01) আমি এখানে অচল
তোমাদের এই সভ্য সমাজে আমি সত্যি অচল,
এই আধুনিকতার ভিড়ে আমি আজো বড্ডো সেকালের,
আমার হাসি আনন্দ গান ঠিক তোমাদের মতোই,
শুধু মৃত্যুর মিছিলে স্বার্থপরতার অর্ণবে অসীম নিষ্ঠুরতায়
ভাসতে পারিনি ঠিক তোমাদের মতো।
দিগন্ত চৌচির করা আর্তনাদ এখনো আমায় কাঁদায়,
পথের ধারে বস্ত্রহীন শিশুর কান্না, অনাহারী মায়ের অশ্রু,
এসিডে দগ্ধ মেয়েটি নিরুপায় জীবন পথে দাঁড়িয়ে
শুধুই শূন্য হাতে নিরাশায়, ক্ষিপ্ত মনে,
মূল্যহীন প্রসাধনী মেখে, অতৃপ্তিকর অভিনয়ে হেসে
রাতের আঁধারে যৌবনের আলো নিভিয়ে নিবিড় আনন্দে
শেষ সম্বলটুকু বিক্রিকরে বাধ্যতার কারণে।
রাতের রঙিন অচেনা আলো আঁধারে লজ্জাহীন নৃত্য,
আধুনিকতার নামে বিলাসিতার আকাশ ছোঁয়া বেহায়াপনা,
অবৈধ বন্ধনে বাঁধা কুমারী মায়ের শিশুটি পড়ে থাকে
আঁধার গলির কোনো ময়লার স্তুপের আড়ালে
কুকুর ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় তার নাড়িভুঁড়ি তার ক্ষুধা নিবারণে।
ধর্মের নামে অপকর্মের আড়ালে,শিব পাথরের বুকে প্রবাহিত
মন মন দুধ বেয়ে যায় পাশের নোংরা নর্দমাতে,
পীরের আস্তানাতে, মাজারের খাদিমদের শৌখিনতায়
বন্টিত হয় ডেকচি ভরা খাবার, পাশেই অগণিত যুগের অনাহারী,
বসে থাকে অধীর অপেক্ষায় নিজের প্রাপ্যের আশায়।
আমি কি করে করি উল্লাস দোল যাত্রায়, বৈশাখী মিছিলে
কি করে খাই পান্তা ইলিশ হাজার টাকা দামে
যেখানে আজো অনাহারে থাকে মানুষ দিন মাস বছর নির্দ্বিধায়
সত্যি আমি এখনো যে এতো আধুনিক হতে পারিনি
তাই আমি তোমাদের এই সভ্য সমাজে সত্যি অচল।
02) জ্যোৎস্না ভেজা চাঁদ
আজ রাতে চাঁদ কে বললাম তুমি নেমে এসো ধরণীতে,
ঝরে পড়ুক চূর্ণ চূর্ণ জ্যোৎস্না আমার প্রিয়ার সিঁথিতে,
আলোকিত হয়ে উঠুক মাধবী মাখা প্রহরগুলো এভাবেই,
থাক আনন্দের ছাপ জ্যোৎস্না ভেজা মুখের অপলক চাহনিতে।
আর আমি – আমাকে নিয়ে কোনই ব্যস্ততা নেই পৃথিবীর,
আমি আছি সেই অজস্র যুগের আবাদহীন ভূমির মতোই,
ইচ্ছের ভেলায় চেপে যাত্রা পথে হারাই জীবন ছায়ায়,
উদাসীন কার্ণিশ ধরে অবাক নয়নে বসে থাকি ভাবনায়।
জীবনের শেষ প্রহরে যদি আমায় দেখতে ইচ্ছে করে,
পশ্চিমের অস্তমিত সূর্য্যের লালিমায় আমায় পাবে,
কখনো হাসবো আমি শরতের শুভ্র মেঘের ভাঁজে ভাঁজে
কখনো প্রজাপতির বর্ণিল ডানায় কখনো মেঘের ভেলায়।
জ্যোৎস্না রাতের কিরণে হারিয়ে যাওয়া নদীর ঢেউয়ে,
অথবা প্রেমময়ী মুহুর্তে তোমার হৃদয়ের শূন্য স্থানে,
অনাবিল মায়ার বন্ধনে ভাষাহীন আবেগের আবেদনে,
বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে খুঁজে নিও আমায় প্রেমের প্রবল বর্ষণে।
হে চাঁদ- তুমি আমায় নিয়ে ভেবো না আমি আছি দুর্বার,
তোমার মধু ঝরা চন্দ্রিমায় আবার দেখা হবে দু’জনার,
যাপিত জীবনের সুখ লুফে নেবো মুঠো ভরে পুনরায়,
তোমার জ্যোৎস্নায় প্রিয়ার ভেজা আঁচলের আঙিনায়।