এখানে দাঁড়াবেন না
।। শেখর সিরাজ ।।
আমি বলেছি, বারবার বলেছি, এখানে দাঁড়াবেন না, দাঁড়াবেন না, এখানে দাঁড়ালে আপনিও হয়ে যাবেন অশরীরী প্রেতাত্মা।
এখানে দাঁড়ালে কেউ লোকালয়ে ফিরে না, জীবন বাজি রাখবেন না, জীবন অষ্টধাতুর মতো মহা মূল্যবান সম্পদ।
নষ্ট ডিম আর নষ্ট বীজের মতো এইখানে দাঁড়ালে নষ্ট হবে জীবন।
নষ্ট হবে বিশুদ্ধ বাতাস, পাখিদের অভয়ারণ্য।
আপনি চিনেন না পতিতা-পল্লীর পবিত্র মাটি, আপনি চিনেন না মদ ও মদিরার নেশা।
এখানে দাঁড়ালে আপনার স্ত্রী ও সন্তানের নিদ্রাহীন আতংকে নষ্ট হবে আরামপ্রিয় রাতের ঘুম।
স্কুল পলাতক সুবোধ বালকের মতো পালিয়ে রেডলাইট এরিয়াতে দাঁড়াবেন না, বসাবেন না নেশা ভাং জুয়ার আসর।
এখানে দাঁড়িয়ে ভেঙ্গে গেছে ক্রন্দসী দেবদারু, নদীর পাড় ভাঙার মতো ভেঙে গেছে- বিমানকরের বারো বছরের শীতল স্নায়ু যুদ্ধের দাম্পত্য।
যে মেয়েটি ছিল উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম, যার চোখে মুখে ছিল উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন, সেই মেয়েটি এখানে দাঁড়িয়ে হয়ে গেল নিষিদ্ধ পল্লীর বাসিন্দা।
প্রজাপতি গোঁফের উঠতি বয়সী তরুণ টেক জায়েন্ট কোম্পানির বড় অফিসার হওয়ার বদলে হয়ে গেল পাড়া-মহল্লার কিশোর গ্যাং এর প্রধান।
পঁচিশ বছরের তারুণ্যে যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ফোরাম তর্জনে- গর্জনে বাগ্মিতায় মঞ্চ কাঁপানোর কথা,
রাতারাতি সে হয়ে গেল নারী খদ্দেরের দালাল।
এখানে দাঁড়িয়ে মাছ বেপারী ইয়াজউদ্দিন হয়ে উঠল পুঁজিবাদী বুর্জোয়া সন্ত্রাসী, দাগী খুনি।
কেউ কেউ হয়ে উঠল মাফিয়া ডন, অন্ধকার অপরাধ জগতের ঈশ্বর।
এখানে দাঁড়াবেন না, এখানে কেউ শরীর বিক্রি করে, কেউ শরীর কেনে। জমাট কালো অন্ধকারে জমে উঠে নিষিদ্ধ সব বেচা-কেনার হাট।
নিরীহ মধ্যবয়সী পিতা মুষলধারে বৃষ্টির মতো নিঃস্ব হয়ে গেল ভাং নেশা জুয়ার আসরে।
নিষিদ্ধ যৌনতার কাছে হেরে গেল কতশত বীর পালোয়ানের উদিত অন্ডকোষ।
এখানে দাঁড়াবেন না, বারবার নিষেধাজ্ঞা, হুলিয়া জারি করার পরেও আইন ভঙ্গ করা কিছু লোকের প্রতিদিনের অভ্যােস, দাসত্ব।
বিলবোর্ডে, ফেস্টুনে বেওয়ারিশ লাশের কোনো পরিচয় থাকে না,
থাকে না গুম খুনের কোনো হদিস, পরিসংখ্যান।
এখানে দাঁড়াবেন না, মূহুর্তে ঘটতে পারে বিস্ফোরণ কিংবা আপনাকে টার্গেট করে বসে আছে কোন আততায়ী হন্তারক।
ভদ্রপল্লীর মুখোশে আপনি চিনবেন না শত্রুর শত্রু, মিত্রদের মিত্র।