২৭ বার পড়া হয়েছে
স্পষ্ট ভাষণ, ড. মুহাম্মদ ইউনুস বনাম গ্রামীন ব্যাংক ও খেয়ালী মানুষ।
অথই নূরুল আমিন
বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রামীন ব্যাংক, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও খেয়ালী মানুষগুলো কে নিয়ে কিছু লিখব মনে মনে ভাবছি। জানিনা লেখাগুলো সাজানো হলো কিনা। পাঠক মহল কি ভাবেন জানিনা, তবে কি আমার কথা হলো। গ্রামীন ব্যাংকের ইতিহাস যতটুকু জানি শুরুটা হয়েছিল ইউনুস সাহেবের ইচ্ছাশক্তি এবং তাহার নিজস্ব কিছু চিন্তা চেতনা থেকে। এককথায় আজ গ্রামীন ব্যাংক জিরো থেকে হিরো।
সত্যি বলতে ড. ইউনুস এবং তার গ্রামীন ব্যাংক রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। একটি সপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যে কত কষ্ট, কত ত্যাগ, কত মেধা দিতে হয় এ বিষয়টি শুধু তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন। যিনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। এদেশের সিংহভাগ মানুষের খেয়ালীপনা বা হেয়ালীপনা বলেই তাকে কদর করা হয়নি। ড. ইউনুস যা করে দেখালেন যদি এটা বিশ্বের অন্য দেশে করতেন, তাহলে সে দেশের জনগন তাকে দেবতা তুল্য মনে করতেন।
হতভাগা এ দেশে ভাল মানুষের মূল্যায়ন করা হয়না। গুণের কদর করা হয়না। দোষ এবং গুণকে যোগ বিয়োগ করা হয়না। একই দেশের নাগরিক হয়ে একই কালচারে বড় হয়ে কি করে একজন মানুষ একেবারেই অন্যরকম হয়ে যায় বিষয়টির কোন সদুত্তর পাইনা।
দিনের আলোর মত সত্য যে ঘটনা টি সবাই জানে কিন্তু কেই মানে কেউ মানে না। যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কালজয়ী মহাপুরুষের নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হল এ বিষয়টি সবার জানা। অথচ অনেক বড়মাপের কিছু লেখক ও সাংবাদিকদের ও পত্রিকায় লেখতে দেখেছি শুধু শেখ মুজিবুর রহমান, কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত যায় এর উপরে উঠেনা। মূলত: এটার বিষয় হল ‘রাজনীতি’। যারা এর উপরে যায়না তারা আওয়ামীলীগের বিপক্ষ দলের সাথে জড়িত। তারা এতটা বিপক্ষ যে জ্বলন্ত সত্যকে অস্বীকার করে রাজনীতি করে, আর এ ব্যক্তি সমাজের ভাল কাজ করবে এটা আশা করলে বোকার সর্গে বাস করা হবে তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারেনা।
আসলে আমার খুব চিন্তা হয় আমরা কচুরীপনার মত খালে, বিলে, ঝিলে ভেসে বেড়াচ্ছি। স্বাধীনতার ৪০ বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও আমরা কোন সুস্থ পরিকল্পনায় যেতে পারছিনা। কি আমার ভবিষ্যৎ? এ জাতির ভবিষ্যৎ কি? কি রেখে যাচ্ছি আগামী প্রজন্মের জন্য তা সত্যি চিন্তার বিষয়।
স্বৈরাচার এরশাদ পতন আন্দোলনে আওয়ামীলীগ পন্থী নুর হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। অন্যদিকে ডা. মিলন একই আন্দোলনে শহীদ হন। তিনি নাকি বিএনপি মনা ছিলেন। অথচ দুজনের উদ্দেশ্য একই ছিল, যেমন- স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এ উদ্দেশ্য ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণে।
দেখা যায় তারা জীবন দিলেন একই উদ্দেশ্যে অথচ রয়ে গেলেন তারা দুজন দুই পতাকার তলে। পাঠক লেখাটি ব্যাখ্যা দিলে অনেক বড় হয়ে যাবে আমি কি বুঝাতে চেয়েছি তা আপনারা অবশ্যই অনুধাবন করতে পেরেছেন।
১৯৭৫ সালের 15 আগষ্টের পর এদেশে যত নেতা নেত্রি হয়েছে সেসব রাজনৈতিক নেতা নেত্রীগণ জনকল্যাণে কাজ করার জন্য কোন স্বপ্ন দেখেন না,
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেন না। তারা স্বপ্ন দেখের পাঁচ বছর মেয়াদী। তারপরে আর কিছুই জানেন না, কিছুই জানতে পারেন না।
