জন্মদিন উঁকি দেয়ার আটদিন পরেই মুত্যুমাখা দিন # চিরস্থির ছবি হয়ে গেলেন জীবনশিল্পী সৈয়দ লুৎফুল হক; সালেম সুলেরী
করোনার মুত্যু সিরিজে লেখা নাম সৈয়দ লুৎফুল হক। বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী, লেখক, পরোপকারি। ২৭ জানুয়ারি ২০২১-এ চিরবিদায় নিলেন ৭২ বছরে। জন্ম ১৯৪৬-এর ১৮ জানুয়ারি, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন-এর জন্মমাটিতে। প্রিয়দিন-জন্মদিন পালনের আটদিন পরই তিরোধান। শেষ দিকে নিউকোমিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। স্ত্রীও পূর্ববর্তী বর্ষে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন। রেখে গেলেন টগবগে দুটি পুত্রসন্তান। থাকলো অসংখ্য চিত্র, জলরঙিন ছবি, প্রচ্ছদ, অর্ধডজন বই।
সৈয়দ লুৎফুল হকের সঙ্গে সম্পর্ক ১৯৮১-এর উপান্ত থেকে। যোগসূত্র প্রবাসপ্রতিম সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবিব। দৈনিক বাংলা’র সাহিত্যপাতা দেখতেন। কিশোরসাহিত্য ‘সাত ভাই চম্পা’ দেখতেন শ্রদ্ধেয় আফলাতুন। মহিলা পাতা’র সম্পাদক ছিলেন কথাসাহিত্যিক মাফরুহা চৌধুরী। এই ফিচার পাতা গুলোর অলংকারিক ছিলেন লুৎফুল ভাই। সাহিত্য পাতার সহকারী ছিলেন কবি নাসির আহমেদ। আর লুৎফুল হকের সহকারি অলকেশ ঘোষ। দৈনিক বাংলা’র চারতলায় পৃথককক্ষে বসতেন সবাই। আমরা একগুণ সাহিত্য দিয়ে তিনগুণ আড্ডার আসর জমাতাম। অফিস সহকারী কালাম-এর দোকান চা- বিস্কিট-ধূমপান যোগাতো। লুৎফুল ভাই-এরা শুধু দৈনিক বাংলা নয়। সাপ্তাহিক বিচিত্রা, আনন্দবিচিত্রা’র কাজেও সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদের আপ্যায়ন-বিল মেটানোও ছিলো অন্যতম দায়িত্ব।
১৯৮৩-৮৪ সালে আমি ছড়ার ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’ সম্পাদনা করি। শিরোনাম : বাংলাদেশের ছড়া ও ছড়া লেখক। দেশখ্যাত ৭০ জন ছড়ালেখক তাতে নির্বাচিত হন। প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত জীবনী, আলোকচিত্র, ছড়া স্থান পায়। ছড়ার সঙ্গে ছিলো সব্বোর্চ্চমানের ইলাস্ট্রেশন। সাতজন প্রখ্যাত শিল্পী তা এঁকেছিলেন। সেই সূত্রে ১০টি ছবি আঁকেন লুৎফুল ভাই। অন্য শিল্পীবৃন্দ ছিলেন : কাইয়ূম চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, সৈয়দ ইকবাল ও আফজাল হোসেন। প্রচ্ছদ করেছিলেন প্রখ্যাত পটুয়া কামরুল হাসান। অত্যন্ত দরদ দিয়ে অতিদ্রুত কাজ সেরেছিলেন লুৎফুল ভাই। খুব সামান্য সম্মানী দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু সে বিষয়ে কোন দাবিদাওয়া ছিলো না। বরং আর কোন সহযোগিতা লাগলে দিতে প্রস্তুুত ছিলেন।
সিংহহৃদয় মানুষটির সাথে শেষ দেখা ২৮ আগস্ট, ২০১৮। সেগুনবাগিচাস্থ আমাদের ‘তিনবাংলা’ অফিস তথা মিলনায়তনে। কলকাতার পাঁচ সাইকেল আরোহীর সংসর্ধনা ছিলো। ভ্রমণগদ্য সম্পাদক কবি মাহমুদ হাফিজ সাহারা দিয়েছিলেন। ওনার মাধ্যমে লুৎফুল ভাই আমাদের কার্যালয়ে। সুদীর্ঘকালপর সাক্ষাতে উনি, আমি, আমরা মহাউচ্ছ্বসিত। কতো বড়ো এক মহান ব্যাক্তিত্ব তিনি।
একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা তবে প্রচারবিমুখ। শিল্পকলা, চারুকলার ওপর ছয়টি গ্রন্থের লেখক। ‘পোট্রের্ট স্কেচের সম্রাট’ বলে আখ্যায়িত। জলরঙ-প্রধান চিত্রকলার সাক্ষাৎ জাদুকর। সংবাদপত্রে পঞ্চাশ বছরের কাজের স্মৃতি-ইতিহাস। কথায় বলায় আচরণে চির আধুনিক ব্যক্তিত্ব। সেই সদাসক্রিয় মানুষটি আবার মাটিতে মিশে গেলেন। বিদেহী আত্মা স্বর্গীয় প্রশান্তি পাক। নিকটজনদের জন্যে শোক, সমবেদনা, শুভকামনা।
নিউইয়র্ক, জানুয়ারি ২০২১
salemsuleri.ss@gmail.com
১ Comment
very good job;