মাঝবয়সী ইন্সিডেন্ট
সুরমা খন্দকার
রিকশায় জড়াজড়ি করে বসে আছে অবন্তী আর অনির্বাণ। অবন্তীর ডান হাতটা অনির্বাণের বাম হাতের পিষ্টে কত বার চেপে ধরেছে।
অনির্বাণের বয়স চল্লিশের কোঠায়। অবন্তীর বেয়াল্লিশ।
রিকশায় বসে কত গল্পে ওরা দিশেহারা। অবন্তীকে কাছে পেলে অনির্বাণের কোনো দিকে খেয়াল থাকে না।
অবন্তী বললো তুমি আমার জীবনে সেই পুরুষ যার কাছে থেকে ভালোবাসা বোঝবার আগে সম্মান কি জিনিস তা বুঝেছি।
তোমার সাথে দেখা হবার পর ভেবেছিলাম আমি এক ভালো বন্ধু পেলাম যাকে সুখ দুঃখের কথা বলতে পারবো।
যার কাছে আমাকে জমা রাখবো।
চেনা মানুষকে ততটা ভয় যতটা একটা অচেনা মানুষকে বলা যায়।
তোমাকে নিয়ে আর বেশি কিছু ভাবতে চাইনি। বিশ্বাস করো আর বেশি কিছু চাইবার ছিল না।
কিন্তু কখন যে মন কাকে ভালোবেসে ফেলে তা আটকানোর সাধ্য কি কারো আছে?
সব শুনে অনির্বাণ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। অবন্তীকে বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো।
যেন অবন্তীর ভিতর থেকে কেউ বলছে, আমাদের অনুভূতিগুলো সব এক রকম, শুধু উপযুক্ত মানুষটির সান্নিধ্যে তা অনুভুত হয়!
জীবনের কিছু সময় খুব টানাপোড়েন যন্ত্রণা নামে কাউকে ঘিরে। কাউকে নিয়ে একাকীত্বের অবসান হয়। কিছু সময়কে উপেক্ষা করা যায় না। জীবনের কিছু মাঝবয়েসী ইন্সিডেন্ট জীবনকে সুখ সুখ অনুভব করায়।
বিগত কয়েক মাসে যত বার দেখা হয়েছে অবন্তী অনির্বাণের ততবার অনির্বাণ বলেছে তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। প্রতিদিন যেন নতুনভাবে অবন্তীকে দেখতে থাকে সে।
রোদে দাঁড়িয়ে থেকে অবন্তীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে অনির্বাণের ফর্সা মুখ যেন লাল হয়ে গেছে। অবন্তীকে দেখেই সব কষ্ট দুর হয়ে যেন প্রাণ ফিরে পায়।এতো অপেক্ষার পর যখন সে অবন্তীকে পেয়েছে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। দুই হাতে টেনে নিয়ে অবন্তীকে জড়িয়ে ধরলো বুকে। কানের কাছে মুখ গুজে বললো, অনেক ভালোবাসি তোমাকে। ভীষণ ভালোবাসি।
এমন আকস্মিক ঘটনায় অবন্তীর ভিতর বাহির থরথর করে কাঁপতে লাগলো।অনির্বাণের কথাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা বিধাতা তাকে দেননি। অবন্তী নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরলো অনির্বাণকে।
সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো।
অনির্বাণ অবন্তীর হাত ধরে বসে আছে বকুল তলায়।
লজ্জানত হয়ে অবন্তী বললো অনির্বাণকে, তোমার পরিবার সম্পর্কে কিছু জানা হলো না।
আমার অতীত জেনে কি হবে। আমি নারী বিদ্বেষী কিন্তু অবন্তী প্রেমী। আর আমার বর্তমান তুমি, ভবিষ্যৎ কি হবে জানি না। আমি অবন্তীকে দেখে স্ত্রৈণ পুরষ হতে চাই।
আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না অবন্তী।
কোনদিন তুলতে পারবো না।
আজকের আকাশটা স্বচ্ছ নীল। তার মাঝে শরতের পেঁজা তুলোর মতো মেঘেরা পসরা সাজিয়ে বসেছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে অবন্তী রাজনকে নিয়ে ভাবছে।
রাজন তার স্বামী।
ভাবছে স্বামী, সংসার, সন্তানদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে থাকতে তার নিজের চাহিদাগুলো তো হারিয়ে যায়নি। সমাজের কাছে মান বাঁচাতে রাজন তাকে কিভাবে শবদেহ বানিয়ে রেখেছে।
এটা কি অবন্তীর অধিকারহরন করা নয়?
যে বিশ্বাস নিয়ে অবন্তী রাজন কে বিয়ে করেছিল তার মর্যাদা রাজন কতখানি রাখতে পেরেছে।
কোন ভাবেই সুখী করতে পারেনি রাজন অবন্তীকে।
কখনো সুখ দুঃখ নিয়ে তো ভাবেইনি। অন্য কিছু বাদ দিয়ে যদি কখনো ভালোবেসে তার মনের খোঁজ নিত, তবে আর কেউ হয়তো জীবনে আসতো না।
ভাঙন নেমেছে। মাঝখানে এক মৃতপ্রায় নদী।
কোন কূল ভেঙেছে নদীর শুধু সেই জানে!