেখেছি। প্রেরনা আমার প্রথম প্রেম, প্রথম সকাল, সূর্য উঠার আলোর ছটা।
শক্তি আমার সাহসা মন বেঁচে থাকার উৎস, জীবন উল্লাসী সবুজবীথি সাত রং গায়ে অনুভব।
প্রেরনা আমার সাদা মেঘের ভেলা,
সমুদ্রের তলদেশের রাজপ্রাসাদের রাজা।
শক্তি আমার সাহসা রাজ্যের রাজা,
সবুজ রাজপ্রাসাদের মহারাজা। অরন্যের বন্ধু আমার মিষ্টি হাওয়া কুয়াশার চাদরে ঢেকে রাখা চাদর।
এই বলে তরুলতা হুহুঙ্কার করে কাঁদতে থাকে বলতে থাকে সবাই নিজের স্বর্থ বুঝে। কেউ আমাকে ভালোবাসেনি আমি শুধু শুধু অকারণে হয়রানি হয়েছি।
তবে,
আমি তরুলতা সবুজের আড়ালে আরও গাঢ় সবুজ। কখনো হারতে শিখেনি জয় করতে শিখেছি। শিখেছি সকল পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে,
শিখেছি অনন্য রূপে পরিবর্তন হতে।
শিখেছি সবার মাঝে ছড়িয়ে থাকতে।
শিখেছি সকল দুঃখের মাঝে সুখ পেতে।
শিখেছি নিজের খুশি শুধু শুধু নিজের হাসিতে টিকিয়ে রাখতে।
তাই তরলতা চলতে থাকে নিরবতায় অভিমানের এক নীল গগনের নিচে নীল সাগরে নিমজ্জিত মুক্ত মালা হয়ে। কেউ তাকে ধরতে পারবেনা। কাঁচের ঘরের মধ্যে এক রাজপ্রাসাদে বন্দি।
তার রুপোলী চেহারা চন্দ্র তারার মধ্যে সবাই দেখতে পাই।
সকলে দেখে খুশি হয় সুন্দরী বৃক্ষ ও শিমুল ফাঁকি দিলেও তাকে সমগ্র ভালোবাসে।এই ভালোবাসা নিয়ে আবারও নতুন করে বাঁচতে শেখায় জীবন যাত্রা মানও ও গতিপথ।
তসলিমা হাসান
কানাডা,২৬-০৯-২০২২
২ Comments
Probol attoprottoy er prokash.ak osadharon loraku.oviman thakle o samne cholar sokti onek.Torulota hoyea uthuk nijer gotite Sahoshi r proggamoy.torulota r bijoy tar vabna r sokioyotay.
onek vslo laglo .
অসাধারণ! ক্লাসিক!
(তবে কিছু টাইপো রয়েছে। সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।)