একা ।। জাহানারা বুলা।। তোমার-আমার মত প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা শুধু লীন হয়ে যায় পতিত গতির সাথে মৃত্তিকায়- আমরাও তা’ই। হলুদ দিনের শেষে ধূসর রাত্রি আমাদের পতন দেখে নিশুতির ডাক একান্ত করে তারও কামনার স্ফুরণ ঘটাবে বলে ভোরের সুগন্ধি বাতাসের সাথে। ভালোবাসা বালুকণাও বোঝে সমুদ্র ছুটে আসে তাই বেলাভূমির কাছে। একা থাকা অপেক্ষা শুধু মিলেমিশে গলে পড়ার আকাঙ্ক্ষা বুকে। ঢাকা।
Author: প্রতিবিম্ব প্রকাশ
আমাকে চিনবেন অমিত’দা আপনি আমাকে চিনবেন অমিত’দা। বেশিদিন আগের কথা তো নয়; এই মাস কয়েক; আমরা পাশাপাশি… ছিলাম না কোন ভাবেই একে অন্যের পরিচিত। নির্দিধায় মানবিক হয়ে উঠেছিলাম তবু। যখন স্বজনের ভারি বোধ, চিন্তা-আক্রান্ত মুখ, যখন ডাক্তার, নার্স, ভেন্টিলেশনের হাহাকার, যখন অবুঝ মৃত্যুর বায়না দোরগোড়ায়; আমরা একে অন্যের মায়া ছুঁয়ে ছিলাম। অক্সিজেন আহাজারিতে এক বেডে শুয়ে- দু’দুটো বিভীষিকা রাত পর আমি এলাম; পেছনে আপনি। গঙ্গার জল ঘোলা হয়েছে অস্থি-মজ্জা, হাড়ের ছাইয়ে। দু’জনার চোখে তবু একফোঁট জল ছিল না। মনে কি পড়ে আপনার- আমরা মায়া ছুঁয়ে ছিলাম? আর যেও না দাঁড়াও আকাশ আর যেও না দৃষ্টি সীমার বাইরে গেলে…
সময় তুমি বড্ড যাযাবর (নুর এমডি চৌধুরী) মানুষের সাথে সাথে সময়ও একসময় বৃদ্ধ হয়ে যায় নীলাকাশ মেঘের ছায়ায় ঢেকে নেয় তার রঙ প্রকৃতি আড়াল করে নেয় তার শোভা বর্ধন মমতার সান্নিধ্যে বেড়ে উঠা ঔরসজাত শিশু গুলি বাবা মা নামের মধুর ডাকটিকে বন্দী করে দেয় বৃদ্ধাশ্রম নামের জেলখানাতে। হায়রে জীবন! রঙ তুলির আঁচড়ে যাকে রাঙালাম হৃদয়ের সবকটি রঙ নিয়ে সময়ের তালেতালে সেও পালিয়ে বেড়ায় এ জীবনটাকে একাকীত্বতা দিয়ে পাখির সুমধুর ডাক আর শোনা হয় না অধরামৃত প্রাণ চোখ বুজে নির্বোধ হাঁটে একটু সান্নিধ্য একটু গল্প কথার খুঁজে। তার যে সময় নেই। সে ব্যস্ত মহা ব্যস্ত। আবহমানকাল জীববৈচিত্র্যের সরল-সৌন্দর্যে সবাই মজে একদিন…
গুটিয়ে যাচ্ছে আশামন (নাসিমা হক মুক্তা) চলছে জপ, ফাঁকা বাড়ি মনপবন দুলছে- সজল চোখে দারুণ বিদ্রোহ, পাখির মত উড়ার স্বপ্নে; সঙ্গী! সে তো কেবল – মরুশহর! একা, ক্রমে গুটিয়ে যাচ্ছে আশামন দূরের ঐ বন- আস্তানা প্রণয় খেলছে আগুন হয়ে এমনতরো ভেতর বাতাস বলয়ে, নিজেকে নিজে ধরা রাখা- সে তো মহা কম্পমান স্রোত! দেখছি বনবিস্তরে কামনার বাঁকগুলো একে একে গিলে খাচ্ছে অন্ধকার কাছাকাছি এসে সজোর নির্মাণ ভেঙে ভেঙে ডিঙোয় গ্রীবা পাহাড় জ্যোৎস্নাবৃত সব নিদ্রাগুলি উবে বশ করে- থরো থরো সাজানো জাগার গান সে গান প্রতিরাতে হত্যা করে এক একটি মহাপ্রাণ!
