অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৬ জন উপদেষ্টার তালিকায় স্থান পেয়েছেন তারই প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নূর জাহান বেগম।
নূরজাহান বেগম নিজ গ্রাম চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে প্রথম গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করেন। নূর জাহান বেগম ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যে দায়িত্ব তিনি পেয়েছিলেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের কাছ থেকে। তিনি এখন গ্রামীণ পরিবারের একটি অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শিক্ষার্থী ছিলেন নূর জাহান। গ্রামীণ ব্যাংকের তৃণমূল গোষ্ঠীতে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্যাংকের শুরুর দিকে এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিনে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম ‘প্রিন্সিপাল’ ছিলেন।
নূর জাহান বেগম অনেক দেশে মাইক্রো-ক্রেডিট প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক এবং মূল্যায়নকারী হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মেলন এবং সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, ইউএসএসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বোর্ডেও দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ২০০৮ সালে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন কর্তৃক সুসান এম. ডেভিস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি ওয়ার্ল্ড সামিট মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ এবং ভিশন অ্যাওয়ার্ড ২০০৯-এ ভূষিত হন। তিনি ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ফরচুন মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন সামিটে অংশগ্রহণ করেন এবং স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি নিযুক্ত হন ২০০৭ সালে।
বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা মামলার অন্যতম আসামিও ছিলেন এই নারী উদ্যোক্তা। সে বিষয়ে ড. ইউনূস বলেছিন, ‘চার জন আসামির একজন আমি। আরও তিন জন আসামির কথা কেউ বলে না। একজন হলেন নূর জাহান বেগম। আমার সামনেই আছে। তাকে একটু দেখেন সবাই। এই নূর জাহান বেগম জোবরা গ্রামে এই যে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হলো ওনার হাত দিয়ে। উনি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ছিলেন, আমি শিক্ষক ছিলাম। উনি বাংলা বিভাগের। ভলান্টিয়ার হিসেবে তিনি এসেছিলেন। তার হাত দিয়ে জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা। এই যে পুরো কাহিনী শুরু হলো। উনি এবং তার স্বামী। তার স্বামী ছিলেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। সেই থেকে যত ঘটনা ঘটেছে গ্রামীণ ব্যাংকে তার গোড়া থেকে উনি ছিলেন। যেমন গ্রামীণ ব্যাংকের ১৬ সিদ্ধান্ত। এটা প্রায় একটা চার্টার। গ্রামীণ ব্যাংক বুঝতে হলে ওখানে যেতে হবে। অঙ্গীকার হচ্ছে যে পরিবর্তন করার জন্য। যৌতুক প্রথার বিরোধীতা করা- এর নেতৃত্বে সেটা হয়েছে সারা বাংলাদেশে। কিন্তু কেউ এটা স্মরণ করে না। আজকে তাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে। দুঃখ এটা আমাদের।’