পৃথিবী আমাকে ডাকছে
কামরুন নাহার (পলিন)
আমার শরীর থেকে যে দিন রক্তের প্লাবন হলো
দেহ জোয়ারে…
পরিবর্তন হলো আমার দেহ,আমার মন!
সেদিন থেকেই আমি নারী হলাম, শিশুর হামাগুড়ি থেকে কিশোরীর আগুন ঝরা পলাশে l
আমাকে বেড়াজালে আটকে দেয়া হলো পুরুষের লোভনীয় লালসার চোখের আড়ালে l
আমি ভোরের তাজা বেলীর মতো হাসতে থাকলাম
খেলতে থাকলাম,আমার শৃঙ্খল পরিমন্ডিত মন্দিরেl
এতো কিছুর পর যৌবন আমাকে বাধঁতে পারেনি
আমি শিহরত হলাম কোন এক পুরুষের আহ্বানে
বেলীর সুবাসে কোন ভোমর মধুতে হলো নিবিড় আলিঙ্গনl
আমি নারী হলাম নতুন কোন স্বাদের সুপ্রভাতেl
যে দিন আমি মা হলাম, নারী জন্মের আরেক ধাপ…
সে দিনটা আমাতে আমি সত্যিকারের নারীত্বকে দেখেছিলামl
আমার রক্তে সঞ্চিত মুষ্টিতে মানবের জন্ম
বিধাতার আমাকে দিয়েছেন এতো শক্তির পিন্ড l
নিজেকে তখন পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষমতার অধিকারী মনে হলো
আবার ও উল্লাসে বলতে ইচ্ছে হলো….
আমি নারী, আমি সব পারি
আমিই করি পৃথিবীর সকল আয়োজন
আমিই দেবী, আমি মা, আমি কারো প্রিয়সী আমি কারো কন্যা,
আমি ঝড় বাতাসের বট বৃক্ষের মাটিতে কামড়ে থাকা রক্ষার মূল শেখড় l
আমি মা হবো, চারদিকে ছুরি, কেচি, সুই সূতার আয়োজন,
ছয় সাত জন ডাক্তার আমাকে ঘিরে …
আমি এত টুকু ভীতু ছিলাম না, শুধু অপেক্ষায়…
পৃথিবীতে এক নব মানবের “মা” ডাকের চিৎকার আগমণের l
আজ..আমার নাড়ি কেটে নারীত্ব প্রমাণ হবে আমি মা হবো
পৃথিবীকে আজ আমি কিছু উপহার দেবো…..!
অচেতন আমি… লাশের মত দেহ আমাকে নিয়ে টানাহেজরা করছে এপারের কিছু মানুষ
তারপরেও আমার ভূমিষ্ঠ শিশুর চিৎকার মা–ডাকে আমাকে সজাগ করেছিল সেদিন!
আমার কেবলই বলতে ইচ্ছে করছিল,
ডাক্তার… আমি বাঁচতে চাই… পৃথিবী আমাকে ডাকছে, অনেক সুন্দর এই ধরণীl
আমারও কিছু কাজ বাকি আছে।