বাস্তবতা
অনেক দিন বাদে- কাল স্বপ্নে দেখলাম তোমায়,
ছুরির মতো বিঁধে আছো বুকে; নিঃশব্দে, নিঃসংকোচে।
দেখেছি তুমি আমি দু’জনে কেবল ভাসছি সমুদ্রের বুকে,
দু’জন ভেসে বেড়াচ্ছি দিকশূন্যভাবে।
পালতোলা নৌকায় তুমি বসে আছো
জলের উপর আমি নীল আকাশের ছবি আঁকছি।
চারিদিকে শুধু পানি আর পানি,
কোথাও কেউ নেই।
কোলাহল পূর্ণ শহর থেকে আমরা অনেকটা দূরে…
শো-শো শব্দ করে তীব্র বাতাস বইছে,
জলের ধাক্কা লাগছে জলের গায়।
সামনে তুমি বসে তাকিয়ে আছো ঝড়ের মতো দুটি চোখ নিয়ে,
মনে হয় একশো কোটি বছর ঘুম হয়নি তোমার,
সারাটা সময় ধরে স্বপ্নহীন ভাবে জেগে আছ।
তোমার চুলগুলো উড়ছিল অনুমতি ছাড়া,
শাড়ির আঁচলে পাক খাচ্ছে বাতাস,
পর্যাপ্ত আলোর অভাবে কপালের নোলকটা চিকচিক করে উঠতে পারছে না।
আকাশ পুরোটাই নীল,
তুমি হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিচ্ছো
শাড়ীর আঁচল তুলে রাখছো কাঁধে,
হঠাৎ তুমি আমাকে কানে-কানে বলছো-
কতদিন এভাবে শূন্যে এসে ভালোবাসা বিলানো হয় না।
সমুদ্র তীরে বালির বাঁধ
একা তুমি আমি গুনছি জোয়ার ভাটার গান
রৌদ্রের চিৎকারে আমাদের যত কথা সব ডুবে গেছে বুঝি
ভালোবাসা পড়ে আছে চুপচাপ নীরব হয়ে
স্বপ্নের সমুদ্রে সে কি ভয়ংকর ঢেউ!
আওয়াজ করছে না,
আঁছড়ে পড়ছে বাতাস ফেঁড়ে,
বাতাসে ঘোরতর মাদক।
ভেতরে তুমি আমি একা বসে আছি।
পাশাপাশি তুমি আমি কত অজানা গল্প,
কত খুশি, কত না সুখস্মৃতি!
স্বপ্নের রাজত্বে তুমি আমার একার
কেউ নেই সেখানে,
এমনকি ভয়ও নাই হারাবার।
শুধুই দু’জনে স্রেফ বসে।
বিশাল সমুদ্র মাথার উপর খোলা আকাশ পাখি উড়ে যাচ্ছে দুই একটা
ঝড়ো বাতাস বাঁধা মানছে না শাড়ীর আঁচল
বিচ্ছিন্ন দ্বীপের ন্যায় এলোমেলো তোমার চুল!
পাশ দিয়ে তুষার শুভ্রের মতো ঝরে পড়ছে গল্পেরা,
তোমার চোখে আমি সমুদ্র দেখছি,
তোমার ঠোঁটে ঢেউ গুনছি।
হাতে হাত রেখে ভালোবাসি বলার আগেই ভেঙে গেল স্বপ্নটা!
চমকে উঠে নিজেকে খুঁজে পেলাম একলা ঘরের কোণে,
এই তো আমার সাজানো বই,বইয়ের তাক।
এইতো ঘরের দেয়াল,
চেয়ারটাও ঠিক একই জায়গাতেই আছে
শুধু তুমি নেই।
কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হতে হলো আমাকে
সত্যিই তুমি আজ যোজন-যোজন দূরে!
অথচ কাল স্বপ্নে ছিলে কত কাছে..!
