মার সেই রেডিওটা
শাহানা জেসমিন
সেই শৈশবে একটা আলতার শিশি বুকে জড়িয়ে ধরে সারারাত ঘুমিয়ে ছিলাম
নতুন জামাটাও বুকে জড়িয়ে ছিলাম সারারাত
এক জোড়া নতুন জুতোর প্যাকেটও ছিলো পাশে
আহা কী সুখ, ঈদের সুখ!
কতগুলো কাঁচের চুড়ি, নীল আসমানী রঙ চুড়ি
কত বার প্যাকেট খুলেছি আর দেখেছি আহা!ঈদ আনন্দ!
মার জন্য লাল ডুরে পাড় শাড়ি গায়ে ঘষামাজার জন্য সুগন্ধি সাবান, আর সুগন্ধি তেলও ছিলো
আহা কত সস্তা সুখ, তবুও তবুও বুক ভড়া আনন্দ,
মার লারে লাপ্পা চুড়িটাও ছিলো!
একদিন বাবা গয়না গড়াতো যারা দত্ত বাড়িতে গেলো
মার বিয়ের ভারি অঙুরিগুলো গলিয়ে পাতলা চুড়ি বানিয়ে আনলো, ডিজাইনটা ছিলো গোলাপ ফুলের!
মা সেই গহনা পাতলা চুড়ি অতি যত্নে রাখলো
বুবুর জন্য, মা খোঁপায় লাগাতো সব সময় তাজা গোলাপ ফুল আর কাটা ক্লিপ, এক অপার্থিব আলো ছিলো তার চোখে।
কিছু তরল ব্যথাও ছিলো তার…
ঘন্টার পর ঘন্টা আস্টধার নদীর জলে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে বসে থাকতো,
মার পাশে থাকতো প্লাস্টিকের ছোট একটা রেডিও
খুব প্রিয় ছিল মার সেটা, কীর্তন শুনতে ভালো বাসতো মা।
অনেক কাল সময় গিয়েছে বয়ে ঠিক ঠাক
বুকের মাঝে আলতার শিশিটা মোচর দিয়ে উঠে আজও,
আমি সিঁড়ি টপকে টপকে চলে যাই পঞ্চম ফ্লোরে
চতুর্থ ফ্লোরে মার দীর্ঘ বসবাস ছিলো
এখন মনে হয় সে অপেক্ষা করে আমার জন্য
সব আছে ঠিক ঠাক, মার তসবী গোটাও আছে
সেই রেডিও তো বাজে কীর্তণ আর সানাইয়ের সুর,
শুধু অনেক বছর মাকে দেখি না।