বেদনার চাষ মোহাম্মদ শাহানুর ইসলাম ফসল ফলাবো ভেবে লাঙলের ফলা হাতে শুরু করেছিলাম অকর্ষিত ভূমির কর্ষণ দুই হাতে তিলে-তিলে বপণ করেছিলাম ফসলের বীজ বাহুর বলে চর্মের ঘামে আর হৃদয়ের দামে গড়ে তুলেছিলাম এক সুবিশাল সবুজাভ পৃথিবী পত্রপল্লবে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম প্রেমের সিক্ত ধারা অতি যত্নে লালিত স্বপ্নকে রূপ দিতে বিনিদ্র প্রহরীর ভূমিকায় ছিলাম অবিচল দিনের পর দিন রাতের পর রাত এভাবেই চলছিলো হৃদয়ের শব্দহীন কোমল সাধন …একসময় স্বর্ণাভ ফসলের ভারে— সুবাসিত মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর চারপাশ নিজের হাতে ফলানো ফসল একান্ত অধিকারে চাইতেই বিপত্তির দৌরাত্ম না! না! না! নিষেধাজ্ঞায় অসংযত অবরোধ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর শ্বাস নিয়ে নীলাভ আকাশে তাকিয়ে ভাবি: ফসলের…
Author: প্রতিবিম্ব প্রকাশ
স্মৃতিতে ইছামতী সোহরাব হোসেন (শিক্ষক) চাচা এটা কি নদী? এর নাম কি ছিল? সাহেব এই নদীর কথা বলছেন, এর নাম ইছামতী নদী। চাচার মুখে ইছামতীর হারানো স্মৃতি, বলতে বুক ফেটে কান্না আসে ——— প্রচুর যৌবনে কলকল রবে বয়ে চলত এই নদী। হয়তো – নদী বুড়া হলে সৌন্দর্য হারায়, প্রকৃতির কাছে বন্ধক রাখে তার যৌবন; থাকেনা তার ক্রোধ ও ধারালো স্রোত , তখন নদীর বাটে তাকালে শুধুই চোখে পড়ে তার নির্মম হাহাকার! নদী পাড়ের মানুষের ভিতর খুঁজলে পাওয়া যায় শতশত নদীপ্রীতি। নদী যদিও সর্বস্ব হারিয়েছে, হারিয়েছে নদী পাড়ের মানুষ! কিন্তু, স্মৃতি রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে শত বাঁধায় আটকিয়ে! যে নদীতে অবাধে সাঁতার…
বিরহের বাঁধনে (গীতিকবিতা) মোর্শেদা চৌধুরী এ্যানি অন্তর মাঝে মোর কষ্ট জ্বালা হতে পারিনি তোর গলার মালা, শত শত স্রোতের বিপরীতে হেটে জীবন যৌবন মোর কাদায় মিশে।—-২ বার প্রতি মুহূর্তে ফুটন্ত ফুলের ছোঁয়া দিতে দিতেই গেলো প্রাণ খোয়া, সর্বত্র দিয়েও যারে যায় না দেখা, মুখপানে ভেসে উঠে মলিন রেখা। অন্তর মাঝে মোর কষ্ট জ্বালা হতে পারিনি তোর গলার মালা।—-ঐ মেহেদি পাতার মতো লাল রঙ্গে বেঁচেই মরছি হায় কাঁটার আঘাতে! জনম গেলো মোর আশায় আশায় কেড়ে নিয়ে গেলে মুখের ভাষা। প্রতি মুহূর্তে ফুটন্ত ফুলের ছোঁয়া, দিতে দিতেই গেলো প্রাণ খোয়া। সর্বত্র দিয়েও যারে যায় না দেখা, মুখপানে ভাসে শুধু মলিন রেখা! ধন…
