পুরনো হিসেব
তাসমিনা খান
টলটল ছলছল দুটি আঁখি আজ সিক্ত
ঝরে পড়া পাতার হেলায় প্রকৃতি রিক্ত।
কাজলের কালি মাখা, দুচোখের নিচে,
গভীর গর্ত আর মেকী হাসির মাঝে,
কি যে নেই আজ আর বোঝাতে কি পারি?
সবই আছে চারিপাশে, তবু ফাঁকা ভারি।
দুনিয়া এক বিশাল রঙের মঞ্চে, এতে শুধুই হোলিখেলা,
যে যত বড় অভিনেতা, আখেরে তারই ভারী ঝোলা।
সরলতার প্রতিমারা আজ আর ভালবাসা পায় না
দিয়ে দিয়ে ক্ষয়ে যায়, মিছেই যেন সকল বায়না।
বুক ভরা লোম হলেও আজ সেথা নেই দয়া, মায়া, ভালবাসা
শৌর্য-বীর্য সবই আছে তোমার মানব, শুধু নেই মানবতা।
তোমার যেই হাসি একদিন বাঁচিয়ে রেখেছে তোমার প্রিয়ায়
আজ সে হাসি সে মানে হায়েনার হাসি, কি লাভ আর মায়ায়?
যে সুবাসে নিশিরাতে সে ছুটেছে তোমার ডাকে,
আজ নর্দমার গন্ধও মধুর লাগে ঘৃণ্য সে সুবাসে।
তুমি চিননি ভালবাসা ওহে, করোনি তারে কোনই যত্ন,
তিনকাল গেলে পরে, একদিন ঠিকই খুঁজবে আবার সে রত্ন।
লুকোচুরি একপেশে দৃষ্টি আর জোছনার লুকোচুরি খেলায়,
মায়াবী মনকাড়া চাহনি আর অশরীরী অজানা আবছায়ায়
বুনোহাঁস এক ঝাঁক নিথর-নিশ্চুপ জলে দেয় দোলা,
দখিনা বাতাস যেমন করে ক’রে আঁচলেতে খেলা।
তুমি চুপ, আমি চুপ, এক ভেঙ্গে হই দুই,
অবেলায় আকাশ পানে একাই চেয়ে রই।
লেকের ঢেউয়ের তালেতালে নাচে রাজহংস,
আকাশে মেঘের কোলে দোলে চাঁদভাঙ্গা অংশ।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে এক গাড়ি, দুই সিটে,
ডানহাতে বামহাত কোথা হারালো সে ছন্দ?
দুটি ঠোঁট কাঁপা কাঁপা, অধরেতে চুমু আঁকা,
প্রেমের জোয়ারে বয়েছে কত বায়ু মৃদুমন্দ।
বাকিটুকু বাকি থাক, সময়টুক বয়ে যাক,
হিসেবের খোলাখাতা থাকুকই নাহয় পড়ে,
একদিন চলে যাব, তবু স্মৃতি হয়ে রব,
ফুরোবে কি আদৌ সব যাইওবা যদি মরে?