২৫৫ বার পড়া হয়েছে
“নারীর পোশাক নিয়ে দশ দিগন্তে দশ কথা”
পারভীন আকতার
পারভীন আকতার
নারী সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট এক মায়াবী রূপ। মাতৃ জঠর থেকেই মানবজাতির উদ্ভব এবং উত্থান।তাই নারী সবসময় আরাধ্যের স্থানে থাকে সৃষ্টির শুরু থেকেই।মানুষ হয়ে অন্য মানুষের গর্ভে ধারণ করেই কিন্তু মানুষের পৃথিবীতে আগমন। তাই প্রতিটি ধর্মে, নীতি নৈতিকতার গল্পে নারীই সেরা,সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।একজন মা,স্ত্রী কিংবা বোন,মেয়ে খুবই সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কুটিলতা কেউ ঢুকিয়ে না দিলে এভাবেই পৃথিবীতে তাদের মায়ার পরশ বুলিয়ে প্রেম প্রীতি, আবেগ অনুভূতির জায়গাগুলো স্থির,সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে।এটি না হলে পৃথিবীতে সংসার,সমাজ তথা একটি রাষ্ট্র কখনো সুগঠিত থাকার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা ছিল না।সৃষ্টির আদিকাল থেকেই এই ধারা অব্যাহত আছে।এটি অনেকটাই প্রাকৃতিক।নারী শান্তশিষ্ট,প্রকৃতির সবুজ মোলায়েম রঙের মতোই পৃথিবীকে অক্সিজেনের মতোই বাঁচতে সহায়তা করে। তাইতো এখনো অভিজ্ঞতা, অনুশাসন আর ঐতিহ্য লালন পালন করতে নারীদেরই সর্বাগ্রে দেখা যায়।তেরো মাসে বারো পার্বন নারীর হাত দিয়েই আয়োজিত হয়।বলাবাহুল্য এসব কিন্তু কল্প কাহিনী নয়।বাস্তবতা সমৃদ্ধ জীবন হলো এটাই।জীবন রাঙায় নারীত্বের উর্বশী সূচনায়।নারী মানেই নতুনত্ব, নারী মানেই অভিনবত্ব তবে তা কখনো বেখেয়ালিতে নয়।
কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ছেলে মেয়ে নারীর ইচ্ছে মতো পোশাক পরার স্বাধীনতা দেয়ার জন্য পোস্টারিং,স্বীয় ব্লাউজবিহীন,ঘাড়,উরু দেখিয়ে শান্তির অবস্থান নিয়েছিল।তাদের এসব করতে কে বা কারা ইন্ধন দেয় জানা নাই।নিশ্চয়ই তারা একা কয়েকজন মিলে এই কাজটি করেছে তা ভাবা মনে হয় উচিত হবে না।হুট করে কোন কাজ হয় না সহজে।এর জন্য তাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ছিল।যা মিডিয়ায় কাভার করার লোকজনও জোগাড় করে মেসেজটা সর্বত্র দেয়ার চেষ্টা করেছে তারা।আপাতঃদৃষ্টিতে দেখলে তারা কিন্তু সফল।কারণ মিডিয়ার ক্যামরা তাদের লুপে নিয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে।আর এটাই ছিল তাদের মেইন টার্গেট। ব্লাউজবিহীন,হাত কাটা,টি শার্ট,কলার শার্ট নারীকে যা মানিয়েছে!আবার গ্রাম্য নাক ছিটকানো ঢালা শাড়ি পরে শো আপ করতেও দেখা গেল ওদের।ভেবেছিলাম সেদিন মনে হয় পহেলা বৈশাখ ছিল!বাঙালি নারী পুরুষ এই দিনই শতভাগ বাঙালিয়ানা চুরত দেখানোর উপযুক্ত সময় মনে করে যদিও সারাবছর বাংলাভাষা বা বাংলাদেশ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হয়ে ঘুষবিহীন,তদবীরবিহীন বাংলা চালানোর দক্ষতা,সখ্যতা কিংবা হিম্মত তাদের নেই।জ্ঞানী হলে মানুষ নাকি ভদ্র,অমায়িক আর বিনয়ী হয়।মেয়েগুলোর সেই বোধশক্তিও চোখে পড়ল না।