না ফেরার দেশে জেরিন বিনতে জয়নাল মনে পড়ে কী সেদিনের কথা? নির্জন বৃষ্টিস্নাত পথে, তুমি আর আমি। নগ্ন পায়ে পিচ ঢালা রাস্তা, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিরিষ গাছগুলো যেন দেহরক্ষী। দু’ধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। এক ঝাঁক দেহরক্ষীর মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন। মনে পড়ে? হঠাৎ কীভাবে ভয়ে পেয়েছিলে মেঘের গর্জনে! সেদিন তো কথা দিয়েছিলে,কখনও ছেড়ে যাবেনা, প্রতিটি বর্ষা আমার সাথে কাটাবে। শর্ত দিয়েছিলে, নগ্ন পায়ে নির্জন রাস্তায় বড় বড় গাছগুলোকে সাক্ষী করে হাঁটতে হবে। হাঁটতে হবে তোমার হাতে হাত রেখে, খোলা কোনো মাঠে বসে দুজনে একসাথে চাঁদ দেখব, তারা গুণব। উপভোগ…
কর্মে সুন্দর আয়িশা ওয়াহিদ ব্যস্ততায় কাটুক সারাদিন কর্মে, অযথাই সময় কাটানো কোন মর্মে? জীবন হোক একক বা যৌথ, কর্মই হোক জীবনের সকল অর্থ। যেখানে তোমায় সারাদিন কাটবে বসে, কিছু দিবে না জীবন তোমায় এ আলস্যে। কর্মে কতশত মানুষ কাটায় নির্ঘুম, তাদের ই আসবে শান্তির নিশ্চিন্ত ঘুম। কর্ম ছাড়া নেই কারুর মুক্তি, আলস্যেরা মেলায় তর্কে যুক্তি। হাস্যকর হয়ে থাকে সকলের কাছে, চিন্তা করেনা কি বলে লোক পাছে। কর্মক্ষম থাকা ভাগ্যের ব্যাপার, অলস বুঝবে না কর্মের প্রহার। কর্মে মিলে শান্তি, আলস্যে ভ্রান্তি, কর্মে হয় উদ্যম, আলস্যে অধম।
জান্নাতুল নাইম এর কবিতাগুচ্ছ ১) মন মন্ত্রণালয় মুখচোরা, মনচোরা! তৃষ্ণার্ত কানাই! ওরে আমার শ্যাম কালিয়া কৃষ্ণচূড়া! সারা বন জুড়ে তোর একি আভা! ঋতুর ক্ষরণে বিরাজমান রক্তিম স্বভাব! করিসনে আর সূক্ষ্ম বিদ্রুপ বিরুপ অগ্নি লাভা! সৃষ্টি হয় যে ক্ষত আত্মায় তোর প্রেমাভাব! তুমি বললে তুমি কৃষ্ণচূড়া আসলে রাধা বা কৃষ্ণচূড়ার কোনো অবয়ব নই গো মোরা তুমি মনচারী, প্রাণচারী, হৃদয়রাজ্যে রোদ-বৃষ্টি ঝরা জলাভাবে প্রাণ রাজ্যের প্রেমশস্য খরা॥ ২) ভুবন সমাচার দ্বি-ভুবন এ তারা সমান, আমি অসমান। (সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ) ত্রিভুবন আমরা সমান, জীবন সমতল সরল রেখা। (সমবাহু ত্রিভুজ) অসম ভুবন, আমরা তিনজনই অসমান, বিচিত্র প্রবাহ! জীবন বক্র রেখা। (অসমবাহু ত্রিভুজ) বহু চিন্তার…
যদি কথা রাখিস সোহরাব হোসেন শোন, তোকে একটা কথা বলবো প্রমিস কর কাউকে বলবি নাতো – তিন সত্য বলে কথা দে, যদি কথা রাখিস, তাহলে তোকে সব কিছু খুলে বলবো! আমাদের পাড়ায় সুন্দর একটি হাট বসেছে, বিকেলে অনেক লোকজন আসে হাটে, বেশ কিছু দোকানও বসেছে শুধু তাই নয় প্রত্যেহ সকাল বিকেলে বাজারও বসে। বাজারের দক্ষিণ কর্ণে চাটাইয়ের বেড়া টিনের চালা ঘর চায়ের স্টল, ওটা আমার! বেশ ভালোই চা বিক্রি হয় বাজারে। মাঝে মধ্যেই কেউ কেউ পান খেতে চায়, আমার মনে হয় স্টলে পান রাখলে খুব ভালো বিক্রি হবে। আমি বলি কি বন্ধু তুই আর- কামলা বিক্রি করতে যাস না কারন…
