নিভৃতচারী গুণী মানুষ মঈন চৌধুরী।
শিরীনা ইয়াসমিন
শুভ জন্মদিন মঈন চৌধুরী।
আপনার আনন্দঘন মুহূর্তের অংশীদার হতে পেরে আমরা আনন্দিত।
যশ খ্যাতি মোহ মুক্ত প্রচার বিমুখ মঈন চৌধুরী আপন আলোয় আলোকিত। অত্যন্ত রুচিশীল মঈন চৌধুরীর সাজানো ঘরটিকে প্রথমে ছোট্টো একটা যাদুঘর বলে ভ্রম হবে। কথা বলতে বলতে চলে গেলাম তার বাগানে। দেশি বিদেশি গাছ সাথে তার নিজ হাতে করা বনসাই নজর কাড়ে। তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিটি সংগ্রহ জীবন্ত, কথা বলে। দেশ বিদেশের অনেক ভাস্কর্য তাঁর সংগ্রহে আছে যা ঐ সব দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরে।
২৫ শে বৈশাখ মঈন চৌধুরী ৭৯ তম জন্মদিন পালন করেছেন। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর মঈন চৌধুরী নিজ হাতে বাগানের পরিচর্যা করতে ভালোবাসেন।
মঈন চৌধুরী ভু-প্রকৌশল উপদেষ্টা, শিক্ষক, কবি, প্রাবন্ধিক ও শিল্পী।
মঈন চৌধুরীর জন্ম ১৩৫৪ সালের ২৫শে বৈশাখ, পার্কস্ট্রিট,কলকতা। মা জোহরা রহমান চৌধুরী, বাবা চৌধুরী শামসুর রহমান। নিবাস : বাংলাদেশ।
ব্যাক্তিগত জীবনে মঈন চৌধুরী ভূ -প্রকৌশল উপদেষ্টা হলেও কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। কবিতা প্রবন্ধ রচনা ছাড়াও ছবি আঁকেন। ভালোবেসে ছবি আঁকেন বলেই ছবিও কথা বলে। গল্প কবিতার চেয়ে প্রবন্ধ রচনায় বেশি মনোযোগী ছিলেন।
বিংশ শতাব্দীর দার্শনিকদের দর্শন বিশ্লেষণ করে লিখেছেন অধিকাংশ প্রবন্ধ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
১. এ কেমন ভালবাসা (১৯৮৮),
২. ইন্দ্রজালে আপেক্ষিক (১৯৮৯),
৩. জীবন শব্দ রেখা (১৯৯০),
৪. কবিতা ও ড্রইং (১৯৯২),
৫. প্লাবন ও অন্তঃবৃক্ষের গান (১৯৯৪),
৬. কমলার ফুল জলপাই চাই (১৯৯৬),
৭. শব্দের পদ্মফুল (২০০৪),
৮. অন্তর সুন্দর স্বপ্ন (২০০৫),
৯. অর্পণ দর্পণে দেখা (২০০৭),
১০. রাইনা পরী রাধা (২০০৭),
১১. A Journey with Mita (২০০৮)
১২. কবিতা সংগ্রহ (২০১৪)
প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ :
১. সৃষ্টির সিড়ি (১৯৯৭),
২. বাঙ্গাল জাতীয়তাবাদ (১৯৯৮),
৩. ফুকোর মানব (১৯৯৯),
৪. হ্বিটগেন্সটাইনের দর্শন (২০০০),
৫. ইহা শব্দ (২০০৪),
৬. অল্প স্বল্প হলুদ গল্প (২০০৬),
৭. শব্দের সম্ভাবনা (২০০৭),
৮. বাংলা বানান সংস্কার (২০০৮),
৯. ভাষা, মনস্তত্ত্ব ও বাঙ্গাল/বাঙালি সংস্কৃতি (২০০৯).
১০. প্রবন্ধ সংগ্রহ (২০১২)।
সম্পাদক : প্রান্ত — সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ক ছোট কাগজ (১৯৮৮–১৯৯৮)।
শিল্প প্রদর্শনী : সালজবুর্গ, অস্ট্রিয়া (১৯৭৪); প্যারিস, ফ্রান্স (১৯৭৫); এথেন্স, গ্রীস (২০১৩)। এ যাবৎ প্রকৃতিপুরুষ-এ মঈন চৌধুরীর ৬ টা লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
‘প্রান্ত’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছুকাল। তাঁর রয়েছে দেশি-বিদেশি সাহিত্য ও দর্শন পাঠের বিশাল জগৎ। রয়েছে বহু দেশ ভ্রমণ ও উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য-নিদর্শন পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষ করবার বিস্তৃত অভিজ্ঞতা। কবিতায় নিমগ্ন থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন; বিনিময়ে বিশেষ সম্মান বা পুরস্কার গ্রহণের দিকটি বরাবরই এড়িয়ে চলেছেন; বিশেষ দলের চক্রে পড়ে নিজের নাম প্রচারের কাজেও জিম্মি হননি কখনও। ছবি এঁকে শুধু ক্ষান্ত হননি; বহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর মূল চিত্রকর্ম এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বহু এন্টিক ও স্কাল্পচারের মূল কপি নিজ বাসায় সংগ্রহ করে রীতিমতো গ্যালারী তৈরি করেছেন। মঈন চৌধুরীর প্রবন্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য নৈর্ব্যক্তিকতা; বিশেষ মতাদর্শের প্রতি একতরফা ঝোঁক নয়; বরং কোনো বিষয়কেই বিনা প্রশ্নে ছেড়ে না-দেয়া। ফুকো, দেরিদা, হাইডেগার, লাঁকা, ফ্রয়েড, পপার, সস্যুর, হিবটগেনেস্টাইনসহ বিশ্বের এমনসব দার্শনিকদের দর্শন নিয়ে মঈন চৌধুরী আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন, যাঁদের দর্শন সম্পর্কে বাংলাদেশে এবং ভারতে তাঁর আগে কেউ বাংলাভাষায় উল্লেখযোগ্যরূপে আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ করেননি। এখনও পর্যন্ত উল্লিখিত দার্শনিকদের দর্শন নিয়ে বাংলাভাষায় বিশেষ বড় কোনো কাজ হয়েছে বলা যাবে না। এটি দর্শন বিষয়ক একটি প্রবন্ধ সংকলন। বইটির প্রবন্ধগুলো প্রায় উপন্যাস পড়বার মতো গড়-গড় করে পড়ে ফেলা যায়। আশা করা যায় সাধারণ পাঠকসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ করে দর্শনের ছাত্র-শিক্ষকদের বেশ কাজে লাগবে বইটি।
তাঁর সাথে বিশেষ দিনের কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে সম্মৃদ্ধ হয়েছি। আমার সাথে ছিলেন প্রতিবিম্ব প্রকাশের কর্ণধার কবি লেখক আবুল খায়ের। আমাদের উচিত যোগ্য মানুষকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়া। প্রচারবিমুখ বরেণ্য ব্যাক্তিদের খুঁজে বের তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য।
শিরীনা ইয়াসমিন
তারিখ, ১০-০৫-২৫ খৃষ্টাব্দ।