চাচা ভাই
দেবদাস হালদার
আমি যাকে অনেক আগে থেকেই বলতাম ভাই, বাসাবাড়ি করার পর আমার মেসো শ্বশুর তিনিও তাকে ডাকেন ভাই। একদিন কোন এক কারণে শ্বশুর মশাইয়ের সাথে সেই ভদ্রলোকের ব্যবসায়িক অফিসে গেলে শ্বশুর মশাই আমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এই ভাবে,
–জুয়েল ভাই?এ আমার জেঠাইসেরবড় মেয়ের জামাই,দেবদাস। ব্যাংকে চাকরি করে।
তার কথা শুনে আমাকে না চেনার ভান করে জুয়েল ভাইও তার ঐ ঠোঁটের ঈশান কোনে মুচকি হাসির রেখা টেনে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,
— জামাই, প্লিজ বসুন। আমি আর তখন কি করবো?তার আহ্বানে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই এবং
মুখ টিপে একটু হাসি দিয়ে তার বিরাটকায় টেবিলের সামনে রাখা টিনটি চেয়ারের সর্ব দক্ষিণের চেয়ারটায় বসে পড়ি।আর শ্বশুর মশাই সর্ব উত্তরের চেয়ারটায় জুয়েল ভাইয়ের রুমে ঢোকার সাথে সাথেই বসে পড়েন। এবার শ্বশুর মশাই আমাকে নির্দেশ দেন
–জুয়েল ভাইকে তুমি চাচা বলো।
কি আর করার? অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতোই আমার অবস্থা। শুধু চুল ছাড়া টাকনা মাথা একটুখানি কোনো রকম নাড়িয়ে শ্বশুর মশাই য়ের কথার মান রাখলাম।
এবার জুয়েল ভাই তার ম্যানেজার সুজনকে চোখের ইশারায় কি যেন
ইঙ্গিত দিলেন।আর তাতেই স্প্রাইট এসে হাজির।
তিনজনের সামনেই স্প্রাইটের বোতলের ছিপি খুলে রেখে দেয়া হলো। জুয়েল ভাই তার হাতের ইঙ্গিতে তা গলাধঃকরণের ইঙ্গিত দিলেন। আমি সাধারনতঃ ফ্রিজের ঠান্ডা জাতীয় কোনো কিছু খেতে চাই না।
ইতোপূর্বে গলা বসে যাওয়ার কারণে এবার শ্বশুর মশাইর জুয়েল ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলছেন,
— কি ব্যাপার জামাই? আপনি খাচ্ছেন না কেন? এবার আমি
একটু হকচকিয়ে যাই এবং তার কথার জবাব দেই,
–জ্বী চাচা।এইতো নিচ্ছি।তারপর
ঢকঢক করে কয়েক ফোঁটা গলায় ঢেলে দেই।শ্বশুর মশাইও তার বোতলের সবটা একটানে শেষ করে দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আলাপ জুড়ে দেন। আলাপ আর কিছুই না। আমার মেজ কন্যার বিয়েতে কাকে কাকে দাওয়াত দেয়া যায় তা নিয়ে। কথার এক পর্যায়ে আমি মুখ ফসকে বলে ফেলি
— আট দশটা খাশি লাগবে।এটার
দায়িত্বটা জুয়েল ভাই আপনি নিবেন কিন্তু? হঠাৎ করেই শ্বশুর মশাই আমাকে বলে উঠেন,
–তুমি জুয়েল ভাইকে এখন থেকে চাচা বলবে।আমিও এবার বলে উঠি
–সরি।জুয়েল চাচা।আপনি কাকে দিয়ে কিভাবে খাশি কিনে মাংস
বানাবেন এটার পুরো দায়িত্ব কিন্তু আপনার? মৃদুভাষী জুয়েল ভাই
এবার বলেন,
— ঠিক আছে। আমার লোক আছে।
হোটেলে মাংস দেয়।ওদেরকে দিয়ে খাসি আনিয়ে আমার বাগানবাড়িতে তা জবাই করে মাংস জামাইর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে রান্নার আগেই।
তারপর থেকে যদি কখনো শ্বশুরের সাথে জুয়েল ভাইয়ের বাসায় বা দোকানে যাই তখন তার সামনে তাকে বলি চাচা।আর একা হলে বলি ভাই। আর যদি জুয়েল ভাই বা আমার বন্ধুবান্ধব সাথে থাকে তখন উভয়ে উভয়কে বলি চাচা ভাই। আহ্ সেকি মজার ডাক!
জমেও বেশ।