করোনাকালের দিনগুলি
–কবির কাঞ্চন
রমজান মাসের শেষের দিকে, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝেও শপিংমলগুলোতে চলছে লোকজনের উপচে পড়া ভীড়। পছন্দমতো ঈদের কেনাকাটা করে তুহিনও বাবামায়ের সাথে বাসায় ফিরেছে।
সে একদৌড়ে রাতুলদের বাসায় চলে আসে। রাতুলকে কাঁদতে দেখে তুহিন আস্তে করে বলল,
: আন্টি, ও কাঁদছে কেন?
: না বাবা, এমনিতেই। ওকে নিয়ে যাও।
তুহিন রাতুলের হাত ধরে টেনে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। এরপর রাতুলকে উদ্দেশ্য করে বলল
: এই রাতুল, এভাবে কাঁদছিলি কেন? আন্টি কী তোকে মেরেছেন?
রাতুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
: না, ক’দিন পরই ঈদ। এখনও আমার ঈদের কেনাকাটা হয়নি। এতোদিন বলেছেন কিনবেন। আজ আম্মু সরাসরি না করে দিয়েছেন। এ মাসে আব্বু নাকি অর্ধেক বেতন পেয়েছেন। তাই এবারের ঈদের বাজার হবে না। এমনকি আমাদের নাকি বাড়িও যাওয়া হবে না।
এই কথা বলে রাতুল আবার কেঁদে ওঠে। তুহিন রাতুলকে জড়িয়ে ধরে বলল,
: ওসব চিন্তা বাদ দে। এবার আমরাও বাড়ি যাচ্ছি না। ভালোই হলো, আমরা একসাথে ঈদ করব।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আটটা। তুহিন বাবামায়ের সাথে ডিনার করছে। হঠাৎ বাবাকে ইতস্তত করে বলল,
: বাবা, তোমার কাছে আমি একটা জিনিস চাইব। আমায় দেবে?
তুহিনের মুখ থেকে এমন কথা শুনে সুমন সাহেব ও সুমনা বেগম হতবাক হলেন। সুমন সাহেব আগ্রহের গলায় বললেন,
: কী এমন জিনিস যা তোমাকে এভাবে চাইতে হলো!
: আগে বল, আমায় ফিরিয়ে দেবে না!
: আচ্ছা কথা দিলাম, তুমি যা চাইবে আমি তা-ই দেব। এখন বল, তোমার কী চায়?
: বাবা, আমার বন্ধু রাতুল আজ খুব কেঁদেছে। করোনায় তোমার মতো ওর বাবার অফিসও বন্ধ রয়েছে। ওর বাবার অফিস থেকে নাকি পুরো বেতন দেয়নি। সেকারণে তাদের এবারের ঈদের কেনাকাটাও হয়নি। আমি চাই, আমার মতো করে ওকেও তুমি ঈদের বাজার করে দেবে। কথা দিচ্ছি বাবা, তোমার কাছ থেকে এবারের ঈদ বকশিস আমি নেব না।
ছেলের এমন কথায় সুমন সাহেব আর্দ্র গলায় বললেন,
: ধন্যবাদ, তুহিন। তোমায় নিয়ে আজ আমার গর্ব হচ্ছে। আমি কথা দিচ্ছি, কালই তোমায় নিয়ে বের হব। রাতুলের জন্য তোমার পছন্দমতো ঈদের বাজার করব। তুহিন চেয়ার থেকে উঠে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়।
১২৪ বার পড়া হয়েছে
১ Comment
মহান আল্লাহ সুস্থতার সাথে সবাইকে নেক হায়াত দান করুন, এবং দারিদ্রতা থেকে হেফাজত করুন