প্রশ্ন (ইসরাত জাহান) কে যে আমি, প্রশ্ন শুধু নিজের তরেই আপন? স্বপ্ন সকল সাজিয়ে গড়া নিজের মায়ার ভুবন। হাজার কাজের জন্য ছিল সব প্রয়োজন হয়তো? এখন সেসব,স্মৃতির ভিড়ে মায়ার বাঁধন নয়তো!! কাজ ফুরোলেই, আপনজনা হয় যে নিজেই পর; নিজ খেয়ালে ভুলবে তোমায় শূন্য মনের ঘর!! ভুলে যাওয়া, ভুলে ভরা কষ্ট ব্যথার কাব্য; আমরা মানুষ, পুতুল বেশে নিত্য সাজের সভ্য।। সমাজেরই প্রয়োজনে অন্যায়েরই জয়ে; সত্য সকল গুমরে মরে অজ্ঞাতে যায় ক্ষয়ে। হেরে গিয়েও যায় যে জিতা জানেন শুধু প্রভু; প্রকাশে রয় মুখোশধারী জানবে না কেউ কভু।।
যাতন (আজিজুন নাহার আঁখি) চারিদিক ফাঁকা লাগে শুধু একা মনেতে লাগে যে ভয়, কিভাবে যে থাকি মন বেঁধে রাখি ঘুচবে কি সংশয়? নেই তুমি সাথে প্রাতে কিম্বা রাতে বিরহে কাঁদে হৃদয়, বুঝবে কি তবে কি যাতনা হবে সারাটি জীবনময়। ভালো নেই আমি জানে অন্তর্যামী বোঝো না গো তুমি আমাকে যে ফেলে তুমি চলে গেলে রয়েছ কোথায় ঘুমি? শূন্য এ জীবনে তোমার বিহনে একাকী থাকা যে দায়, কষ্টের সাগরে ডুবি চিরতরে করি শুধু হায় হায়। স্মৃতি নিয়ে বুকে মরি ধুঁকে ধুঁকে দেখার তো নেই কেউ, হৃদয়ে দহন করে জ্বালাতন উথলে ওঠে যে ঢেউ। প্রতি ক্ষণে ক্ষণে পরে শুধু মনে দুজনের কতো…
ছোটবেলায় আমার বোন রিমি ছিল দস্যি টাইপের। সে আবার বান্ধবী প্রিয় মানুষ। আমরা যখন ঢাকা মুগদার বাসায় থাকি তখন সে মাত্র ক্লাস টুতে পড়ে। সারাক্ষণ আম্মার বালিশের নিচ থেকে পয়সা নিয়ে ( এটাকে ঠিক চুরি বলে না। ভদ্র ভাষায় সম্ভবত পয়সা সরানো বলে ) চালতার আচার আর হজমি কিনে খেতো। যেদিন আম্মা দুপুরে একটু ঘুমাতেন বা শাজহানপুর নানার বাসায় যেতেন, সেদিন ছিল তার ঈদ। রাজ্যের বান্ধবীদের নিয়ে সেদিন সে ছাদে নয়তো বাসার সামনে বরফ পানি খেলতো। অথবা দুই তিনজন মিলে চলে যেতো কমলাপুর। তার প্রিয় বান্ধবীর বাসায়। একবার ঈদের সময় আমি আব্বা আর রিমি গেলাম মৌচাক মার্কেটে। স্কার্ট কিনলাম দুজনে।…
ধোঁয়া ধোঁয়া প্রকৃতি মনের ডানামেলা জানালা খুলে রেখেছি দৃষ্টিকে ভরে দিয়ে, বিস্মিত সবুজ দেখব বলে। বাতাসের পিছু পিছু কালো ধোঁয়ার বুদবুদ গ্রাস করে ফেলে পাতা পাতা স্বপ্নকে, বুকের ক্ল্যারিনেটের ভেজা সুরকে আর আজলাভরা চাওয়াকে। আহা সেই পুরোনো দিনগুলোর চৌকাঠ, পা দিতেই ছিল সবুজ সবুজ কোলাহল, এক আকাশ মেহগনি সুখের বজরা দুচোখে তারায় ক্রিস্টাল শুদ্ধতা। এখনও সকাল শুরু হয় তুলো তুলো সবুজ নিয়ে শহরের মানুষ তাকে সাজায় ধূসর ধোঁয়ায়। অভিমান তোর ঠোঁট ফোলা অভিমানে, সূর্যমুখি ফুলের আজ মুখ ভার। তোর অভিযোগের কারনে, শহরের কোলাহল আজ স্তব্ধ। তোর নিশ্চুপ থাকায় আজ, শহরে বৃষ্টির তেমন দেখা মেলে না। তুই নিদ্রাহীন রাতের সঙ্গী…
পরিবার (জাকিয়া সুলতানা) আশ্রয় চাওয়া আশ্রয় পাওয়া মানবজাতির সহজাত প্রবৃত্তি সৃষ্টির আদিকালে হাওয়া আদম থেকে পরিবারের উৎপত্তি। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে যখন মানুষ ফিরে আপন নীড়ে পরিবারের মানুষ তখন শক্তি জোগায় যত্ন আত্তি করে। পরিবার হলো সকল কর্মযজ্ঞের সূতিকাগার স্নেহ মমতা আর ভালবাসার আধার জড়িয়ে থাকা মায়া বিপদে আপদে পাশে দাড়িয়ে দেয় সুখ শান্তির ছায়া। ঝগড়া ঝাটি আর খুনসূটি হয় যদি কখনও এক সদস্যকে ছাড়া হায় অন্য সদস্য মরে জানিনা কিভাবে শেষ বিদায় নিয়ে ঘুমিয়ে থাকব কবরে। জাকিয়া সুলতানা এম, আরডি রাজিয়া গার্ডেন স্বামীবাগ, ঢাকা।
নিস্তব্ধতা (নিপা খান) আজ তুমি নেই আমার দুচোখ ছাপানো জলধারা তোমার মতো করে কেউ ভালোবাসে না কেউ আদর বা শাসন করে না। আমি যেন মুক্ত হতে গিয়ে বন্দি হয়ে গেলাম। তোমার সরব উপস্থিতি আমায় মুগ্ধ করত। বড্ড ক্লান্ত আর নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মন নিজেকে আর কোলাহলে রাখতে পারি না। নিজের মনেই নিজেকে বুঁদ হয়ে থাকি। তোমার মতো করে কেউ বোঝেনি এ জীবনে পরজন্মে কি রাখবে আমায় স্মরণে!
