১৬২ বার পড়া হয়েছে
ক্যানাডা ভ্রমণ
জান্নাতুল ফেরদৌসী মেহমুদ
পর্ব: ০১
আজ একটি স্বপ্নের নীড়ের গল্প বলবো । আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা । আমরা একই সাথে ঢাকায় একটি হাই স্কুলে পড়তাম । তারপর আমার বাবার অফিস থেকে ট্রান্সফার হওয়ার কারনে ইউরোপের কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি শেষ করি । আর আমার বান্ধবী মিতু ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করার পর, বিয়ে হয়ে বরের কাছে চলে গেল কানাডা । এদিকে আমার বিয়ের পর আমি চলে আসলাম আমেরিকাতে । প্রবাস জীবনের প্রথম দিকের দিনগুলো সবসময় অনেক কঠিন হয় । নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ। সে দেশের কালচার ভাষা সমাজব্যবস্থা সবকিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ কিছু বছর সময় চলে যায়।
আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, পড়াশোনা চাকরি বাচ্চাদের মানুষ করতে, নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে বেশ কয়েক বছর সময় ব্যয় হয়ে গেল । মিতুর ক্ষেত্রে ছিল কিছুটা ভিন্ন । তার বর জসিম ভাইয়ের নিজের বিজনেস ছিল বলে মিতুর কাজ ছিলো নিজেদের বিজনেস দেখাশোনা করার সাথে পিঠাপিঠি দুই বাচ্চাকে মানুষ করা। মিতুর সাথে তখন আমার প্রায় কথা হত তাদের ল্যান্ডফোনে। ইউটিউব তখনো চালু হয়নি বলে শুরুর দিকে আমরা একে অপরের সাথে মজার মজার এবং সহজ রেসিপি গুলো শেয়ার করতাম । সেসময় মিতুর সেই ছোট্ট সাজানো হ্যামিলটন শহরের গল্পগুলো শুনতে শুনতে , আমি আমার চিন্তা চেতনায় সবকিছু লালন করেছি।
এরপর সময়ের স্রোতধারায় , মিতুদের বিজনেস গ্রো করতে থাকে , বাচ্চারা বড়ো হতে থাকে। ধীরে ধীরে বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি সব হয়েছে। আমরা যার যার স্থানে নিজেদের একটা জায়গা করে নিয়েছি প্রবাসের মাটিতে । নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে প্রচুর পরিমাণে অধ্যাবসায় সততা নিষ্ঠার সাথে ।
এবার আসা যাক কানাডা ভ্রমণের গল্পে। গত সপ্তাহে বুধবার আগস্টের ১০ তারিখে আমি আমার ছেলে সামিরকে নিয়ে আমেরিকা থেকে কানাডাতে আমার বান্ধবী মিতুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। সামারের শেষের দিকে আবহাওয়াটা চমৎকার ছিল । সূর্যের আলোটা তেমন কড়া ছিল না। সকাল-সন্ধ্যায় মৃদু বাতাস বইতো। খুবই মনোরম এবং উপভোগ্য পরিবেশ । যে কদিন আমি সেখানে ছিলাম , সকালে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকতো , আমি বাসা থেকে বের হয়ে ওদের রেসিডেন্টসিয়াল এলাকাটা হেঁটে সূর্যোদয়ের পরবর্তী সময় টা খুবই উপভোগ করতাম । একটি আপস্কেল রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, লাক্সারিয়াস সব বাড়ি ঘর আর বাড়ির সামনে পার্ক করা পোর্শে আর মারসিটিস এর মত বিলাসবহুল সব গাড়িগুলো। প্রতিটি বাড়ির সামনে প্রফেশনাল ল্যান্ডস্কেপিং, যেন চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য।
আমার মতে একজন মানুষের বাসা কিভাবে সাজানো থাকে , তার ওপর তার রুচি এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
ঠিক তেমনি মিতুর বাড়িটা আমার অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে । আমি এখানে আমেরিকান আনেক বাড়ি দেখেছি । আমার নিজের এবং আমার ভাই বোনদের সহ এখানে আমার আত্মীয়-স্বজনদের সবার বাড়ি আছে । কিন্তু মিতুর বাড়িটা , আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের। তার কারণগুলো বলি,
প্রথমত, বাড়ির লোকেশন। অ্যাংকাস্টার হল নায়াগ্রা এসকার্পমেন্টে অবস্থিত কানাডার অন্টারিওর হ্যামিল্টন শহরের একটি ঐতিহাসিক শহর। এই শহরের অনেক গল্প আমি মিতুর কাছে শুনেছি, আর তাই এই ছোট্ট সাজানো স্বপ্নের শহর টাকে হৃদয়ে লালন করেছি । মিতুর বাড়িতে ঢুকলেই প্রথমে চারিদিকে খোলামেলা আলো বাতাসে মনটা ভরে যায়।
