অসমাপ্ত গল্প
(নাজনীন আক্তার মুন্নী)
লাবন্য তুমি কেনো মাঝে মাঝে আমার উপর অভিমান করো বলো তো !
আমি তো তোমাকে বলেছি, আমাকে খুব ব্যস্ত থাকতে হয় সারাদিন! আমি একজন চিকিৎসক! মানুষের জীবন মরন নিয়ে আমাকে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়! যার কারনে তোমার কোনো খোঁজ নিতে পারি না আমি।
তারপর এখন চলছে যে পরিস্থিতি !
ইচ্ছে থাকলেও দুজনে পারছিনে দেখা করতে !
তবে দেখে নিও একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে! পৃথিবী আবারও তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে।
তোমাকে দেখার যে আগ্রহ প্রতিটা মুহুর্তে আমি, আমরা অনুভব করছি, তা নিশ্চয়ই একদিন পুরণ হবে।
বিধাতা নিশ্চয়ই এতটা নিষ্ঠুর নয়। নিশ্চয়ই একদিন আমাদের দেখা হবে….
সামনাসামনি হবো আমরা, দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে থাকবো অপলক দৃষ্টিতে…!
কি তাকাবে তো ! নাকি লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে থাকবে! এই ভয়ে, কি হয়! আবার না কি হয়ে যায়!
হাহাহা হাহা !
আমাকে ভয় পাচ্ছো?
বিশ্বাস করো লাবণ্য, আমি সেরকম ছেলেই নই!
তুমি অনুমতি না দিলে আমি তোমার হাতটিও ধরবো না !
আচ্ছা লাবণ্য , এখন তো বর্ষাকাল!
সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে পরের বর্ষায় একটা রঙিন ছাতা নিয়ে তুমি বের হয়ে এসো কোনো এক বিকেলে।
ঝুমঝুম বৃষ্টি নামলে ঐ ছাতার নিচে জড়সড় হয়ে দাঁড়াবো আমরা দুজন কোনো এক রাস্তার ধারে।
জানো লাবন্য এই শহরে আমার আর কেউ নাই! আসলে আছে অনেকেই !
কিন্তু কথা বলার মানুষ নাই !
নাহ! কথা বলারও মানুষ আছে !
নীরবতা বলার মানুষ নাই !!
নীরবতা বলে কেমনে?
জিজ্ঞেস করবে না?
এই ধরো কোন এক বিকাল বেলায় উরাধুরা মন আমার খুব খারাপ হয়ে আছে……
তখন কারো পাশে বসে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার নিঃশব্দে নীরবতা বলতে ইচ্ছা করে !
কোন কথা নেই , কোন জিজ্ঞাসা নেই !
এমন পাশে বসে থাকার মানুষ তো নেই !
এইসব পাগলামি বসে বসে দেখবে কে ?
শহরে অনেক মানুষ! চারকোণা স্ক্রিণ জুড়ে তো মানুষের অভাবই নেই !!
কিন্তু ফুটপাথে পাঁচ টাকার পত্রিকাটা মেলে দিয়ে যার পাশে ঝিম মেরে বসে থাকবো , ওরকম মানুষ যে আমার নেই !
রঙিন ছাতাটা দুম করে বন্ধ করে পাগলের মত বৃষ্টিবিলাস করার মানুষ তো আমার নেই !!
হবে কি তুমি আমার কল্পনায় ভাবা সেই মানুষটি?
তুমি হয়তো বলবে , ওরকম মানুষ তোমার অনেক আছে!
আছে হয়তো !
কিন্তু ওরা তো আমার মানুষ না !
কতজনের সাথে কতকিছু মেলে …
কিন্তু সময় মেলে না, ভাগ্য মেলে না …
অথচ তোমার সাথে আমার সবই মিলে গেলো! এটা কিভাবে সম্ভব!
আমাদের দুজনার চাওয়া, দুজনার কষ্ট, না পাওয়ার বেদনা, পেয়েও যা দেয় শুধু যন্ত্রণা !
এত্ত মিল কেনো বলো তো লাবন্য !
মিলই যদি হলো তাহলে বিধাতা কেনো আমাদের এক করল না !
কেনো আমাদের ভালোবাসার মাঝে এত্ত দায়বদ্ধতার বোঝা চাপিয়ে দিলো !
এটা কি কোনো জীবন !
আচ্ছা বলো তো লাবন্য,
এক জীবনে মানুষের আয়ু কতকালব !
