সুরকার, বেহালাবাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক: আলাউদ্দিন আলী
শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা
জন্ম ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫২
মৃত্যু ৯ আগস্ট ২০২০
তিনি একই সঙ্গে সুরকার, বেহালাবাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সাতবার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জাবেদ আলী ও মাতার নাম জোহরা খাতুন।[৪] আলাউদ্দিন তার পিতা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সঙ্গীতে শিক্ষা নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
সঙ্গীত জীবনসম্পাদনা
আলাউদ্দিন ১৯৭৫ সালে সঙ্গীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।
বরেণ্য সংগীত ব্যক্তিত্ব আলাউদ্দিন আলী ৯ আগস্ট ২০২০ রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা গেছেন। আলাউদ্দিন আলীর ছেলে শওকত আলী রানা জানান, শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে গতকাল শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রোববার বিকেলে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।
আলাউদ্দিন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তৈরি করেছেন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। গান লিখে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। গুণী এই মানুষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।
দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন
লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দিন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে প্রায় চার দশক ধরে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বহু স্বনামধন্য শিল্পী তাঁর সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।
আলাউদ্দিন আলীর উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো:
একবার যদি কেউ ভালোবাসতো
যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ
ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়
দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়
হয় যদি বদনাম হোক আরো
আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার
সুখে থাকো, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি
সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ
বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না
যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়
সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে
আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা
শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে
কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না
পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে
জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো
আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে
হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ
এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই
তিনি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সালমা সুলতানাকে (মৃত্য ২০১৬) বিয়ে করেন। তার মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন একজন সঙ্গীতশিল্পী।