প্রথম তলায় তিনটি বিশাল আকারের ড্রয়িং রুম সাজানো হয়েছে এক্সক্লুসিভ’ সব ফার্নিচার দিয়ে । তার সাথে রয়েছে একটি ফর্মাল ডাইনিং রুম। বিশাল আকারের একটি কিচেন তার সাথে রয়েছে ফ্যামিলি ডাইনিং। পিছনে রয়েছে বিশাল একটি ড্যাক , যেখানে জসীম ভাই বারবিকিউ করতে এবং গেস্টদের কে খাওয়াতে খুব বেশি পছন্দ করে। ড্যাকের পাশে টবের মধ্যে ছিল বেশ কিছু কাঁচা মরিচ গাছ টমেটো গাছ এবং ধনিয়া পাতা।
গ্যারাজ এর পাসে ছিল লন্ড্রি রুম যেখানে ওয়াশার এবং ড্রায়ার এর সুব্যবস্থা , সেটা ছাড়াও একটি বাথরুম । বাসার সামনে বাহিরে দুইটি কার পার্কিং এর ব্যবস্থা সহ বাড়ির ভেতরে একটি কার গ্যারাজ এর সুব্যবস্থা আছে।
বেসমেন্টে তার বিশাল সেটা সে জিনিসপত্রের স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করে।
বাড়িতে ঢুকলে ঠিক মাঝখানটায় একটা সিঁড়ি নিয়ে যায় দ্বিতীয় তলায় । যেখানে রয়েছে চারটি বড় সাইজের বেডরুম। মাস্টার বেড রুমের ভেতর ওয়াকিং ক্লজেট, ফুল বাথরুম এর জাকুজির সুব্যবস্থা আছে।
সেটা ছাড়াও একটি স্টাডি রুম, আর আছে কমন ফুল বাথরুম আছে।
পুরা বাড়ির পেইন্টিং এর কালার এতো মনোরম , চারদিকে যেন এক প্রশান্তি কাজ করে । প্রতিটি রুমের পর্দার কালার থেকে শুরু করে , প্রতিটি রুমে এক্সকিউজ সব ফানিচার দেখলে শুধু দেখতেই মন চায় । এক কথায় চোখ জুড়ানো মনের মতন সব ডেকোরেটিভ আইটেম । প্রতিটি রুমের কর্নারে লাইভ প্লান্ট এর সমাহার যেন রুমের সৌন্দর্য আরো সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। প্রতিটি রুমে মিতুর রুচির স্পর্শ প্রতিটি ফার্নিচার, প্রতিটি শোপিস , তার ব্যক্তিত্বের ঐশ্বর্য। সবকিছু মিলে মিশে এক সৌন্দর্যের প্রাচুর্য।
যে কয়দিন আমি সেখানে ছিলাম বেশ এনজয় করেছি। যেহেতু মিতুর কিচেন কাম ডাইনিং । আমি সেখান বসে বসে তাকে দেখতাম। কিচেনে আধুনিক সব সরঞ্জাম এর সুব্যবস্থা । মিতু তার মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে , নিজের মতো করে কাজগুলো অরগানাইজ করে থাকে।
সারাদিন যে খাবার দাবার হয়ে থাকে, সবগুলা প্লেট, বাটি, কাপ , হাড়ি পাতিল , ডিশ ওয়াশার মেশিন দিয়ে দেয় রাতে। এবং তার পরদিন সকালে ডিশ ওয়াশার মেশিন থেকে বের করে আবার সবকিছু কিচেনের সেলফে গুছিয়ে রাখে। আর সারাদিন সেই সেলফ থেকে নিয়ে সেগুলো ব্যবহার করে।
রান্নার সুবিধার জন্য সে কুইক পট ব্যবহার করে থাকে। সেখানে সে চটপটি বানানো থেকে শুরু করে খিচুড়ি রান্না করে থাকে। ভাজা পোড়া করার জন্য সে এয়ার ফ্রায়ার ইউজ করে থাকে। বাংলাদেশী সব রান্নাবান্না সে খুব ভালো রপ্ত করেছে। আমরা যেদিন আমেরিকা থেকে কানাডায় গিয়ে পৌঁছেছি , সেদিন তো তার বিশাল আয়োজন। সে রান্না করেছিলো চিকেনের কোরমা, ঝাল গরুর মাংস , মাছের খুব মজার একটি আইটেম তার সাথে ছিল সালাদ আর পোলাও । আমি বেশ মজা করে খেয়েছি।
তার পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট এর জন্য সে করেছে , আলু ভাজি পরোটা আর ঝাল গরুর মাংস । এত মজা হয়েছে , যেহেতু গরুর মাংসটা কুরবানীর ছিল , আমি খুব মজা করে গরুর মাংস দিয়ে পরোটা খেয়েছি ।
সেদিন আমরা নায়াগ্রা ফলসে বেড়াতে যাওয়ার কথা । মিতু বলল সেখানে রাত্রের ভিউটা খুবই সুন্দর , তাই একটু বিকেলের দিকে গেলে সন্ধ্যা এবং রাতের দৃশ্য টা এনজয় করা যাবে । যে কাজ সে কথা , সেদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর আমরা বেরিয়ে পড়লাম নায়াগ্রা ফলসের উদ্দেশ্যে।
চলবে::::::::::
২ Comments
wow ! nice
Nice journey ,Niagra is really amazing .