৬০ কিংবা ৭০ ! আজকাল সেটারও তো গ্যারান্টি নেই ! চোখের সামনে সারাক্ষণ যেভাবে আপনজন গুলো কে মরে যেতে দেখছি… আমি তো নিজেকে নিয়ে খুব ভয়ে আছি কখন না আমার আবার ডাক চলে আসে !
বিশ্বাস করো লাবণ্য, আমি এত্ত তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা। আমি আরও অনেকদিন বাঁচতে চাই! আমি বাঁচতে শুধু তোমার জন্যে !
পরিস্থিতি সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে তুমি বরং একটা বিকেল আমাকে ধার দিও !
দেবে কি আমায় !
ফুটপাথে তোমার পাশের খানিকটা জায়গা আমাকে ভাড়া দিও !
আমি শুধু উদাস হয়ে আকাশ দেখবো …
মাঝে মাঝে আড়চোখে তোমাকে দেখবো ……
খুব বেশী হলে তোমার অনুমতি নিয়ে তোমার হাতটি ধরবো !
তোমার সুন্দর আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলা করবো!
ওহ! আরেকটা ইচ্ছে আছে আমার, আমি তোমাকে একটা কিছু দিবো, নিবে তো তুমি !
তেমন কিছু নয়, শুধু একজোড়া পায়েল।
যদি তুমি অনুমতি দাও তাহলে তোমার পা’ দু’খানাতে পায়েল দুটো পড়িয়ে দিতে চাই।
দেবে তো আমায়, আমার ছোট্ট এই ইচ্ছে টা পুরন করতে !
এরপর ক্লান্তি দুর করতে রাস্তার ধারে কোনো চায়ের দোকানে বসে চা পান করবো দুজনে !
তারপর চায়ের কাপের ধোঁয়ার সাথে সাথে সমস্ত আবেগগুলা আকাশে উড়িয়ে দিয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই বাড়ি ফিরবো, চলে যাবো যে যার গন্তব্যে।
এই জীবনে আর কখনো কোনো কিচ্ছুই চাইবো না তোমার কাছে !!
জানি বিধাতা আমাদের নিয়তিতে ভালোবাসা বলে কিছুই রাখেনি ! তবুও আমরা একে অপরকে ভালোবেসে যাবো! সৃষ্টিকর্তা হয়তো তোমার জন্যে আমাকে আর আমার জন্যে তোমাকে তৈরী করেছিলো !
কিন্তু কোনো এক দুর্ঘটনাবশতঃ আমরা একে অপরের হতে পারিনি !
তাতে কি!
সব ভালোবাসা শুধু কাছেই টানে না….
দুরে থেকেও দুজন দুজনকে ভালোবাসা যায়।
যার প্রতিটি নিঃশ্বাসে, বিশ্বাসে তুমি,
যে প্রতিটি মুহুর্তে তোমার অস্তিত্বকে অনুভব করে!
তাকে তুমি কি বলবে ?
ভালোবাসা নয় কি !
না থাকুক সেই ভালোবাসায় পাবার কোনো আনন্দ, না পাওয়ার বেদনা নিয়েই আমরা এভাবেই দুজন দুজনকে অনুভব করে যাবো যতদিন বেঁচে থাকবো !
মনের মধ্যে শুধু একটা কষ্টই রয়ে যাবে, যখন মনে হবে……
“আমি যারে প্রতি মুহুর্তে যত্ন করে খুঁজি, সে এই শহরের অবহেলিত দেয়ালে হারানো বিজ্ঞপ্তি হয়ে সেঁটে আছে অযত্নে …
কিন্তু সেই দেয়াল স্পর্শ করার অধিকার আমার নাই ।
আর যে আমাকে ইতিউতি করে খুঁজে, তার থেকে আমি দাগী আসামীর মত পালিয়ে বেড়াই জীবনের অলিতে গলিতে !
কি অদ্ভুত আমাদের এই জীবন !!
তাই না !
আমরা চাইলেও অনেক কিছুই করতে পারি না! সমাজের নিয়মের বেড়াজালে পড়ে আমরা আমাদের হৃদয়ের চাওয়া গুলোকে প্রতিনিয়ত মাটি খুঁড়ে কবর দিয়ে যাচ্ছি।
কেনো এমন হয় লাবন্য! কেনো !
তবুও বলে যাবো —–
ভালোবাসি তোমায় অনেক…. অনেক।
ভালো থেকো আমার ভালোবাসা ! !
সমাপ্ত
৩ Comments
Congratulations
Thank you
অসাধারণ গল্প দোস্ত । অভিনন্দন