চোর।
শিরীন আকতার বানী
(২১/১১/২১)
ঘুটঘুটে অন্ধকার, চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। একটু পর চোখ সয়ে এলো,কিন্তু আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে, কোন কিছুরই আকার ঠিকঠাক বোঝা যায় না। হাতড়ে হাতড়ে যা পাই ঝোলায় পুরি। গয়নাগাটি কিছু পেলে ক’দিন আরাম করে থাকা যেতো, কপাল মন্দ। সে-সব কিছু আজকাল কেউ ঘরে রাখে না। সব নিয়ে রাখে ব্যাংকের লকার না কি যেন বলে তার ভিতর। শাড়ি জামা পাওয়া গেলেও বেচতে বড়োই কষ্ট। দামে মেলে না।চোরাই মাল, লোকে দাম বলে জলের দামে। পোষায় না একেবারে। ঐ-যে চকচকে একটা কলস না জগ কি যেন দেখা যাচ্ছে। কাসা পিতল কিছু একটা হবে। নিয়ে নি। বাহ্ সুন্দর নকসা কাটা।
পুরনো আমলের জিনিস মনে হচ্ছে। আলোতে ঠিকই চিনতাম।বনেদি চুরির কারবার আমাদের। বাপ,দাদা কতো কৌশল যে শিখিয়েছে,সব কায়দা কাজে লাগানো যায় না এখন।আধুনিক কলকব্জা দিয়ে কতো যে সাবধানে থাকে লোকজন। একবার আস্ত একটা সিন্দুক কাঁধে করে নিয়ে গেলাম সরকার বাড়ির কাচারিঘর থেকে। খুব পরিশ্রম হলো সেবার। চকচকা সিন্দুক ভেঙে কিছুই পাওয়া গেলো না।।কেবল কিনেছিলো হয়তো তারা, ব্যবহার শুরু করেনি। আমি কি তা জানতাম।বয়ে নেয়াটাই সার।।লাভ হলো ভাঙা লোহার দামে। খাটের নিচে কিছুই নেই। ফকফকা পরিষ্কার। পরিবারের গিন্নির মনে হয় পরিষ্কারের বাতিক আছে। এদের ঘরের লাইটগুলো খুব সুন্দর। কিন্তু জ্বালিয়ে দেখতে পারলাম না।আজ বাড়ীতে কেউ নেই। খবর পেয়েই এসেছি। কিন্তু আলো জ্বললে লোকজন যদি ধরে ফেলে। তাহলে তো জান শেষ। বাবা বলেছিলেন, বেশি লোভ করবিনে!
টুকটাক মালামাল ভালোই পেয়েছি, এবার ভাগি।ওঘরে একটা পড়ার টেবিল আর বই আছে মনে হচ্ছে। দেখি তো! বই তো বেচে দেয়া যাবে। একটা সবুজ মখমলে মোড়া বই। আঁধারে কালো কিন্তু চকচকে দেখাচ্ছে। নিলাম ঝোলায় পুরে।এবার চলে যাই, সকাল হলো বলে। বাড়ী এসে সব মালামাল ঢেলে বাছাই করতে বসলাম।জগের দাম কম করেও দুই হাজার হবে। কাপড় চোপড়ে যা পাই তাই লাভ। টুকরো টাকরা জিনিসপত্র তাও মনে হচ্ছে হাজার তিনেক পাবো।একরাতের জন্য এই ঢের। ওহ্! বইটা কই। এই তো। আসলেই তো এটা ভীষণ সুন্দর। মোটা আর নতুন চকচক করছে। খুলে দেখি একটা চিঠি। বাদামী খামের চিঠি। আমি তো পড়তেও পারি। দেখি তো পড়ে কি লিখেছে। ওমা,এতো সরকারি সিল মারা দেখছি। কিসের চিঠি এটা। চাকরির চিঠি!
আমি চোর, চুরি করি ধনদৌলত।এ দেখি মানুষের ভবিষ্যৎ চুরি করে আনলাম। এটা কোন কাজেই আসবে না আমার। এখন উপায় কি! কিভাবে ফেরত দেবো? কি কৈফিয়ত দেবো! এখন কি তারা বাড়ী ফিরে এসেছে। দেখিগে যাই। নাতো! এখনও বাড়ীতে আলো নেই। তারমানে কেউ আসেনি ফিরে। এই সুযোগে দরজার তলা দিয়ে চিঠিটা ঢুকিয়ে দিয়ে চলে এলাম।আমাকে কেউ দেখতে পায়নি।এতো সকালে কেউ ওঠে না। দু’একজন হাটতে বেরিয়েছে। তারাও ভাবছেন আমিও হাটতে বেরিয়েছি। সুবিধাই হলো। দাদা ছোট্টবেলায় বলেছিলেন “চোরদের মায়াদয়া থাকতে নেই ” আমারও নেই। তবুও আজ এটুকু না করলেই যে নয়।
১ Comment
congratulations.