ভিড়/ভীড়
দেখা গেছে, সচেতন লেখক ছাড়া কেউ ’ভিড়’ লেখেন না; বর্জিত বানানে ‘ভীড়’ লেখা অনেকেরই অভ্যাস। অথচ, এটি সংস্কৃত ‘মিল’ থেকে উৎপন্ন তদ্ভব শব্দ। প্রমিত নিয়ম অনুযায়ী তদ্ভব শব্দের ই-ধ্বনি হ্রস্ব ই-কার দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। তাই, ’ভিড়’ সংগত বানান।
পূজা ও পুজো
’পূজা’ তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ, যার গঠন হলো – √পূজ্+অ+আ; ধাতুর বানানদৃষ্টে ‘প’-এ দীর্ঘ ঊ-কার হয়। কিন্তু পুজো হলো তৎসম ‘পূজা’ হতে উৎপন্ন তদ্ভব শব্দ (পূজা>পুজো)। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী তদ্ভব শব্দ হ্রস্ব উ-কার দিয়ে লিখতে হবে। দুটো শব্দ দিয়ে আবার কিছু পৃথক পৃথক শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন – ’পূজা’ দিয়ে পূজাপার্বণ, পূজাবেদি, পূজামণ্ডপ, পূজারি, পূজারিনি, পূজাসামগ্রী, দুর্গাপূজা, কালীপূজা ইত্যাদি এবং ’পুজো’ দিয়ে পুজোআর্চা, দুর্গাপুজো, কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো ইত্যাদি।
পূজারি না পূজারী?
’পূজারি’ লিখুন। কারণ, বাংলা ই-কারান্ত ‘আরি’ প্রত্যয় যোগে শব্দটি গঠিত হয়েছে (পূজা+আরি=পূজারি)। প্রকৃতিস্থলের তৎসম ‘পূজা’ বানান সাধিত শব্দেও যথারীতি অবিকৃত থাকবে।
বিক্রি, কিন্তু বিক্রীত
তৎসম শব্দ ’বিক্রয়’-এর পরিবর্তিত রূপ ‘বিক্রি’, যা হিন্দি ভাষারও শব্দ। প্রমিত নিয়মে তদ্ভব ও বিদেশাগত শব্দের ই-ধ্বনি ই-কার দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। অন্য দিকে, ‘বিক্রীত’ তৎসম শব্দ, যার গঠন হলো – বি+√ক্রী+ত। এ-ক্ষেত্রে ধাতুর বানান অনুযায়ী শব্দেও দীর্ঘ ঈ-কার হয়।
উৎকর্ষ/ উৎকর্ষতা
’উৎকর্ষ’ শব্দই বিশেষ্য; এর সাথে তা-প্রত্যয় যোগ করে পুনরায় বিশেষ্য করা যাবে না। বিশেষ্যদ্বিত্ব একটি গুরুতর অপপ্রয়োগ। কেবল কিছু বিশেষণ পদকে বিশেষ্য পদে রূপান্তরিত করার কাজটি তা-প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন করা হয়।
তাগিদ/তাগাদা
অর্থগতভাবে দুটো শব্দ কিছুটা আলাদা। দুটোর মূল দুটো ভিন্ন আরবি শব্দ : ’তাকিদ’ থেকে ’তাগিদ’ এবং ‘তাকাদাহ্’ থেকে ‘তাগাদা’। ’তাগিদ‘ হলো কোনও কাজের জন্য বার বার অনুরোধ। কিন্তু ’তাগাদা’ হলো পাওনা আদায়ের বা প্রাপ্য বস্তু ফেরত পাওয়ার জন্য বার বার দাবি।
ভালোবাসা/ভালবাসা
‘ভালবাসা’ এখন এই বাংলায় প্রচলিত নেই বললেই চলে; তবে পশ্চিমবঙ্গে বেশ চালু। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারণ অনুসারে শব্দের শেষ বর্ণে ও-কার বসানো হয়। যদিও বাংলা একাডেমির অভিধানগুলোতে ‘ভালো’ ও ‘ভাল’ দুটো শব্দই আছে, কিন্তু ‘ভালবাসা’ শব্দটি অনুপস্থিত। সেখানে শুধুই ‘ভালোবাসা’।
কীভাবে/কিভাবে
অনেকেই ’কিভাবে’ লেখেন; এটি ভুল বানান। শুদ্ধ রূপটি হলো ‘কীভাবে’। উল্লেখ্য, হ্রস্ব ই-কার দিয়ে যে ‘কি’ তা হলো প্রশ্নবোধক অব্যয়।
কি/কী এর ব্যবহার:
যে-সব প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে দিতে হয়, সে-সবের বেলায় ’কি’ এবং অন্যসব ক্ষেত্রে ‘কী’ লিখতে হয় । ‘কী’-দিয়ে গঠিত কীভাবে, কীজন্য, কীরকম, কীরূপ, কীসে, কীসের প্রভৃতি হলো প্রশ্নবোধক সর্বনাম; এগুলোর জবাব বর্ণনায় দিতে হয়, ’হ্যাঁ’ বা ’না’ দিয়ে হয় না।
আপস/আপোস/আপোষ/আপোশ
লোকজন একটি শব্দ কতভাবে লেখে, দেখুন। কিন্তু সবগুলো গ্রহণীয় নয়। শব্দটির মূল ফারসি, যা ’আলিফ’, ’বা’ ও ’সিন’ –এই তিন হরফ দিয়ে। ফারসি ’সিন’-এর বাংলা প্রতিবর্ণ ‘স’। তাই ‘আপস ‘ বা আপোস’ লেখাই সংগত। প্রমিত নিয়মে বিদেশাগত শব্দে ‘ষ’ বর্জন করা হয়েছে এবং প্রতিবর্ণীকরণ মান্য করা হলে উচ্চারণ অনুযায়ী ‘শ’ দেখিয়ে দেওয়াও অনাবশ্যক।
লোকটি/এই লোকটি
যদি বলা হয় “এই লোকটি আমার খুব পছন্দের”, তাহলে ‘এই লোকটি’-তে নির্দেশকের দ্বিত্ব প্রকাশ পাবে। ‘এই’ এবং ‘টি’ নির্দেশক এক সাথে ব্যবহার না করে ’লোকটি’ বা ‘এই লোক’ বললে ঠিক হয়। বাক্যটির শুদ্ধ রূপ হলো, “লোকটি আমার খুব পছন্দের” কিংবা “এই লোক আমার খুব পছন্দের”। এভাবে যে-কোনও ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করতে একটি নির্দেশক ব্যবহার করতে হবে।
সখী/সখি
প্রায়শ ‘সখি’ বানান চোখে পড়ে, কিন্তু এটি অশুদ্ধ। স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ হওয়ায় দীর্ঘ ঈ-কার দিয়ে ‘সখী’ লিখতে হবে।
২ Comments
Great post
শিক্ষনীয়। ভালো লাগলো।
অভিনন্দন।
congratulations