রাজনীতির ইস্যুতে সৃষ্টি হয়েছে এদেশের সংবিধান। তার একটা উদাহরন দেয়া যায় যে, সৌদি আরবে চোরের বিচার হয় হাত কর্তনে, আর এ দেশে চোরের বিচার হয় ক্রমান্বয়ে, দীর্ঘ সময় নিয়ে। অতএব বুঝা যায় যে, সৌদি আরবের সংবিধান প্রণেতাগণ চিন্তা করেছেন হয়তো, আমরা কোনদিন চরি করবনা। তাহলে চোরের বিচার হোক হাত কর্তন দ্বারা, আর আমাদের সংবিধান প্রনেতাগণ চিন্তা করেছেন হয়তো কোন দিন আমাদের চুরি করতে হতেও পারে, তাই চোরের বিচারের আইন প্রণয়ন করেছেন বহু ধারা- উপধারায়।
আজ ড. ইউনুসকে নিয়ে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, বিশ্ব নন্দিত এই মানুষটিকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন, তারা আসলে খেয়ালী মানুষ, যা মন চাইছে তাই বলে বেড়াচ্ছেন। এখানে গোপনে হয়তো কাজ করছে কোন কুচক্রি মহল বা কোন লোভী মহল কলকাঠি নাড়ছেন। মধু খাওয়াই বড় কথা এতে মৌমাছি নিধন হোক বা গাছটি কর্তন করা হোক। এতে তাদের কিছু যায় আসে না।
ড. ইউনুস কে দুর্নীতিবাজ বলা হচ্ছে, এ কথাটি যারা বলছেন তাদেরকে যদি একটি চ্যাং অর্থাৎ একটি টাকি মাছের খামার পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় বা একটি ব্যাঙের খামারে যদি ব্যাঙগুলোকে গুনতে দেয়া হয় তাতেও তারা ফেল করবেন। সময়ের ব্যবধানে বড় আসনে বসে বাঘের বিরুদ্ধে শেয়ালের গর্জন শুনে মনে খুবই কষ্ট পাচ্ছি।
ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন তার কুৎসা রটনা করছেন আপনারা একবারো কি ভেবে দেখেছেন আপনাদের অবস্থান কোথায়। আপনারা যারা তার অশুভ অসুন্দর বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন, তারা কেউ কি পারবেন গ্রামীন ব্যাংকের মত একটি প্রতিষ্ঠান করতে। তারা কেউ কি পারবেন তার মত বিশ্ব নন্দিত হতে? পারবেন না। পারবেন শুধু একজন লোকের ভুলগোলো অশালীন ভাষায় তুলে ধরতে।
এদেশে ড. ইউনুসের মত ডক্টর পদবীর কয়েক হাজার ডক্টর আছেন। তারা এ দেশের জন্য কিছুই করেন নাই। তারা দেশের অনেক উচ্চ আসনে থেকেও এই দেশ ও দশের কল্যাণে কিছুই করতে পারেন নাই। তাদের খোঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবেন? পারবেন না। বর্তমান সরকারের সরকারী কার্য রাষ্ট্র উন্নয়ন, আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রন সহ বহু বিভাগের কয়েক ডজন ডক্টর ডিগ্রিধারী, উপদেষ্টা, মন্ত্রী, আমলা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কাজে ও কর্মসূচীতে ব্যাপক ভুল হচ্ছে।
দেখা যায় এমন ডক্টরধারীদের দপ্তর থেকে সকালে যে কর্মসূচী দেয়া হয়েছে তা বিকেলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাতে কি বুঝা যায় না ওরা শুধু রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জনগনের ট্যাক্সের টাকা বসে বসে খাচ্ছে। এখানে নাম উল্লেখ করা নিষ্প্রেয়োজন।
আপনারা ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যারা তার বিরুদ্ধে বিশোদগার করছেন আমি মনে করি তাদের হিংসাত্মক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
এখানে অনেকেই বলছেন ইউনুস সাহেব চড়া সুদে টাকা বিনিয়োগ করছেন। যারা এ অভিযোগ করছেন নি:সন্দেহে বলা যায় আপনারা দেশ প্রেমিক বটে। তবে আমার প্রশ্ন হলো আপনারা অনেকেই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার তথা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। আপনাদের মধ্য থেকে কেউ কি কম সুদে বা বিনা লাভে টাকা লোন দেন? দেন না। কেউ বলছেন শিক্ষাখাতের বিদেশী অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। তাহলে বুক ফুলিয়ে কালকে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলুন দেখি, আপনাদের মধ্যে কে এমন মহাপুরুষ আছেন যে, আপনার মাধ্যমে শিক্ষাখাতে উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত অর্থের যথাযথ ব্যবস্থাপনা হয়েছে? তার সঠিক জবাব হবে। না।
