স্মৃতিকথা-ইফতার থেকে সেহেরী
[তাহ্ মিনা নিশা]
ইফতারে ভাজি ভুজি আমার পছন্দ নয়। আমি ভেতো বাঙ্গালী।এক কামড় খেজুর খেয়ে অল্প পানি মুখে দিয়েই ভাত খাওয়া শুরু। খাওয়া শেষে নামাজ পড়ে একটু এদিক ওদিক পায়চারি করা বা ফেইসবুক খুলে বসা। হাতের কাছে রাখি সবার খেয়ে বেঁচে যাওয়া বাকী ফ্রুটসগুলো। কাটা ফল তো বেশীক্ষণ থাকে না, আর স্বামী কিম্বা বাচ্চারাও এগুলো আর খাবেনা। তাই আমিই স্বপ্রলুব্ধ হয়ে এগুলো সাবার করার দায়িত্ব নিয়েছি । আমার আবার খাবার নষ্ট করতে কষ্ট হয়!
ভাজি ভুজি যে আমার এক্কেবারে পছন্দ নয় তা নয়, মুচমুচে কড়কড়ে ভাজা লোভনীয় খাবার কার না ভালো লাগে? আমারও লাগে , ভালো লাগে, মানে অনেকই ভালো লাগে। কিন্তু খাইনা, মানে খেতে চাইনা এই আর কি। ইচ্ছে করে নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখি। না রেখে উপায় নেই, তাই রাখি। কারণ আমি অন্য সব মা খালাদের মত মুটিয়ে যেতে চাইনা। আমার কিছু খেলেই গায়ে লেগে যায়! একটু শখ করে আইসক্রিম খাবো, ফুঁচকা, বেগুনী, পেঁয়াজি, আলুর চপ, ছোলাভুনা সাথে থাকবে টক চাটনি—- ইস্ বলতেই জিভে পানি এসে যায়! অথচ আমি খেলেই জানি ওজন কাটা বেড়ে আমাকে জানান দেবে — তোমার মিডিয়াম সাইজের ২৮টা জামা বাতিল হতে চলেছে, সাবধান!!
একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি, যখন নিয়ত করে ফেলি — “তেল চর্বিযুক্ত খাবার খাবো না “ তখন কিন্তু না খেয়ে থাকতে পারি। আবার যখন নিয়তে ভাটা পড়ে কখন টপ করে একটা সিঙ্গারা হয়তো খেলাম, পরক্ষণেই আরেকটা খেতে মন চায়। সামাল দেয়া কষ্ট হয়ে যায় আমার রসনার। জন্মদিনের কেকের এক টুকরা খাবার সময় মনে হয়, — এক পিস ই যখন খাবো তখন বড়টা নয় কেন? একপিস খাওয়ার পরে ভাবি আরেকটা ছোটো পিস খেলে মন্দ হতো না। গড়িমশি করতে করতে আরেকটা পিস মুখে তুলে নিতে নিতে মনে মনে বলি— রোজ রোজ তো আর জন্মদিন হয়না, একদিন একটু বেশী খেলে কি এমন হবে? কাল না হয় এক্সট্রা ব্যায়াম করে নেবো। ব্যাস্ ঐ পর্যন্তই। কাল হয় ঠিকই ব্যায়াম আর হয় না।
দেখেছো কান্ড, ছিলাম ইফতারে — চলে এলাম জন্মদিনে। আমার হয়েছে এই এক জ্বালা, এক কথা বলতে বলতে অন্য কথার মধ্যে কখন যে ঢুকে পড়ি তা খেয়ালই থাকেনা। বয়স হওয়ার লক্ষন মনে হয়।কালে কালে বয়স তো আর কম হলনা! যাক সে কথা, হুম আমি ইফতারে ভাত খাই।বিকেলেই তরকারী রান্না করে ফেলি একবারে সেহেরীর জন্যে।ইফতার করে আর কিছুই করতে ইচ্ছে করেনা। ইফতার ও তারাবীর মাঝখানে খুবই অল্প সময়।একটু বিশ্রাম নিতে নিতেই সময় গলিয়ে যায়। তারাবী শেষ করে উঠে সেহেরীর ভাত চুলায় দিয়ে দেই। আমার কর্তা মসজিদ থেকে এলে তাকে ও আমাদের ছেলেকে রাতের খাবার খাইয়ে তবেই রেহায় পাওয়া। এরই মধ্যে সেহেরীর ভাত রান্না শেষ হয়। আমি ও আমার মেয়ে রাতে আর ভাত টাত খাইনা, একবারে সেহেরীতে খাই।
ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে ঘুমোতে যাই। শোয়া তিনটার দিকে ঘুম ঘুম চোখে আমরা চারজনই যার যার মত উঠে যাই। ভাগ্যভালো আমাকে ডাকতে হয়না। তাই বলে এটা মনে করলে চলবে না যে অতীতে কোনো রোজার সময়ই আমি ওদের সেহেরীর সময় ডাকি নাই। এটা শুধু করোনাকালীন সময়ের কথা বলছি। বাচ্চারা তো কেউ ঘুমায়ই না। সারারাত জেগে সেহেরী খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে তারপর ঘুম দেয়।আমি আবার না ঘুমিয়ে পাড়ি না।সকাল বেলা বুয়া চলে আসে তো তাই আমাকে একটু বিশ্রাম নিতেই হয়। বুয়া সকাল আটটায় এসে কলিং বেল দিলে আমার আরেকটা ভোর শুরু হয়। এইভাবেই চলছে আমার ও আমাদের পরিবারের করোনাকালীন রোজার সময়ের ইফতার থেকে সেহেরীর দিনরাত।
রচনাকাল-২৮/৪/২০২১