অথচ সেরা বিদ্যাপীঠের মহারথী তারা!আবার সাথে তাদের সঙ্গ একদল তরুণ!এটাই আমাকে অবাক করল। মেয়েরা না হয় কম বুঝে,আবেগী হয় কিন্তু ছেলেরাতো বাস্তববাদী।তাদের মা, বোন বা স্ত্রী এমন করে চললে ওরা কি তা মেনে নিত তাদের থেকে জানতে ইচ্ছে করে একটিবার।আমার চিরায়ত ধারণার বদ্ধমূলে আজ ওরা কঠোর আঘাত হানলো।আমি ভাবতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যারা পড়ে তারা সর্বোৎকৃষ্ট মেধাবী।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মেধাবীরা পথেরকাঁটা, সভ্যতাকে অপরিণত বয়স করতে মরিয়া।যেমন বালিকা এখন বধূ টাইপের কিছু।
গ্রাম বাংলায় একসময় কিছু কিছু এলাকায় নারীর পোশাক ছিল কেবল দেশীয় ঘরণায় শাড়ী সাথে ব্লাউজ। তা আবার অনেকেই হাতকাটাও পড়ত।তবে সেটা অবশ্যই ঘরোয়া পরিবেশে।কোন লোকারন্য পরিবেশে কখনোই নয়।বাংলাদেশের নারী অত্যন্ত শালীন,ভদ্র পোশাক আশাকের পথিকৃৎ তা পুরো বিশ্বে সমাদৃত।সেজন্যই আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী এখনো তার দেহের ভাঁজ লুকিয়ে রাখে পোশাকের ভাঁজে।লজ্জা, সহনশীলতা বাড়াতে নারী সমসময় দেশের ঐতিহ্য লালন করে আসছে।এতে পোশাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।নারীকে বিধাতা অপরূপ সৌন্দর্য্যের আধার করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।নারীর কমনীয় রূপ বিপরীত লিঙ্গের নজর কেবল কাড়ে তা নয়;নারী পুরুষ সকলের কাছে সমান মনোযোগ, আকর্ষণ থাকে পবিত্রতা নিয়ে।
এবার আসি আরো একটু গভীর বিশ্লেষণে।একজন নারী বা পুরুষ যখন সঙ্গমরত থাকে তখন কি তারা পোশাক পরে?ধীরে ধীরে সব পোশাক খুলে আদিমতায় চলে যায় তারপর মিলন আর তৃপ্তি আসে। এভাবেই মানুষ নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবন করার প্রচেষ্টায় থাকে।আর এটাই পোশাক বিহীন কার্যক্রম যা একান্তে লোকচক্ষুর আড়ালে মানুষ বিয়ে নামক সামাজিক বৈধতা নিয়ে স্বাধীনভাবে করে থাকে।যা থেকে আমরা পৃথিবীতে এসেছি আর আমাদের সন্তানরাও এসেছে একই নিয়মে। আর এই অন্ধরমহলের কাজটি করার ইচ্ছে যত্রতত্র করতে যদি ইচ্ছেমত পোশাক পরিহিত বা দেহ দেখা যায় এমন পোশাক হয় তাহলে যেকোন মানুষের চোখ পড়লেই যৌন ক্ষুধা সৃষ্টি হবে।এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিষয়।কেউ যদি তা ঠেকাতে পারে সে মহামানব বৈ আর কিছু নয়।নারীর পোশাকের স্বাধীনতা বিষয়ে শোআপ করা ছেলেমেয়েরা কি বলতে চাইল তবে?ওরা কখনোই যৌন হয়রানির শিকার হয়নি বা হবে না এমন গ্যারান্টি কে দিতে পারে?ঐ মেয়েগুলোর এহেন হাস্যকর কাণ্ড পাবলিক দেখে কেবল মজা নিয়েছে আর তাদের প্রকাশিত ভিডিও বারবার টেনে টেনে দেখেছে বীভৎস কামাতুর মনের ঘর থেকে।