যাক বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় ভ্রমনে গিয়েছি । তাতে গ্রামীন ব্যাংকের অনেক শাখা আমি দেখেছি। ব্যাংক আঙ্গিনায় সুন্দর সবুজ বনায়ন রয়েছে। শিক্ষিত বেকারের এ দেশে কিছু নারী পুরুষের ভাল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তার একমাত্র সফলতার দাবীদার ড. ইউনুস এবং গ্রামীন ব্যাংক।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের মত একটি শক্তিশালী দল ৯৬ তে ক্ষমতায় এসে কর্মসংস্থান নামে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০০১ এর পর এর কার্যক্রম খুজে পাওয়াই মুশকিল। কমসংস্থানের নামে এই ব্যাংক কাদের পাশে দাড়াচ্ছে তাও প্রশ্নবোধক হয়ে রইল।
এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায়।এদেশে বার বার যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা জনগনকে শুধু প্রতিশ্রুতিই উপহার দিয়েছেন। অথচ নিজেদের আত্মীয় স্বজন পর্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রচুর সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। আবার ক্ষমতা হারিয়ে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্থ হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন।
প্রমান স্বরূপ আমাদের বিগত প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য দুই সন্তানের নাম উল্লেখ না করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। বিগত প্রধানমন্ত্রীর ছেলেদ্বয় এদেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা না রাখতে পারলেও নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে তারা যে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তা প্রিন্ট মিডিয়ার বদৌলতে পাঠক মহলের চক্ষুগোচর হয়েছে। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ছেলেও দেশ ও জাতির কল্যানে কোন ভূমিকা এখনও নিতে পারেন নাই।
যাক, আমি ড. ইউনুস এর ব্যাপারে সাপাই গাচ্ছি না যে তিনি একেবারেই নির্দোষ। মানুষ মাত্রই ভুল করে। দেশ ও জাতির স্বার্থে সে ভুলকে সংশোধন করতে হবে, সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। বর্তমান সরকারের শ্লোগান ডিজিটাল বাংলাদেশ/ভিশন-২০২১, আর এ ব্যাপারে ইউনুস সাহেবের মত মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন লোকরাই যে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারতেন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই ড. ইউনুসের মতো ব্যক্তিদের দুরে ঢেলে না দিয়ে কাছে টেনে আনুন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আলোচনা ও পরামর্শ করুন। মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের মূল্যায়ন করুন। তোষামোদকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। আমি মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরেই আরেকটি গৌরবের নাম ড. ইউনুস। তাই পাঠ্য পুস্তকে তার অবস্থান ও চিন্তা চেতনা নিয়ে গল্প বা প্রবন্ধ অর্ন্তভুক্ত করা হউক। তাকে দেশ গড়ার কাজে উৎসাহিত করা হোক। তারিখঃ ০৮/০৫/২০১১ ইং
লেখাটি তখনকার সময়ে অসংখ্য পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। লেখাটি ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পরামর্শ মূলক। তখন এই লেখার জন্য আমাকে আরো চাপে রাখার চেষ্টা করেছিল।
আজকের লেখাটি দৈনিক ভোরের চেতনার অঙ্গ প্রকাশনা বিজনেস এন্ড স্টাইল থেকে সংগৃহিত।
প্রকাশের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩
অথই নুরুল আমিন
কবি , কলামিষ্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী।
২৪/০৮/২০২৪