২৪৩ বার পড়া হয়েছে
ছবি- ছিটমহল
কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা-এইচ আর হাবিব
প্রযোজনা-কমন্ হোম এটাচার।
পরিবেশনায়-জাজ মাল্টিমিডিয়া।
রিলিজ ডেট-১৪ ই জানুয়ারি
অভিনয়ে-জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, মৌসুমি হামিদ, আরমান পারভেজ মুরাদ, মীরাক্কেলের সজল, ডন হক, এবিএম সোহেল রশিদ, উজ্জ্বল কবির হিমু, অঞ্জলি সাথী ও শিমুল খান প্রমূখ।
শুটিং স্পষ্ট-মাড়েয়া ছিটমহল পঞ্চগড়।
ছিটমহল চিত্রায়ণে ছিটমহলের বাস্তবতা তুলে ধরতে ছিটমহলেই শুটিং করতেই হবে। পরিচালকের এমন গোয়ার্তমির কারণে তীব্র শীতে দলবেঁধে পুরো ইউনিট ছুটলো মাড়েয়া ছিটমহল পঞ্চগড়।
এক দেশের ভেতর অন্যদেশ। উল্লেখযোগ্য সাহায্য-সহযোগিতা নেই। এ হলো সংগ্রামী জীবন। যেন সূর্য বিহীন বৃক্ষের বেড়ে উঠা। ভাবতেই কেমন লাগে।
মানুষ থেমে থাকে না। সভ্যতার পথ ধরেই এগোয়। ছটমহলের নানাবিধ সংকট আছে। দারিদ্র্যতা আছে। টানাপোড়েন আছে। এর ভেতরেও আছে মানব-মানবীর প্রেম, সংসার, উৎসব ও কলহ। সব কিছুকে সঙ্গী করে গল্প এগিয়েছে নিজস্বতা নিয়ে। স্বাতন্ত্র্যবোধই এই গল্পের অহংকার।
পর্দায় দেখা যাবে, পরিবারের কর্তা নরেন। ছিটবাসী তাকে ইজ্জত করে। কারণ সে ফুটবল খেলায় জিতে ছিটের মুখ উজ্জ্বল করেছিল । চারিদিকে ঘিরে থাকা অন্য মানচিত্রের দেয়াল। মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ খুবই জটিল প্রক্রিয়া। তবুও ছিটবাসীর গর্ব ঐতিহ্য প্রাপ্তি ঐ ফুটবল খেলাটিতেই। সেই খেলায় নরেণরা অবশেষে জেতে। এখেলা শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও গড়ায়। একের পর এক কুচক্রীদের ফাঁদ ডিঙিয়ে তবে বিজয় উৎসবে মেতেছিল গ্রামবাসী। তাই নরেণ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিটমহলের আইডল। স্ত্রী, কন্যা, বিধবা বোনকে নিয়েই নরেণের সুখের সংসার।
৬৮ বছরের অবরুদ্ধ থেকে ছিটবাসী ঠ্যাংপাগলারা অবমুক্ত হবে। মিলবে তাদের মুক্তি। ঠাং পাগলাদের বিজয় হবে সমুন্নত।
সরকারী সিদ্ধান্তে যে কোন দেশের পরিচয় গ্রহন করতে পারবে তারা। যার কূটনৈতিক নাম বিনিময়। এখানেই বাধে বিপত্তি। নাড়ি পোতা রয়েছে যে জন্মভিটায় সেটি ছেড়ে কি চলে যাবে নরেণ। এই ভূমির জন্য নরেণের পূর্ব পূরুষের ভালবাসা কি নিরর্থক? শুধু কি দেশ পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে মৃত্তিকা প্রেম? এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে গল্পে।
স্ত্রী, কন্যা, আত্বীস্বজনদের দেশত্যাগ তার কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। সে এই মাটির প্রতি ভালবাসা ত্যাগ করবে না। ছিটবাসী মানুষের দেয়া সম্মান ঠ্যাংপাগলাদের মত মানুষের ভালবাসা, এবং প্রকৃতির সাথে তার সীমাহীন প্রেম, এমনকি নরেণের পোষা গরুটির প্রতি মমত্ববোধ তাকে ভূমি ছেড়ে যেতে বাধা দেয়। নরেণ কোনভাবেই বোঝাতে পারছে না, তার স্ত্রী এবং কন্যাকে। তারা ইতিমধ্যে নাম লিখিয়ে এসেছে বিনিময়ের জন্য। তারা এই ভূমি ছেড়ে যাবে। কিন্তু বিধবা বোন রেণুবালা তার সাথেই থাকবে।
জন্মভিটার জন্য সর্বস্ব বিসর্জন দেয় রেণুবালা। সবই করে ভাই নরেণের পরিবারে যেন কোনো ঝামেলা না আসে।
মুঘল সরকার ছিটমহলের কর্তা। তার ইচ্ছাই ছিটমহলের আইন। সর্বগ্রাসী এই বহুগামী ভয়ংকর মানুষটির নারী চাহিদায় যোগ করতে চাওয়া নরেণের মেয়েকে। রেণুবালা তার ভাইঝিকে রক্ষায় এগিয়ে আসে। মুঘল ভাবে অন্যটা। মনে করে রেণুবালার এই রাজী না হওয়ার পিছনে কাজ করছে নরেণের মেয়ে দোলনের প্রেমিক চটকা। তাই মুঘল নজরে রাখে চটকার দিকে।
চারিদিকে চলছে বিনিময়ের সাজ সাজ রব। নরেণের স্ত্রী কন্যাকে ফেরানোর মন্ত্র খুজছে। সাহস যোগায় ঠ্যাংপাগলা। সে এই ভূমির অধিকারহীন মানুষদের প্রতিকৃতি। নতুন জুতা পরে অন্য দেশের ভূখন্ডে বিচরণের কারণে স্থানীয়রা তাকে শাস্তি দিয়েছিল। জুতা খুলে মাথায় করে হাঁটতে হয়েছিল। তাই তার প্রতিজ্ঞা সে ভূমির অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত ভূমিতে পা রাখবে না। বাঁশে ভর করে চলে। অমল ছিল ঠ্যাংপাগলার বন্ধু। বিয়ে করেছিল রেণুবালাকে। বিধবা হবার পর রেণুবালার খোঁজখবর নেয় ঠ্যাংপাগলা। ক্রমাগত নরেণের পরিবারের সাথে সখ্যতা। জেগে ওঠে মন, সংক্রমিত হয় প্রেম? ছিটমহল নিয়ে দুইদেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরেও সেখানে বসবাসরতদের নিজস্ব স্বপ্ন, সংসার, প্রেম, পূর্বপুরুষের স্মৃতিময় আশ্রয় কাঁচের মতো ভেঙে যায়…
এ-থেকে উত্তরণের পথ কী? এর সমাধান কি? মানবিক প্রেম, জন্মভিটা, না-কি দেশের মূল ভূখণ্ড। গন্তব্য কোথায়? মর্মস্পর্শী গল্পের শৈল্পিক উপস্থাপন দেখতে আসুন প্রেক্ষাগৃহে। ছিটমহল বঞ্চিত মানুষের উচ্চারণ। সাধুবাদ এইচ আর হাবিব। সাধুবাদ ছিটমহল টিম।