অপু-দুর্গা
অজয় ভট্টাচার্য।
দাঁড়িয়ে আছি বিকেল পাঁচটায় টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের গেটে।
অফিস ফেরত এককাপ গরম চায়ের জন্য।
হাতে জ্বলন্ত সিগারেটটা ধীরে ধীরে শহীদ হয়ে চলেছে।
সম্বিত ফিরল, লাউয়ের কচি ডগার মতো নরম একটা সুরে।
“কাকু”, “একটা পাউরুটি কিনবো, দশটা টাকা দেবে।”
তাকিয়ে দেখলাম সাত বা আট বছরের একটা মেয়ে।
“মাথার দুপাশে চুলে লাল ফিতের বিনুনি,
লজ্জা নিবারণের জন্য রাস্তার ধুলোমাখা একটা ফ্রক পরা।
প্লাষ্টার না করা দেওয়ালের মতো দাঁতের সারি,
আর তার সাথে মায়াবী দুটো চোখ।”
মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলাম,” তোর নাম কি ?”
‘ কৌশল্যা।”
বলে, বিনা পয়সার একটা মিষ্টি হাসি দিল।
থাকিস কোথায় জিজ্ঞাসা করাতে,” আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিল।”
আমি বললাম, ” চলতো দেখি।”
মেয়েটি হেঁসে বলল,” চলো।”
মানুষের বসার সিমেন্টের জায়গার উপর সাইনবোর্ড রেখে
তলার ফাঁকা অংশটা পিজবোর্ড দিয়ে
দশ ফুট বাই দুই ফুটের একটা অস্থায়ী ভঙ্গুর ছাউনি
দেখিয়ে অনাবিল হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বলল,”এইটা আমাদের ঘর।”
বিকালের পড়ন্ত সূর্য তখন আলু-বোখারা রঙ্গে
রঞ্জিত হয়ে পশ্চিমে ইলেকট্রনিক্স বিজ্ঞাপনের পিছনে ঢলে পড়েছে।
মেয়েটির গলার আওয়াজ পেয়ে ছাউনির ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো
আদুল গায়ে একটা বছর চারেকের ছেলে, হাতে কাশফুল।
বাঙ্গালীর আবেগতাড়িত কল্পনামনে পৌঁছে গেলাম সত্যজিৎ রায়ের অপু-দুর্গায়।
টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখলাম বাইশ শতকের অপু-দুর্গাকে।
—————————————————————–
অজয় ভট্টাচার্য।
১/১৯বি, অশোক নগর।
পোঃ- রিজেন্ট পার্ক।
কলকাতা -৪০
১ Comment
অপু দুর্গা কবিতাটা অসাধারণ। হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করে গেলো। অজয় ভট্টাচার্য্য এর কবিতা যত পড়ছি ততোই মুগ্ধ হচ্ছি। ওনার কলমে আরও অনেক কবিতা পড়ার আশা রাখি।