অবচেতন মন শাহনাজ শারমিন সব পাখি খুঁজে ফিরে নীড়, আমার নীড়ের ঠিকানা অজানা। বৈশাখী ঝড়ে মাতাল হাওয়া, ছুটে চলে দিগ্বিদিক আমি শুধু জানি এই ছুটে চলা নেই যার কোন সীমারেখা। পথের বাঁকে বাঁকে, হারিয়ে পথের ঠিকানা, ছুটে ছুটে চলবে মন হিসেবের খাতা চুকে গেছে মনের সব লেন দেন। আবার যদি আসি এমনি করে কোন একদিন মেঘ বৃষ্টি হয়ে, ঝরবো কারো চোখে মায়াবী কাজল ধুয়ে দিতে কোন এক শ্রাবণ গভীর রাতে। অচেনা পথিক সেই আমি, দেখা মিলে না বাস্তবতায়, তবুও ভালবাসা সে যেন অভিলাষ মালতীর সুভাস মুগ্ধতা এই যেন স্বপ্ন বিলাস। তোমার মনের কুঞ্জবনে, জানি ফাগুন দিবে নাড়া, এসো না তবুও…
একটুকু স্পর্শ চাই তসলিমা হাসান তুমি ভালোবেসে উন্মাদ হয়ে যদি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেল, একবার চুম্বকের মতো আকর্ষণ কর; তাহলে আমার শিরা উপশিরায় মৃদু শিহরণ জেগে উঠবে। বেজে উঠবে পিয়ানোর মধুর সুর। আমি আনমনে তোমার বাহুডোরে হয়ে যাবো বন্দী। গড়ে তুলবো ভালোবাসার সন্ধি। তোমার নিঃশ্বাসে – বিশ্বাসে মিশে গিয়ে তোমার হৃদপিণ্ডের কোণে জায়গা করে নিবো আমি। রক্তের প্রতিটি কোণায় কোণায় প্রবাহিত হয়ে তোমার শরীরের সাথে মিশে হয়ে যাবো একাকার। তখন আমার স্পর্শে কাতর হয়ে তুমি এনে দিবে আমায় শত নীলপদ্ম। সেই সুবাদে আমি নীল নকশীকাঁথা হয়ে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়ায় জড়িয়ে রাখতে চাই তোমাকে। চাই ভালোবাসার নিবিড় স্পর্শ। তোমার…
চাওয়া পাওয়ার হিসাব — কামাল কাদের দিনটি আগুন ঝরা গ্রীষ্মের দুপুর। রাস্তার দু ‘ পাশে লোকের চলাচলের ভীড় দৃশ্যমান, একজন আরেকজনকে ঠেলা ঠেলি করে হাটছে। এরই মাঝে ট্রাফিক আলোর সামনে ছোট্ট মেয়েটি হাতে কয়েক গোছা বেলী ফুলের মালা নিয়ে চলন্ত গাড়ীর আরোহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে , উদ্দেশ্য মালা গুলি বিক্রী করা। মেয়েটির বয়স বড়োজোর আট / নয় বছর হবে। শুস্ক চেহারা , শীর্ণকায় শরীর ,কতদিনের পুরানো জামা গায়ে জড়ানো তা বোঝা কঠিন। উত্তপ্ত পিচ ঢালা পথে খালি পায়ে হেটে ক্রেতাদের পেছনে পেছনে ঘুরছে যদি কোনো হৃদয়বান ক্রেতা তার কাছ থেকে একটি মালা কেনে !! নাসিমা আখতার সুগন্ধা ,…
