১) নিসর্গপুর
ধূসর সময়ের দেয়াল হাতরে আমি খুঁজি আমার শৈশব,
আমি খুঁজি দুপুরের আকাশ,বিকেলের ছায়া,সন্ধ্যার মেঘ খুঁজি
ভীষণ করে আমার বাবার পদচ্ছাপ মায়ের আঁচল খুঁজি
পুরোনোকে আজকের অচিন শহরে সবকিছুর বহরে।
দু’চোখের লোনা অশ্রুর অস্ফুট আর্তনাদের ক্রন্দন বিলাপ
আমার অতন্দ্র বূভূক্ষ হৃদয়ের সমস্ত উঠোন জুড়ে ঝরে
প্রবাহিত ধমনির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভালোবাসার সানাই বাজে
অন্তরের দু’পাট ঠেলে স্মৃতিরা ঝড় তোলে দুঃখ-ক্রোধে
বিষাদ গীতির নীরব রোদন
কেউ দেখেনা কেউ বুঝে না।
ভাবতে ভাবতে আমি হারিয়ে যাই নির্ঝরের প্রস্রবনে
সেখানে আনমনে খুঁজি অতীত থেকে অতীতের রূপ
কল্পনায় দেখি সুদূর পরাহত কোন এক প্রতিমার মুখ
সুনীল আকাশে দোলে অচেনা নারীর শাড়ীর আঁচল।
সেখানে শিকড়ের সাথে মিশে আছে আমার অস্তিত্ব
আমি সোনালী অতীত জুড়ে মোহগ্রস্থের মতো হাঁটি
জল কন্যার দেশে ছায়া ঘেরা পথে
নিসর্গ সুনামগঞ্জের নিসর্গ পুরিতে
আমার তৃষিত মন কুসুম হয়ে ফোঁটে
বিমূর্তক্ষণের ভালোবাসার অশ্রুতে।
নিসর্গপুরে গান আছে,কবিতা আছে, আছে গল্প কথার ঝুলি
নাটক আছে,রূপকথা আছে,আরো আছে রঙিন প্রজাপতি
যেখানে রাতে চলে জোনাকিদের মিষ্টিমুখর আলোর খেলা
ধবল জ্যোৎস্নায় শহর জুড়ে রাত ভর চলে পূর্ণ আরাধনা
এখানে সন্ধ্যা তলিয়ে যায় রাতের আঁধারে সুরমার তীরে
গভীর রাতে ভেসে আসে উদাসী গান এক তারার সুরে।
ধূসর সময়ের দেয়াল হাতরে কেবল পুরোনোকে খুঁজি
রঙিন সময়গুলো চোখে ধুলোয় ধূসরিত হয়ে ধরা দেয়
কালের সেই ধূলোয় কেউ হাসে আবার কেউবা কাঁদে!
কিন্তু দাগ থেকে যায় ঐক্যের দাগ,বন্ধুত্বের স্মৃতির দাগ
আজ ভালবাসাময় দাগে দাগে টইটুম্বুর প্রিয় চারণ ভূমি
সেই মহিমান্বিত অদেখা দাগ গুলো অস্তিত্ব প্রকাশ করছে
আর মহীরুহ হয়ে মেলে ধরছে কতিপয়ের বন্ধনের দাগ,
এ দাগ থেকে যাবে চিরদিনের কালান্তরে,আমাদের অন্তরে।
২) বাঁচার অন্বেষা
নিশব্দ ভালোবাসা খুঁজে ফিরে মানুষ আন্দোলিত চারপাশ
গর্জন করে গাড়ি বয়ে চলে কালো রাজ পথে দুর্নিবার
পায়ে হেটে দ্রুত চলে যারা তারাও দুর্বার সামনে এগোবার
অতর্কিত উল্কার বেগে দুর্ভাগ্যের ছায়া পড়ে লোকালয়ে।
দূরের বলাকারা বহু দূরে ছুটে যায় নিবিড় অজানায়
সন্ধ্যায় পাখিরা আনায়াসে পথ হারায় অসীম সীমায়
নদী হারায় নাব্যতা,অসময়ে জাগে বালুচর বক্ষে জাগে বেদন
কাল সিন্ধু করতলে নীড়হারা মানুষের বিলাপ চলে রাত ভর।
ভাগ্যাহত মানুষের ক্ষুধার জালায় সংগ্রাম চলে অবিরত
সংগ্রাম চলে জীব-জন্তু পশু পাখি মানুষে নিরন্তর
কখনো রাত্রির বুক চিরে ভেসে আসে চিরায়ত আহাজারি
সমানে ভেসে আসছে ভুভুক্ষ আর্তনাদ শ্যামল বাতায়নে।
কান্নার জল বাষ্প হয় হতাশার ঘূর্ণিপাকে দুঃখ ও ক্ষোভে
ভেজা মাটিতে পদচিহ্ন রেখে খাদ্যের অন্বেষণ করে মনিরা
মিল্কির চোখ অন্ধ, থালা নিয়ে ঘুরে শহরের অলিগলি পথে;
পথে পথে ঘুরে ক্ষিদার জ্বালায় বাঁচার কঠিন তাগিদে।
ভাগ্যের দোহাই দিয়েনিয়তিকে নিয়ে কথা বলি
সুখকে খুঁজি হন্যে হয়ে সভ্যতার মুখোশ পড়ে
জীবনকে নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম চলে অনবরত
নির্মম বাস্তবে আমরা ক’জন চোখ তুলে তাকাই!
কঠিন স্বপ্নচেরা গল্প শুনে চকিতে চমকে উঠি
হৃদয়ের কষ্ট আর চোখের জল কেউ দেখে না
মনের কোনে পড়ে থাকে জমানো কিছু ব্যথা
নোনা জলেই তাদের সব গ্লানি-মালিন্য কেটে যায়।
নশ্বর পৃথিবীতে ক্ষুধার তীব্রতা নিয়ে যারা জন্ম নিয়েছে
একমুঠো অন্ন আর একবেলা খাবার প্রত্যাশায় দিন যায়
বিষাদ হৃদয় ডুকরে ডুকরে কাঁদে,করতে পারেনা প্রকাশ
তাদের জীবন ভাগ্য আজন্ম জ্বলছে জ্বলবে পেটের ক্ষিধায়।
Chunnu/USA
১ Comment
সুন্দর কবিতা।