কেউ কেউ আবার বলতে শুনলাম অন্তর্বাসের ফিতা দেখানোরও স্বাধীনতা থাকা লাগবে।যদি তা দেখে কারো যৌনতা প্রকাশ পায় তা নাকি সিডিইউজের আওতায় পড়ে। এটা নাকি দর্শনধারীর মানসিক সমস্যা! অদ্ভুত বিষয় এমন যে একজন মানুষের পাশে অন্য মানুষ আপত্তিকরভাবে চলবে আর তখন সে তা স্বাভাবিকভাবে নাকি নিতে হবে!মানুষের মনের ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে আজো কোন মেশিন পৃথিবীতে তৈরি হয়নি আর হবেও না।আত্মার বিষয় সব ধ্যান ধারণার উর্ধ্বে চলে। তাই বদ্ধ উন্মাদের মতো এই পোশাক স্বাধীনতার নামে নোংরামি করা বন্ধ করা উচিত। এতে কিশোর কিশোরী আর তরুণ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।কারণ এই বয়সটা এমন বড়রা যা করে তা তারা আইডল ভাবতে শুরু করে এবং সর্বনাশের পথে এগিয়ে যায়।এই স্বল্প বসনা পোশাকদারী হতে চাওয়া নরনারীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিভাবে মানুষ করে তাও দেখার বিষয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর নরম কোমল শরীর বারবার ঢেকে রাখতে তাগিদ দেয়া হয়েছে।কারণ নারীর শরীর অতি পবিত্র এবং জাতি জন্ম দেয়া পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান অর্জনকারী ফ্যাক্টরী যা স্বয়ং বিধাতায় দেখাশোনা করেন এবং তাঁর ঈশারায় সন্তান উৎপাদন হয়।মানুষের কি সাধ্য একটি সন্তান ফয়দা করার?আর সেজন্যই নারীদের প্রয়োজন ব্যতিরেখে ঘরের বাইরে যাওয়াও নিষেধ করা হয়েছে।যিনি আমাদের গড়েছেন তিনিতো মহাজ্ঞানী, পরাক্রমশালী। তিনি বুঝেশুনেই সব আইন কানুন বেঁধে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তা মানবজাতির কল্যাণ বয়ে আনে এবং তা বারবার প্রমাণিত।
নারীর পোশাক নিয়ে কথা বলা খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু।নারীদের যে গড়নে বিধাতা সৃষ্টি করেছেন তার জন্য শালীন পোশাক অপরিহার্য।বাংলাদেশে জন্মে, বসে, থেকে, খেয়ে পরে, আমেরিকা তথা ইউরোপীয় সংস্কৃতি চালচলন কাজকর্ম করে যাওয়ার চিন্তা অবাস্তব,নিকৃষ্টতর পন্থা।এতে যারা সাঁই দেয় তারাও সমান অপরাধী। এ যেন কলিযুগে এসে পড়লাম!এহেন উদ্ভট অবিবেচক, অবুঝ কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ দেখে কাঁদব না হাসব বুঝতে পারছি না। এদের দেখে জাতি কি শিখবে তার ভবিষ্যত জানা নাই।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। যুগযুগ ধরে আমাদের পূবপুরুষগণ যে ঐতিহ্য লালন করে এসেছেন সেই মতে আমরা চলবো।এ আমাদের শিকড়ের টান, সম্মান আর আত্মমর্যাদা ঐতিহ্যের ধারক,বাহক। পরিবারের সবাই একসাথে থাকতে গেলে নূন্যতম নিজেকে শালীন আব্রুর ভিতরে রাখা যে যার নৈতিক দায়িত্ব। আর বাইরের পরিবেশে তা আরো বেশি মানতে হবে। কারণ মানুষের ভিতর সু আর কু মনো প্রবৃত্তি বিরাজমান।যেকোন সময় অঘটন ঘটিয়ে ফেলে,অন্যের ক্ষতি করতে পশুর মতো হামলে পড়ে মানুষ।তাই সময় থাকতে সাধু সাবধান।আশা করবো নারীর পোশাক শালীন ও মর্যাদাপূর্ণ করতে আমাদের সম্মানিত সুধীজন,প্রশাসন সুদৃষ্টি দেবেন এবং অন্তঃসারশূন্য কিছু অবিবেচক চাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।
পারভীন আকতার
শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক।
চট্টগ্রাম।
২ Comments
congratulations
চমৎকার উপস্থাপন