ভাবছি, প্রেমে পড়েছি
আমি বোধ হয় তোমার প্রেমে পড়েছি।
ভয়ংকর প্রেমে।
না হলে আমার মনে মগজে সারাক্ষণ কেন তুমি থাকবে?
অনেকে তো ঝড়ের বেগে এলো আবার হাওয়ার বেগে চলে গেলো।
কই তুমি তো এখনো গেলে না?
আমি বোধ হয় সত্যি তোমার প্রেমে পড়েছি।
কী এক বিষন্ন বিকেল কাটিয়ে, সন্ধ্যা পেরিয়ে এখন রাত।
অথচ মনে হচ্ছে তুমি সেই সকাল থেকে আমার পাশে আছো।
বসছো, হাটছো, দাঁড়িয়ে আছো।
কথা বলছো আমার সাথে।
অথচ তুমি নেই।
প্রেমে না পড়লে কেউ কী এত গভীরভাবে কাউকে অনুভব করতে পারে?
আমি বোধ হয় এবার সত্যি প্রেমে পড়েছি।
ভয়ংকর প্রেম।
ডাইরির পাতায় লুকিয়ে রাখার মতো।
মনে ভয়ংকর তোলপাড় করার মতো গোপন প্রেম।
গভীর প্রেম।
আকাশ
আমার মেঘে ঢাকা আকাশ ,
তোমাকে যতবার দেখি ততবার মুগ্ধ হই,….
কি মুগ্ধতা তোমার মাঝখানে বিরাজ করে,…
তোমারি মুগ্ধতা আমাকে তোমার মাঝে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়,…
আর আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার পানে তাকিয়ে থাকি,…
আর বারবার হাজার বার তোমার প্রেমে পড়ে যাই।
তুমার প্রেমে পড়তে আমার কোন কারন লাগেনা,
আকাশের ওই নীল রং,
আর ভেসে যাওয়া মেঘ,
আমাকে তোমার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে।
যখন তুমি মেঘলা,
তখন তোমার মায়ায় পড়েছি আমি,
তখন ঠিক প্রেম নয়,
তোমায় ভালোবেসে ফেলি আমি।
এ ভালবাসা শেষ হওয়ার নয়,
সৃষ্টি যতদিন আছে…
এই ভালোবাসা সারা জীবন রয়ে যাবে তোমার আর আমারি মাঝে।..
আকাশ কি কিরে এতটা মায়া তোমার মাঝে বিস্তার করে?
যে মায়ার টানে আমি বারবার তোমার কাছে ছুটে আসি,
এই মায়া আমাকে সব সময় তোমার কাছে আসতে বাধ্য করে,
কি করে তোমার মাঝে এতটা মায়া বিরাজ করে আমার জানা নেই,
তবে এতটুকু বুঝতে পারি “সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি করা”, এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিমা তুমি।
“আকাশ কি করে এতটা শান্ত তুমি?
তবে,তোমারি এই শান্তিতে আমি নিজের সব যন্ত্রণা ভুলে যাই,
এটাকে হয়তো প্রকৃত ভালোবাসা বলে।..
কারণ যাইহোক
আমি বারবার হাজার বার তোমার প্রেমে পড়তে তোমাকে ভালোবাসতে চাই কারণ,
তুমি আমার মেঘে ঢাকা আকাশ।
তসলিমা হাসান
কানাডা, ১১-০৯-২০২২
৩ Comments
প্রেম ও প্রকৃতি তসলিমা হাসানের কবিতায় অনবদ্য হয়ে উঠে। আকূল করে তোলে সদ্য প্রেমে পড়া অথবা সদ্য প্রেম হারানো, অথবা দীর্ঘ প্রেমের পূর্ণতায় মগ্ন আত্নাকেও। তিনটি কবিতাই চমৎকার, তবে আমার জন্যে আমি বেছে নিবো প্রথমটিকে। কবির সুস্থতা আর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
Congratulations
অসাধারণ।